• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
হেসে খেলে ওয়ানডে সিরিজ জয়

সুপার লীগের সেরা তিনে বাংলাদেশ 


দ্বিন ইসলাম আরিয়ান জানুয়ারি ২২, ২০২১, ০৯:৫৮ পিএম
সুপার লীগের সেরা তিনে বাংলাদেশ 

ঢাকা : করোনাভাইরাসের দোহাই দিয়ে বাংলাদেশ সফরে আসেননি টেস্ট অধিনায়ক জেসন হোল্ডার ও ওয়ানডে অধিনায়ক কাইরন পোলার্ডসহ ১০ জন খেলোয়াড়। 

এছাড়া ব্যক্তিগত কারণে আরো দুইজন ক্রিকেটার সফর থেকে নাম প্রত্যাহার করায় ইতিহাসে সবচেয়ে দুর্বল দল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে ক্যারিবীয়রা। যদিও তাদেরকে মাঠের খেলায় মোটেও হালকাভাবে নেয়নি টাইগাররা। 

ফলাফল, দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সফরকারীদের বিপক্ষে ৭ উইকেটের জয় তুলে নিয়ে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ জিতে নিয়েছে টাইগাররা। একইসঙ্গে আইসিসি বিশ্বকাপ সুপার লীগের পয়েন্ট টেবিলের তিন নম্বরে উঠে এসেছে তামিম বাহিনী।

সুপার লীগে একটি ম্যাচ জিতলে ১০ পয়েন্ট, ম্যাচ টাই/পরিত্যক্ত/বাতিলের জন্য ৫ পয়েন্ট করে এবং হারের জন্য কোনো পয়েন্ট পাওয়া যায় না। পয়েন্টের ভিত্তিতে র‌্যাংকিং নির্ধারিত হবে। সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে না পারা দলকে ২০২৩ সালের জুন-জুলাইয়ে বাছাই পর্ব খেলতে হবে।

এখন পর্যন্ত ৬ ম্যাচে ৪ জয়ে ৪০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলে সবার উপরে অবস্থান করছে অস্ট্রেলিয়া। সমান ম্যাচে ৩ জয়ে ৩০ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ইংল্যান্ড। দুই ম্যাচ খেলা বাংলাদেশ সবকটিতে জিতে ২০ পয়েন্ট নিয়ে তিনে উঠেছে। এক ম্যাচ বেশি খেলা পাকিস্তানের পয়েন্ট ২০ হলেও রানরেটে এগিয়ে থাকায় তাদের টপকে গেছে লাল-সবুজের দল।  

২০২৩ বিশ্বকাপে সরাসরি খেলতে হলে, ভারত বাদে পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষ সাতের মধ্যে বাংলাদেশকে থাকতে হবে। গত বছর শুরু হওয়া সুপার লীগ পর্বে প্রতিটি দলকে হোম ও অ্যাওয়ে ভিত্তিতে চারটি করে তিন ম্যাচের সিরিজ খেলতে হবে। তাই সিরিজ শুরুর আগে দুর্বল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আত্মতুষ্টিতে ভুগছে না বলে জানিয়েছিলেন ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল। যার প্রমাণ মাঠের পারফরম্যান্সে দেখা যাচ্ছে। 

২০১৮ সালে টানা দুবার ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিল টাইগাররা। এবার ২০২১ সালেও এক ম্যাচ হাতে রেখে ওয়ানডে সিরিজ জিতে নিয়ে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জয়ের হ্যাটট্রিক করল টাইগার স্কোয়াড। এই নিয়ে ৫ বার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। সর্বপ্রথম ২০০৯ সালে তাদের মাটিতে ক্যারিবীয়ানদের হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। ২০১২-১৩ সালে ঘরের মাঠেও গেইল-স্যামুয়েলসদের বিপক্ষে ৩-২ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছিল লাল-সবুজের দলটি।

গতকাল শুক্রবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে জিতে আগে ব্যাট করা সফরকারী দলের ব্যাটসম্যানরা শুরু থেকেই আসা-যাওয়ায় ব্যস্ত ছিল। মুস্তাফিজ-মিরাজ-সাকিবদের সামনে তারা অসহায় হয়ে পড়েছিল। নিখুঁত লাইন-লেংথে বোলিং করে যাওয়া মুস্তাফিজের বলে রান করার পথ পাচ্ছিলেন না ব্যাটসম্যানরা। মাঝে মধ্যে বল ভেতরে ঢোকানোয় বাঁহাতি এই বোলারের তাদের বিপক্ষে বাড়তি সাবধানতা ছিল তাদের।

আগের ম্যাচের মতো ভেতরে ঢোকা বলেই মুস্তাফিজ নেন প্রথম উইকেট। গালিতে মিরাজের হাতে ধরা পড়েন আমব্রিস। চতুর্থ ওভারে জোড়া আঘাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চেপে ধরেন মিরাজ। অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ বল জায়গা বানিয়ে কাভারের ওপর দিয়ে খেলতে গিয়ে তামিমের হাতে ধরান পড়েন ওটলি। ভুল লাইনে খেলে বোল্ড হয়ে যান জশুয়া।

