• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মানবেতর দিন কাটছে গণপরিবহন শ্রমিকদের


বিশেষ প্রতিনিধি এপ্রিল ২৯, ২০২১, ১০:৩৪ পিএম
মানবেতর দিন কাটছে গণপরিবহন শ্রমিকদের

ঢাকা : কঠোর লকডাউনে বন্ধ আছে গণপরিবহন। এ খাতে জড়িত রাজধানীর প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক দিশেহারা জীবন-জীবিকা নিয়ে। নেই কাজ, নেই কোনো সাহায্য। এ অবস্থায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। আয়শূন্য এসব মানুষের দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে।

ভুক্তভোগীরা জানান, জমানো টাকা যা ছিল তা দিয়ে লকডাউনে মাত্র কয়েকদিন পার করেছেন। ঋণের বোঝাও বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় সরকারের সহযোগিতা চান গণপরিবহন শ্রমিকরা।

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে কঠোর বিধিনিষেধ ও কঠিন বেড়াজালে আটকা গণপরিবহন নামের বাস সেবা। রাজধানীর বাইরে অন্যান্য জেলায়ও বন্ধ যাতায়াত। নিতান্তই নিরুপায় অনিচ্ছায় তাই স্তব্ধ টার্মিনালগুলোর ব্যস্ততা।

একেকটি বাস চালাতে মালিক ছাড়া প্রয়োজন হয় চালক, সুপারভাইজার, কন্ডাক্টর আর হেলপাররাই থাকেন মুখ্য চরিত্রে। এদের সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে ওয়েবিল লেখা কর্মী, চেকার ও সুপারভাইজার। রাজধানীতে এসব শ্রমিকই রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার। আর চার চাকার এ যানটি চলার সাথে পেট চালান কমপক্ষে আরো দশ ধরনের শ্রমিক।

সৌন্দর্যবর্ধন থেকে শুরু করে বড় এই যান্ত্রিক পরিবহনের ছোট্ট একটি যন্ত্রাংশ সারাই করার সাথে শুধু রাজধানীর চারটি টার্মিনালেই যুক্ত ২০ হাজারের বেশি শ্রমিক। করোনার এ ভয়াল থাবায় এদের জীবিকার চাকাও থমকে যেতে বসেছে। গত বছররের দীর্ঘ লকডাউনের কোনোরকম পার করে একটু ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু হয়েছিল এদের।

কিন্তু করোনার দ্বিতীয় স্রোতে এবারে লকডাউনে কর্মহীন এসব শ্রমিক পড়েছেন মহাবিপদে।

প্রজাপতি পরিবহনের বাসচালক মুক্তার হোসেন বলেন, লকডাউনে অনেক চিন্তার মধ্যে দিন পার করেছি। কীভাবে চলব পরিবার-পরিজন নিয়ে। আমরা বাসচালকরা ‘দিন আনি দিন খাই’। আমাদের জমানো টাকা থাকে না। এজন্য সমস্যায় পড়তে হয়। এ লকডাউন আরো বাড়লে তখন কী খাব কী করব কিছুই মাথায় আসছে না।

বাস হেলপার সোহাগ মিয়া বলেন, আমাদের রুটি-রুজি বাসে কাজ করে জোগাড় করতে হয়। অনেক কষ্টে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। কারো কাছ থেকে পাচ্ছি না অনুদান, না পচ্ছি সাহায্য বা ধার। এ রোজার মধ্যে প্রায়ই শুধু চিড়া দিয়ে রোজ খুলতে হয়। প্রায় দিনই শেষ রাতে কোনোরকম কিছু খেয়ে রোজা রাখতে হয়। এই লকডাউনে সবকিছু বন্ধ বাকি, কটা দিন কীভাবে চলব আল্লাহই জানে। ধারণাও করতে পারছি না। আমাদের মতো সবারই এক অবস্থা, কারো হাতে টাকাপয়সা নেই। আমাদের খবর কেউ নেয় না।

আকাশ পরিবহনের কন্ডাক্টর জসিম বলেন, না পারি রিকশা-ভ্যান চালাতে, না পারি কারো কাছে হাত পাততে। লকডাউনের ছয় দিন অনেক কষ্ট করে চলেছি। ধার আর জমানো টাকা দিয়ে কোনোমতে এই কটা দিন পার করলাম। সামনের কদিন কীভাবে যে খেয়ে-পরে থাকব তাই এখন বড় সমস্যা।

সড়কে আমাদের বাস চললে পকেটের টাকা আসে, আমাদের ইনকাম হয়। লকডাউনের সড়কে বাসও চলে না, আমাদের রোজগারও হয় না।

সায়েদবাদ বাস টার্মিনালে খেটে খাওয়া আবুল হাশেম জানালেন কেমন আছেন তারা। ২০১৮-১৯ সালেও হাশেম ভাবতে পারেননি জীবনে আসতে পারে চলতি আর বিগত বছরের মতো সময়। জানালেন, টানা দুই বছর রোজার প্রথম দশ দিনে কোনো আয় হচ্ছে না। অথচ তার আগের বছরগুলোতে এ সময়ে দৈনিক আয় ছিল পাঁচ-সাতশ টাকায়।

প্রায় ৩০ বছর ধরে রাজধানীর টার্মিনালগুলোতে জীবিকা নির্বাহ করেছেন আলমগীর হাওলাদার। বর্তমানে পর্দার আড়ালের শ্রমিকদের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে দেখেছেন গত দুই বছরের অসহায়ত্ব। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়াটা আর সবার মতোই প্রত্যাশা করেন শ্রমিকরাও। তবে সে পর্যন্ত জনগণ হিসেবে কিছু সাহায্যের দাবিও তাদের।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

 

Wordbridge School
Link copied!