• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
অবিক্রীত ৮০ শতাংশ চামড়ার অর্ধেক নষ্টের শঙ্কা

স্থবিরতা কাটছে না চামড়া কেনাবেচায়


বিশেষ প্রতিনিধি আগস্ট ২৫, ২০১৯, ০২:১০ পিএম
স্থবিরতা কাটছে না চামড়া কেনাবেচায়

ঢাকা : আড়ত থেকে ট্যানারিগুলো বেশ কয়েকদিন আগেই লবণযুক্ত চামড়া কেনা শুরু করলেও কাটেনি চামড়া খাতের স্থবির অবস্থা। বেশির ভাগ ট্যানারিই এ বছর চামড়া কেনা বন্ধ রেখেছে আগের চামড়া মজুত থাকার কারণে।

এছাড়া অর্থের অভাবে অনেক ট্যানারি মালিক ও তাদের প্রতিনিধিরা চামড়া কিনতে পারছে না। কারণ একদিকে তাদের ওপর পূর্বের বকেয়া পাওনার খড়্গ, অন্যদিকে বাকিতে চামড়া দিতে আনীহা আড়তদারদের।  

দেশের বিভিন্ন এলাকার আড়তে প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি লবণযুক্ত চামড়া অবিক্রীত রয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন কাঁচা চামরা আড়ত মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন।

সংগঠনটির দাবি, অন্য বছর এ সময় প্রায় অর্ধেক চামড়া বিক্রি হতো। এ বছর আড়তে থাকা চামড়া কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না কোনো ট্যানারি বা তাদের প্রতিনিধিরা। এতে মজুত চামড়া নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছেন তারা। শঙ্কায় রয়েছেন বড় ধরনের লোকসানের।

চামড়া নিয়ে দেশের বৃহৎ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে চামড়া ব্যবসায়ীদের ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা বৈঠক সফল না হওয়ায় এ অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না বলে মনে করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান।

তিনি শনিবার (২৪ আগস্ট) বলেন, যত দ্রুত পাওনা টাকা পাওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যবসায়ীরা পাবে, তত দ্রুত এ সংকট কাটবে। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। দফায় দফায় শুধু বৈঠক হচ্ছে।

তিনি জানান, কালও (আজ রোববার) আমরা ট্যানারি মালিকদের সঙ্গে বসছি। তাদের আমরা পাওনা টাকার সব কাগজপত্র দেব। কীভাবে তারা টাকা পরিশোধ করবে সেটা তারা জানাবে।

প্রসঙ্গত, ২২ আগস্ট ট্যানারি এফবিসিসিআইয়ে মালিক ও কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের পাওনা নিয়ে দ্বন্দ্বের শেষ সুরাহা বৈঠক হয়েছে। সে সময় ট্যানারিগুলোর কাছে যে টাকা পাবেন বলে দাবি করছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা, তার তিন ধাপের একটি তালিকা আজ ২৫ আগস্টের মধ্যে জমা দেবেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। সেই তালিকা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আবার বৈঠক হবে আজ।

এবার কোরবানির ঈদের পর কাঁচা চামড়া নিয়ে সংকটের প্রেক্ষাপটে শিল্পমন্ত্রীর বৈঠকে ট্যানারি মালিক ও আড়তদারদের মধ্যে মধ্যস্থতার জন্য এফবিসিসিআইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

গত বৃহস্পতিবার মতিঝিল ফেডারেশন ভবনে ট্যানারি মালিক ও কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করে এফবিসিসিআই। ঢাকার পোস্তা ছাড়াও চট্টগ্রাম ও উত্তরবঙ্গের চামড়ার আড়তদাররা এতে অংশ নেন। তবে এফবিসিসিআইয়ের এ তিন ধাপে টাকা পরিশোধের সিদ্ধান্তে খুশি নন অনেক আড়ত মালিক।

