• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
অর্থনীতিকেই প্রাধান্য দেবে বাংলাদেশ

‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’


নিউজ ডেস্ক জানুয়ারি ২৫, ২০১৯, ০৪:১৭ পিএম
‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’

ঢাকা : ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এখন আলোচনায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতীয় টিভি চ্যানেল সিএনএন নিউজ এইটিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ এ বাংলাদেশের যুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে যৌক্তিক কারণ ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন— বিশ্বায়নের এ যুগে আন্তঃদেশীয় সম্পর্ক জোরদার আর যোগাযোগ সহজতর হলেই অর্থনীতির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। তাই অর্থনীতিকে প্রাধান্য দিয়ে চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোডে যুক্ত হওয়াটা এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য খুবই যৌক্তিক।

যদিও ভারত চীনের এই বৃহৎ উদ্যোগকে আঞ্চলিক আখ্যা দিয়ে নিজেরা যুক্ত হননি বা কাশ্মিরের মতো বিরোধপূর্ণ এলাকা দিয়ে এই রোড প্ল্যান থাকায় একে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখছেন তারা। শেখ হাসিনা বলেছেন— বৃহৎ এই উদ্যোগে ভারতেরও যুক্ত হওয়া উচিত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাশ্মির বিরোধ ভারত-পাকিস্তানের একটি আঞ্চলিক বিষয়। এর সঙ্গে একটি বৃহৎ উদ্যোগের কোনো সম্পর্ক থাকার কথা নয়। এ নিয়ে ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছু নেই। বরং ভারত যুক্ত হলেই চীনের এই বৃহৎ প্রকল্প সার্থকতার ক্ষেত্রে কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৩ সালে ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ নামের ওই উন্নয়ন কৌশল ও কাঠামো উপস্থাপন করেছিলেন। বিশ্বের ৬০টি দেশের সঙ্গে চীনের মূল ভূখণ্ডকে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে এতে। মূলত মধ্য এশিয়া ও ইউরোপের সঙ্গে সড়কপথে যুক্ত চীনের উদ্দেশ্য।

সিএনএন নিউজ এইটিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন যে, বাংলাদেশের যোগ দেওয়া নিয়ে ভারতের চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ এই মুহূর্তে সবার জন্যই অর্থনৈতিক দিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শেখ হাসিনা বলেছেন— ‘চীনের এই উদ্যোগের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার অগ্রগতি হবে, যার ফলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে সংযুক্ত সবকয়টি দেশ। যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য ইতোমধ্যে চীন, ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার একটি চুক্তি করেছে, যেটি বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর বা বিসিআইএম-ইসি নামে পরিচিত।’ ‘ওই চুক্তির পর নতুন করে এই করিডোর নিয়ে ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না।’ এই প্রকল্পে যুক্ত হলে সবার ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির চাকা আরো কয়েকগুণ বেশি সচল হবে।

ভারতের বিষয়ে শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘ভারত একটি বড় অর্থনীতির দেশ, তার এ নিয়ে চিন্তিত হওয়া উচিত নয়। যদি বিষয়টি নিয়ে আপত্তি থাকে, তাহলে এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে এবং আলোচনার মাধ্যমেই যেকোনো ইস্যু সমাধান হতে পারে।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৬ সালের অক্টোবরে ঢাকা সফরে এলে তখন ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ উদ্যোগে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেয় বাংলাদেশ। ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী চীন দুটি ‘ইকোনমিক করিডোর’ তৈরি করছে। একটি হলো কুনমিং থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত সড়ক ও রেলপথ, আর দ্বিতীয়টি- চীনের জিনজিয়াং থেকে পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের সমুদ্রবন্দর গাওদার পর্যন্ত রেল ও সড়কপথ। এই করিডোরের ব্যাপারে ভারতের আপত্তির কারণ হিসেবে জানা গেছে, পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মিরের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে জিনজিয়াং-বেলুচিস্তান করিডোর। এ কারণেই নাকি ভারত কয়েক বছর আগে থেকেই এই পরিকল্পনা প্রত্যাখান করে আসছে।

ভারতের অর্থনীতিবিদ ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ প্রবীর দে বলেছেন, ভারতের উদ্বেগের কারণ ভিন্ন বলে তিনি মনে করেন। প্রথমত, এটা যাবে কাশ্মিরের ভেতর দিয়ে, যেটা নিয়ে ভারতের বহুদিনের বিরোধ আছে প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে। আর দ্বিতীয়ত, এটার অর্থায়ন মোটেও সলিড কোনো খাত থেকে হচ্ছে না। বরং সেটা হবে ডেট ফাইন্যান্সিং এর মাধ্যমে, অর্থাৎ এটা আপনাকে ঋণের মধ্যে ফেলে দেবে।

অন্যদিকে গত দশ বছরে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে সু-সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তাতেও ছেদ ঘটতে পারে বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ। এ ছাড়া এ প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশ যে চীনের প্রভাব বলয়ে ঢুকে নিজেদের নতুন করে পরিচয় করাবে না সেটার নিশ্চয়তা কোথায়। এমন শঙ্কাও রয়েছে ভারতের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন মনে করেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের কাছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরুত্ব বেশি হওয়া উচিত। কারণ বাংলাদেশের সামনে এখন অর্থনীতির চ্যালেঞ্জটাই অনেক প্রধান্যের বিষয়। সেজন্য শুধু চীন নয় আশপাশের বন্ধু দেশের সঙ্গে সু-সম্পর্ক গড়ে তুলে বিনিয়োগ ও আমদানি রফতানির ক্ষেত্র আরো সহজতর করা প্রয়োজন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!