• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
বিশ্বকাপ-২০২৩

‘আনফিট’ তামিমকে বিশ্বকাপে চান না দুই জন


ক্রীড়া ডেস্ক সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩, ০৩:৫৫ পিএম
‘আনফিট’ তামিমকে বিশ্বকাপে চান না দুই জন

ঢাকা: বিশ্বকাপ যাত্রার ২৪ ঘণ্টার কিছু বেশি সময় আগ পর্যন্তও ঘোষণা হয়নি বিশ্বকাপের বাংলাদেশ দল, বিস্মিত হওয়ার জন্য এটাই যেখানে যথেষ্ট, সেখানে বাড়তি মাত্রা যোগ করছে বিশ্বকাপ-যাত্রার এক দিন আগেও বিশ্বকাপ দল নিয়ে অনিশ্চয়তা। 

কারণ, কাল গভীর রাতে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের বাসায় হওয়া এক সভায় অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এবং কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বোর্ড সভাপতিকে জানিয়েছেন, বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে তারা কোনো ‘আনফিট’ বা ‘অর্ধেক ফিট’ ক্রিকেটারকে দলে চান না। 

এমনকি তিনি যদি হন তামিম ইকবালের মতো অভিজ্ঞ কেউও। সাকিব নাকি এমনও বলেছেন, আনফিট কেউ দলে থাকলে তিনি বিশ্বকাপে অধিনায়কত্ব করবেন না।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চলতি সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডের পর তামিম নিজেই সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, তিনি এখনো পুরোপুরি ফিট নন। এরপর একই কথা তিনি ব্যক্তিগতভাবে বোর্ডের কয়েকজন পরিচালককে বলেছেন, বলেছেন নির্বাচকদেরও। 

তামিম যেহেতু কয়েক মাস ধরেই পিঠের সমস্যায় আক্রান্ত এবং তার সমস্যাটাই এমন যে এটি যেকোনো মুহূর্তে ফিরে আসতে পারে; বিশ্বকাপ দল ঘোষণার আগে তার শারীরিক অবস্থা জানাটা জরুরি ছিল নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্টের জন্য।

নিজের জায়গা থেকে সৎ থাকতে বা অন্য যে কোনো কারণেই হোক, যেটি বাস্তব সেটিই তামিম তাদের জানিয়েছেন। বলেছেন, বিশ্বকাপের দলে যদি তাকে রাখা হয়, তাহলে যেন এটা বিবেচনা করেই রাখা হয় যে তিনি পুরোপুরি ফিট নন। 

স্বাভাবিকভাবেই টিম ম্যানেজমেন্ট এবং নির্বাচকদের কাছে এ কথার অনুবাদ দাঁড়িয়েছে অনেকটা এ রকম, তামিমকে দলে নিলেও হয়তো সব ম্যাচে তাকে পাওয়া যাবে না। তাহলে বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে এই বোঝা কি বইবে বাংলাদেশ?

জানা গেছে, কোচ-অধিনায়কও সেই চিন্তা থেকেই কাল রাতে তাদের মতামত জানিয়েছেন বোর্ড সভাপতিকে। নিউজিল্যান্ড সিরিজের দলে না থাকা ওপেনার মোহাম্মদ নাঈমকে আজ দুপুরে হাথুরুসিংহের মিরপুরে ডেকে আনাও যেন কিছু একটা ইঙ্গিত করছে। 

তবে এসবের যোগফল অবশ্যই এই নয় যে ভারত বিশ্বকাপের দলে তামিমের না থাকাটা চূড়ান্ত হয়ে গেছে। কোচ-অধিনায়কের মতকে গুরুত্ব দিয়ে বোর্ড তামিমকে ছাড়াই বিশ্বকাপের দল গড়তে পারে, এই সম্ভাবনা যেমন আছে; তেমনি এত কিছুর পরও তামিমের বিশ্বকাপ দলে থাকারও জোর সম্ভাবনা আছে।