জানা গেছে, গতকাল উত্তরবঙ্গের বৃহত্তম হাট নাটরের চক বৈদ্যনাথ বাজারে নতুন করে প্রায় এক লাখ পিস চামড়া আসলেও সেখানে এখনো নেই ক্রেতা। প্রতিবছর কোরবানির ঈদের পর এ সময় চক বৈদ্যনাথ সরগরম থাকলেও এবার চিত্র উল্টো। বিক্রেতা থাকলেও চামড়া ক্রেতার সংখ্যা প্রায় শূন্য।

এমন পরিস্থিতিতে এ হাটে প্রতিবছর ঈদের পর ১০ থেকে ১২ লাখ পিস চামড়া কেনাবেচা হলেও এবার তা নেমেছে শূন্যের কোঠায়। আর এ কারণে সেখানকার ব্যবসায়ীরা মাত্র আড়াই লাখ পিসের মতো চামড়া মজুত করেছেন।

অন্যদিকে সারা দেশের মতো চট্টগ্রাম নগরেও চামড়ার দামের অস্বাভাবিক দরপতন হয়েছে। আড়ত থেকে সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কিনতে রাজি হচ্ছে না ট্যানারি মালিকরা এমন অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। এখনো সেখানকার আড়তদাররা এ জন্য ট্যানারির ‘সিন্ডিকেটকে’ দায়ী করেছেন।

চট্টগ্রামের আড়তদারদের অভিযোগ, ঢাকার ট্যানারি ব্যবসায়ীদের কাছে তাদের অনেক টাকা বকেয়া। এরপরেও অনেক ট্যানারি বাকিতে চামড়া সংগ্রহের পাঁয়তারা করে যাচ্ছে। তবে তাদের কাছে চামড়া বিক্রির জন্য আগ্রহ নেই আড়তদারদের। এমন পরিস্থিতিতে নগদে কেনার মতো ট্যানারিও মিলছে না। ফলে মজুত থেকে চামড়ার গুণগত মান নষ্ট হওয়ায় শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

ওই অঞ্চলের আড়তদারেরা এবার সাড়ে পাঁচ লাখ পিস গরুর চামড়া ও ৮০ হাজার পিস ছাগলের চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। সেটা পূরণ হয়নি। ঢাকার বাইরে জন্য এবার সরকার প্রতি বর্গফুট চামড়ার দর ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে, ওই দামেও চামড়া বিক্রি সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি তাদের।

গতকাল ওই এলাকার মেসার্স ইউনুস চামড়া আড়তদাতের মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, ট্যানারি ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা পান। কিন্তু এরপরও তারা আমাদের পাওনা টাকা দিচ্ছেন না। চাইলে সেটা দেওয়া সম্ভব তাদের পক্ষে।

এ বছর ঈদুল আজহাতে সরকারিভাবে দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও কোরবানিতে কাঁচা চামড়ার দরপতন হয় ভয়াবহ আকারে। ব্যবসায়ীরা রাস্তায় চামড়া ফেলে চলে যান। অনেক জায়গায় মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়। দেশজুড়ে নানা সমালোচনার ঝড় ওঠে। এই অবস্থায় ঈদের পরদিন সরকার ঘোষণা দেয় চামড়া রপ্তানির। ঠিক তারপরেই নড়েচড়ে বসে ট্যানারি মালিক ও আড়তদাররা। এরপর ব্যবসায়ী ও সরকার পক্ষের আলোচনা শেষে ট্যানারি মালিকদের কাছে লবণযুক্ত কাঁচা চামড়া বিক্রি শুরু করেছে আড়তদাররা।

এ বছর কাঁচা চামড়ার দামে বড় ধসের কারণে পশুর চামড়ার অর্ধেকের বেশি নষ্ট হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই নষ্ট হওয়া চামড়ার আর্থিক মূল্য দাঁড়াবে কমপক্ষে আড়াই শ কোটি টাকা। আর রপ্তানির মূল্য হিসাব করলে ক্ষতির পরিমাণ হবে কয়েক গুণ বেশি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!