• ঢাকা
  • রবিবার, ২৬ মে, ২০২৪, ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

শুক্রবারকে ‘জুমাবার’ ঘোষণার ইতিহাস


নিউজ ডেস্ক অক্টোবর ১, ২০২১, ১২:৩০ পিএম
শুক্রবারকে ‘জুমাবার’ ঘোষণার ইতিহাস

ঢাকা: ইয়াওমুল জুমা বা শুক্রবার। অসহায় মুসলমানের হজের দিন। মু’মিন মুসলমানের ঈদের দিন। ঈমানদার মুসলমানের ঈমান বৃদ্ধির দিন। সর্বোপরি সপ্তাহের সেরা দিন শুক্রবার। ইসলাম ধর্ম অনুসারীদের জন্য পবিত্র জুমার দিন অত্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ও রহমত এর একটি দিন।

বলা হয়ে থাকে অসহায়, দরিদ্র মুসলমানদের জন্য এ দিনটি হজের দিন। কেউ কেউ আবার মুমিন মুসলমানদের জন্য এ দিনটিকে ঈদের দিনও বলে থাকে। অর্থাৎ এ দিনটি মুসলমানদের কাছে সপ্তাহের সেরা দিন। ধনী-গরীব ছোট বড় সবাই একসাথে জুমার নামাজ আদায় করে থাকে। এ দিনের জুমার নামাজের মাধ্যমে সারা বিশ্বের কাছে মুসলিম ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ভাতৃত্বের এক অসাধারণ নিদর্শন তুলে ধরে।

আল্লাহ বলেন, হে বিশ্বাসীগণ! যখন জুমার নামাজের আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা কেনাবেচা বন্ধ করে আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও। এটা তোমাদের নিজেদের কল্যাণের জন্যেই, যদি তোমরা বুঝতে। (সূরা জুমা: আয়াত ৯)। হাদিসেও জুমার নামাজের অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। ঘোষিত হয়েছে তা আদায়কারীদের জন্য অনেক পুরস্কার।

প্রথম হিজরি সনে নবী (সা.) মক্কা ছেড়ে মদীনায় গেলেন। তিনি শুক্রবার সেখানে পৌঁছালেন। বনি সালেম গোত্রের উপত্যকায় গেলে জোহর নামাজের সময় হয়ে যায়। সেখানে তিনি ইতিহাসের প্রথম জুমার নামাজ আদায় করেন। অর্থাৎ তিনি যোহর নামাজের পরিবর্তে জুমার নামাজ আদায় করেন।

তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এর সূচনা হয় আরো পরে। রাসুলুল্লাহ (সা.)এর মদিনায় যাওয়ার পর এবং জুমার নামাজ ফরজ হওয়ার আগে একবার মদিনার আনসার সাহাবিরা আলোচনায় বসেন। তারা উত্থাপন করলেন যে, ইহুদিদের একত্রিত হওয়ার জন্য সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিন রয়েছে। নাসারাও সপ্তাহে একদিন একত্র হয়। তাই আমাদের জন্য সপ্তাহে একটি নির্দিষ্ট দিন হওয়া প্রয়োজন, যেদিনে আমরা সবাই সমবেত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করব এবং নামাজ আদায় করব।

এরপর সেই আলোচনায় উঠে আসলো, শনিবার ইহুদিদের আর রোববার নাসারাদের জন্য নির্ধারিত। তারা শুক্রবারকে গ্রহণ করলেন এবং তারাই এ দিনকে জুমার দিন নামকরণ করলেন (সিরাতুল মুস্তাফা ও দারসে তিরমিজি)।

আসলে জুমার দিন সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে সর্বোত্তম দিন। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহ আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সূর্য উদয় হয়েছে এমন দিনগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম দিন জুমার দিন। এ দিন হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়। এ দিনে তাকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়। এ দিনই কিয়ামত সংঘটিত হবে। (মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ)।

এ দিনে মুসলমানেরা একত্রে মিলিত হওয়ার সুযোগ পায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো কারণ ছাড়া জুমার নামাজ ছেড়ে দিবে, আল্লাহ তালা তার অন্তরে মোহর মেরে দিবেন। (মুসলিম)

জুমার দিনে একটি সময় রয়েছে যে সময়ে দোয়া করলে আল্লাহ তায়ালা দোয়া কবুল করেন। তবে এই সময়টি বা মুহূর্তটিকে অজ্ঞাত করে রাখা হয়েছে। যাতে মানুষ পুরো জুমার দিনটিকে গুরুত্ব সহকারে অনুভব এবং এই মুহূর্তটিকে অনুসন্ধান করতে থাকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমার দিন এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যদি কোনো বান্দাহ ঐ মুহূর্তে দাড়িয়ে সালাতরত অবস্থায় আল্লাহর নিকট কোনো কিছু প্রার্থনা করে আল্লাহ তালা তা অবশ্যই দিবেন। (বুখারি ও মুসলিম)

সময়টি কখন- এ ব্যাপারে মতভেদ আছে। তবে হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মত হলো দুটি-

১. ইমাম মিম্বারে বসা থেকে নিয়ে নামাজ শেষ করা পর্যন্ত সময়- হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ইমাম মিম্বারে বসা থেকে নিয়ে সালাত শেষ করা পর্যন্ত। (মুসলিম, ইবনে খুজাইমা, বয়হাকি)

২. যাদুল মাআ’দ এ বর্ণিত আছে- মুহূর্তটি হচ্ছে জুমার দিন আছরের নামাজ আদায়ের পর।

সারাবছর সাদাকা করার চেয়েও রমজানের সাদাকা করা যেমন উত্তম, ঠিক তেমনি অন্যান্য দিনের তুলনায় জুমার দিনে সাদাকা করা উত্তম। কা`ব ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, জুমার দিনই সাদকা করা অন্যান্য দিন সাদকা করার তুলনায় অধিক ছাওয়াব ও গুরুত্বপূর্ণ। (মুসলিম)

জুমার দিন জান্নাতিদের সঙ্গে আল্লাহ তালা সাক্ষাৎ করবেন। তাফসিরে এসেছে- আল্লাহ তালা প্রতি জুমার দিন জান্নাতিদের সাক্ষাতের জন্য প্রকাশ্যে আসেন।

এ দিন আল্লাহ বান্দার গুনাহ মাপ করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, যথাযথ পবিত্রতা অর্জন করল, তেল লাগাল এবং ঘর থেকে আতর খুশবু লাগিয়ে বের হল, দুই ব্যক্তির মাঝে ফাঁক করে সামনে গেল না। অতঃপর তার তকদিরে যত নামাজ পড়া নির্ধারিত ছিল তা পড়ল, ইমামের খুতবার সময় চুপ থাকল, তাহলে তার এ জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত সংঘটিত গুনাহসমূহ মাপ করে দেয়া হবে। (বুখারি)

এছাড়াও নফল রোজা ও তাদের সওয়াব লাভ, জাহান্নামে আগুন নিভিয়ে রাখার দিন হিসেবে, এ দিনে অথবা রাতের সময় মৃত্যুবরণের শুভ লক্ষণসহ নানাবিধ ফজিলত রহমত বরকত রয়েছে।

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!