• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রমজান দান-সদকার সর্বোত্তম সময়


মাহমুদুল হাসান মে ৬, ২০২১, ১২:৫৮ পিএম
রমজান দান-সদকার সর্বোত্তম সময়

ঢাকা : চলছে রমজানের শেষ দশক। জাগতিক লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, প্রবৃত্তির অনুসরণ ইত্যাদি মানবিক দুর্বলতা থেকে দূরে থেকে আত্মসংশোধনের মাধ্যমে খোদায়ী গুণাবলি অর্জনের অবারিত সুযোগ এনে দেয় পবিত্র এই মাহে রমজান। আত্মশুদ্ধির এই মাসে প্রিয় বান্দাদের বদলে নেওয়ার অপার সুযোগ করে দিয়ে থাকেন মহান রাব্বুল আলামীন। পবিত্র মাহে রমজানে অন্যনা ইবাদতের পাশাপাশি গরিব-দুঃখীদের জন্য সাহায্যের হাত সমপ্রসারিত করে সাওয়াব অর্জনের সর্বোত্তম সুযোগ রয়েছে। চলমান করোনার ক্রাইসিস পিরিয়ডে পুরো পৃথিবীত বিপর্যস্ত। বৈশ্বিক এ মহামারী আমাদের স্বাভাবিক জীবনে এনে দিয়েছে অস্বাভাবিকতা।

১৯৯১ সালে দারিদ্র্যের হার ছিলো ৪৪.২ শতাংশ, যা ২০১০ সালে ১৮.৫ শতাংশে নেমে আসে। ১৭ অক্টোবর ২০১৬ সালে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার এক বক্তব্যে বলেন ২০২১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ৭/৮ শতাংশে নামবে। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারী করোনা প্রাদুর্ভাবে দৈনিক যুগান্তরের রিপোর্টে বলা হয়েছে-বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে ৪২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যা সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত হাউজহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে (হায়েস) ২০১৬-এর চূড়ান্ত রিপোর্টে (মে ২০১৯) দাঁড়িয়েছিল ২১ দশমিক ৮ শতাংশে।

বর্তমানে আমাদের চারপাশে কর্মহীন ও দেশের সুবিধাবঞ্চিত অনেক গরিব-দুঃখী মানুষ আছেন। যারা সাহরি ও ইফতারে সামান্য খাবারও জোগাড় করতে হিমশিম খান। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের রমজানে তাদের দুঃখ খানিকটা বেড়ে গেছে। তাই এ ধরনের মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া প্রতিটি মুসলমানের ঈমানি কর্তব্য।

সাদকা মানুষকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, পানি যেমন আগুনকে নিভিয়ে দেয় নিশ্চয় তেমনি সাদকাও কবরের আজাবকে নিভিয়ে (বন্ধ করে) দেয়। (জামে তিরমিজি)। অন্যত্র রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরা খেজুরের সামান্য অংশ সাদকা করে হলেও নিজেদের জাহান্নাম থেকে রক্ষা করো।’ (সহিহ  বুখারি ও মুসলিম) আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল। আর রমজানে তার বদান্যতা আরো বেড়ে যেত।’ (সহিহ মুসলিম)

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বর্ণনা করেন, একলোক নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করল, ‘ইসলামের কোন কাজটি উত্তম?’ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বললেন, ‘কাউকে খাবার খাওয়ানো...।’ (সহিহ বুখারি) পক্ষান্তরে সামর্থ্যবান হওয়া সত্ত্বেও যারা অভাবীদের জন্য খাবার পানীয় নিয়ে এগিয়ে আসবে না তাদের জন্য আল্লাহর দয়া সংকুচিত হয়ে আসবে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেন, যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না তার প্রতিও দয়া করা হয় না। (জামে তিরমিজি)। অভাবী প্রতিবেশীকে ক্ষুধার্থ রেখে যে ব্যক্তি উদরপূর্তি করে খায় রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে কঠিন ভাষায় সতর্ক করেছেন। এমনকি ‘সে মুসলমান নয়’-এমন কঠিন ভাষাও তিনি প্রয়োগ করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘সেই ব্যক্তি মুমিন নয় যে তার প্রতিবেশীকে ক্ষুধার্থ রেখেও পেট ভরে খায়।’ (সুনান আল কুবরা)

অনেকে আবার গরিব ও অসহায়দের জন্য দান-সাদকা করে, কিন্তু পিতা-মাতা বা পরিবারের সদস্যদের জন্য খরচ করতে উদাসীনতা প্রদর্শন করেন। তাদের ধারণা হলো পিতা-মাতা, স্ত্রী-সন্তানের জন্য খরচ করলে তো আর সাওয়াব পাওয়া যাবে না। এ ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। মুমিনের পারিবারিক খরচও সাদকা হিসেবে গণ্য হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সওয়াবের আশায় কোনো মুসলিম যখন তার পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করে তা সাদকা হিসেবে গণ্য হয়। (সহিহ মুসলিম) অপর হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘একটি দিনার তুমি জিহাদের জন্য খরচ করেছ, একটি দিনার দাস মুক্তির জন্য ব্যয় করেছ, একটি দিনার একজন নিঃস্বকে দান করেছ এবং একটি দিনার নিজের পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করেছ। এগুলোর মধ্যে সাওয়াবের দিক থেকে সর্বাধিক বড় হলো যা তুমি তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করেছ।’ (সহিহ মুসলিম)

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী

 

Wordbridge School
Link copied!