সাকিবকে উইকেট উপহার দেন আন্দ্রে ম্যাককার্থি। অনেকটা যেন প্রথম ম্যাচের পুনরাবৃত্তি। বাঁহাতি স্পিনারের বলে একইভাবে দৃষ্টিকটু স্লগ সুইপ করে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। আগের ম্যাচে প্রতিরোধ গড়া কাইল মেয়ার্স খুলতে পারেননি রানের খাতা। অপ্রয়োজনীয় এক রান আউটে ফিরেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। ৪১ রানে ৫ উইকেট হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য তখন একশ রানই দূরের পথ।

শুরু থেকে আস্থার সঙ্গে খেলছিলেন এনক্রুমা বনার। হাসান মাহমুদের করা শরীরের বেশ কাছের বল কাট করার চেষ্টায় বোল্ড হয়ে ফিরেন এই অলরাউন্ডার। পরের ওভারে জেসনকে এলডিবিøউর ফাঁদে ফেলেন সাকিব।

টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যর্থ রেইফার। মিরাজের বলে সফল এলবিডব্লিউর রিভিউ নিয়ে তাকে ফেরায় বাংলাদেশ। এরপর শুরু হয় রোভম্যান পাওয়েলের লড়াই। শেষ দুই ব্যাটসম্যানকে নিয়ে দলকে দেড়শ রানের কাছে নিয়ে যান তিনি। নবম উইকেটে তাকে দারুণ সঙ্গ দেন আলজারি জোসেফ। তিন চারে ১৭ রান করা এই টেল এন্ডার ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে সফরকারীদের সর্বোচ্চ ৩২ রানের জুটিটি ভাঙেন মুস্তাফিজ।

এরপর আকিলকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন পাওয়েল। পেসারদের ভালোভাবেই সামলাচ্ছিলেন তারা। নিজের শেষ ওভারে বোলিংয়ে আসা মিরাজকে বেরিয়ে এসে ওড়াতে গিয়ে বলের নাগাল পাননি পাওয়েল। বেলস ফেলে দেন মুশফিক। এর সঙ্গে ওয়ানডেতে এই প্রথম এক সিরিজে কোনো দলকে টানা দুই ম্যাচে দেড়শ রানের নিচে থামিয়ে দিল বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করেছিল ১২২।  ৬৬ বলে দুই চার ও এক ছক্কায় ৪১ রান করে ফেরেন পাওয়েল। 

বাংলাদেশের পক্ষে মেহেদী হাসান মিরাজ ৯.৪ ওভারে ২৫ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট; ওয়ানডেতে যা তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার। মুস্তাফিজ ৮ ওভারে ৩ মেইডেনসহ মাত্র ১৫ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। সাকিব ১০ ওভারে ৩০ রান খরছায় ২ উইকেট ঝুলিতে ভরেন। অভিষেকে আলো ছড়ানো হাসান এ দিন ভুগেছেন বেশ। খরুচে বোলিংয়ে ৫৪ রান দিয়ে নিয়েছেন একটি উইকেট। টানা দুই ম্যাচে উইকেটশূন্য রুবেল। তবে আগের ম্যাচের চেয়ে এদিন লাইন-লেংথে অনেক বেশি ধারাবাহিক ছিলেন

জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালোই করেন তামিম এবং লিটন দাস। ওয়ানডে দলপতি শুরুতে ধীরগতিতে খেললেও লিটন ব্যস্ত ছিলেন দ্রু রান তোলায়। তবে ষষ্ঠ ওভারের ঠিক আগে ২৪ বলে ৪ বাউন্ডারির মারে ২২ রানে আউট হন লিটন। গত ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের একটু হলেও দুশ্চিন্তায় ফেলেছিলেন আকিল হোসেন। সেই আকিল এই ম্যাচেও এনে দিয়েছেন সফরকারীদের প্রথম ব্রেক থ্রু। লিটনকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে তিনি বিদায় করেন। সঙ্গী হারালেও নাজমুল হোসেন শান্তকে সঙ্গে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন তামিম। তবে দলীয় ৭৭ রানে ১৭ রান করা নাজমুল উইকেট ছুঁড়ে দেন। 

চার নম্বরে নামা সাকিবকে নিয়ে দলকে ১০০’র উপর নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন তামিম। তবে ফিফটি পাওয়ার পরই উইকেট ছুঁড়ে দেন ওয়ানডে দলপতি। ৫০ রানে তিনি ফিরলেও সাকিব এবং মুশফিকুর রহিম মিলে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান।

সাকিব অপরাজিত থাকেন ৪৩ রানে। মুশফিকুর রহিমের ব্যাট থেকে আসে ৯ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে একটি করে উইকেট নেন রেইমন্ড রেইফার, আকিল হোসেন এবং জেসন মোহাম্মদ। সিরিজ জিতলেও সফরকারীদের হোয়াইটওয়াশের লক্ষ্যে ২৫ জানুয়ারি চট্টগ্রামে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। 

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!