বিষয়টি চূড়ান্তভাবে জানা যাবে আজ বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড তৃতীয় ওয়ানডের ইনিংস বিরতির সময়, যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটু অভিনবভাবেই ঘোষিত হবে ভারত বিশ্বকাপের বাংলাদেশ দল। তার আগে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান হয়তো শেষবারের মতো বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে তামিম ইকবাল বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ এবং নির্ভরশীল ওপেনার। ফর্ম হয়তো এখন অতটা তুঙ্গে নেই, তবে এমনও নয় যে এর মধ্যে তার অনুপস্থিতিতে যারা ওপেনিংয়ে সুযোগ পেয়েছেন, তারা খুব আস্থার প্রমাণ দিতে পেরেছেন। উল্টো আরেক অভিজ্ঞ ওপেনার লিটন দাসই হারিয়ে বসেছেন ফর্ম! ক্রিকেটীয় দিক থেকে তাই বিশ্বকাপের দল থেকে তামিমকে বাদ দেওয়ার চিন্তা করাটা কঠিন।

সেটি সহজ নয় অন্য কারণেও। গত জুলাইয়ে আফগানিস্তান সিরিজের মাঝপথে হঠাৎ করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণার পর যে প্রক্রিয়ায় তামিম আবার খেলায় ফিরেছেন, সেখানে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহলও সম্পৃক্ত হয়ে গিয়েছিল। তামিম তার এত বড় সিদ্ধান্ত বদলেছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে। কাজেই বিশ্বকাপের দলে তাকে না রাখার সিদ্ধান্তটাও হয়তো একা বোর্ডের পক্ষে নেওয়া সম্ভব হবে না।

সংক্ষিপ্ত ওই ইতিহাস যেমন তামিমের পক্ষে আছে, তার কারণেই আবার টিম ম্যানেজমেন্ট এবং বোর্ডের আবহ অনেকটাই তার বিপক্ষে চলে গেছে। নিজের ফিটনেস নিয়ে নিজেই বারবার সংশয় প্রকাশ করে সবার মধ্যে তামিম এমন ধারণাই ছড়িয়ে দিয়েছেন যে তিনি হয়তো আগে থেকেই একটা অজুহাতের পিলার পুঁতে রাখতে চাচ্ছেন। 

বিশ্বকাপে ভালো না খেললে খারাপ খেলার দায়টা যেন ফিটনেসের ওপর দিয়ে যায়। তখন তার বলার সুযোগ থাকবে, ‘আমি তো আগেই বলেছিলাম...।’

অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের সঙ্গে তামিম ইকবালের ব্যক্তিগত সম্পর্কের অবনতি বেশ পুরোনো খবর হলেও সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে সেটি আবারও সামনে চলে এসেছে। কারও কারও এমনও মত, তামিম হয়তো আশঙ্কা করছেন, সাকিবের অধীনে তিনি দলে স্বস্তিতে থাকবেন না। আবার কেউ বলছেন, অধিনায়ক সাকিবকে অস্বস্তিতে রাখতেই বিশ্বকাপের আগে নিজের চোটকে আবারও টালমাটালভাবে উপস্থাপন করছেন তামিম। বললে হয়তো খারাপ শোনাবে, কিন্তু বাস্তবতা হলো খোদ দল সংশ্লিষ্ট কারও কারও মনে এমন প্রশ্নও আছে-সাকিবের অধীনে তামিম তার পুরো সামর্থ্য দিয়ে খেলবেন তো!

সব মিলিয়ে তামিমকে বাদ দিয়েই বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিশ্চয়ই এই মুহূর্তে কল্পনাতীত। তবে বিসিবিতে মাশরাফির আগমন বলে দিচ্ছে নিশ্চয়ই কোনো না কোনো সুরাহা তো হবেই। কারণ এর আগেও বেশি কিছু সমস্যার সমাধানে মাশরাফিকে ডেকেছিল বিসিবি। কারণ বড় ভাই হিসেবে মাশরাফির প্রতি সবার আলাদা একটা শ্রদ্ধা আছে। সেই জায়গা এবারের ঝামেলা মাশরাফি মেটাতে পারেন কি না? সেটাই দেখার বিষয়।

এআর

Wordbridge School
Link copied!