• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অপারেশন টোয়াইলাইট সমাপ্ত: সেনাবাহিনী


সিলেট প্রতিনিধি মার্চ ২৮, ২০১৭, ০৯:৩৩ পিএম
অপারেশন টোয়াইলাইট সমাপ্ত: সেনাবাহিনী

সিলেট: সিলেট নগরীর আতিয়া মহলে সেনাবাহিনীর প্যারাকমান্ডোদের পরিচালিত ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছ।

মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) রাত ৮টার সময় শহরতলির বটেশ্বরস্থ জালালাবাদ সেনানিবাসে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানিয়েছেন সেনা সদর দপ্তরের প্রতিনিধি এবং সামরিক গোয়েন্দা পরিদপ্তরের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান।

ফখরুল আহসান বলেন, গত ১৫ মার্চ সীতাকুন্ডে পুলিশ সফল জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালায়। এ অভিযানে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, সিলেটের শিববাড়িতে কোনো এক বাড়িতে জঙ্গিরা লুকিয়ে আছে। গত ২৪ মার্চ আনুমানিক রাত দেড়টায় পুলিশ এলাকাটি ঘিরে ফেলে। রাত আনুমানিক সাড়ে ৪টার দিকে তারা নিশ্চিত হয় যে আতিয়া মহল নামক বাড়ির পাঁচতলা বাড়ির নিচতলা একটি ফ্ল্যাটে জঙ্গিরা অবস্থান করছে।

অভিযান পরিচালনাকারী সদস্যরা সঙ্গে সঙ্গে নিচ তলার ছয়টি ফ্ল্যাট বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয় এবং মূল প্রবেশ পথের ভবনের কলাপসিবল গেইটে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়। একইসঙ্গে ভবনটি সকল দিক থেকে ঘিরে ফেলা হয়।

তিনি বলেন, পাঁচ তলা বাড়িটির প্রতি তলায় ৬টি করে মোট ৩০টি ফ্ল্যাট আছে।  ঘটনার সময় ২৮টি ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছিলেন। জঙ্গিরা পুলিশ বাহিনীর উপস্তিতি বুঝতে পেরে তাদেরকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুড়ে মারে।

ফখরুল আহসান বলেন, পুলিশ বাহিনী জঙ্গিদের সক্ষমতা ও ২৮টি পরিবারের নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনা করে সোয়াতের সাহায্য চায়। এসময় ভবনের বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে দরজা-জানালা বন্ধ করে নিজ নিজ ফ্ল্যাটে অবস্থান করে। জঙ্গিরা তাদের ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙ্গে বাইরে বেরিয়ে আসে এবং ভবনের মূল ফটকে বিস্ফোরক স্থাপন করে।  এমনকি একটি ফ্রিজ ও মোটরসাইকেলেও বিস্ফোরক লাগিয়ে রাখে তারা। পুরো ভবনের সিঁড়িসহ বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরক লাগিয়ে বিপজ্জনক করে তোলা হয়।

তিনি বলেন, সোয়াত সদস্যরা ২৪ মার্চ আনুমানিক বিকেল ৪টার সময় অপারেশন এলাকায় উপস্থিত হন। সোয়াত সদস্যরা তাদের পর্যবেক্ষণ, পরিকল্পনা ও বিচার বিশ্লেষণ শেষে বাসিন্দাদের নিরাপত্তা, বিস্ফোরণ ঝুঁকি ইত্যাদি বিবেচনা করে সেনাবাহিনীর সহায়তা চায়।

ফখরুল আহসান বলেন, সেনাবাহিনী অপারেশনের সম্পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করে। ১৭ পদাতিক ডিভিশন ও বিশেষায়িত কমান্ডো দল পরদিন অভিযান শুরু করে। জানা যায়, ভবনের নিচ তলায় তিন জন পুরুষ ও একজন নারী জঙ্গি বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকসহ অবস্থান করছে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনার আলোকে সেনাবাহিনী অপারেশন পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। অপারেশনের মূলত দুটি প্রায়োরিটি নির্ধারণ করা হয়। প্রথমত, ভবনের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে আনা। দ্বিতীয়ত, জঙ্গিদের নির্মুল করা। প্রথম পর্বটি ছিল ঝুঁকিপূর্ণ।  কমান্ডোরা তাদের জীবন বাঁজি রেখে গত ২৫ মার্চ দুপুরে ৩০ জন পুরুষ, ২৭ জন মহিলা ও ২১ শিশুকে নিরাপদে উদ্ধার করেন।  এ পর্বটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়।

তিনি বলেন, এরপর জঙ্গিদের নির্মুল করার অভিযান শুরু হয়। এ পর্বে কমান্ডোদের পাশাপাশি স্নাইপার দল এপিসিসহ বিশেষায়িত অনেক সদস্য নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করেন। তিন দিন একটানা বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে ২৭ মার্চ বিকেলের মধ্যে চার জন জঙ্গিকে নির্মুল করা হয়। মূলত গতকালই অভিযান শেষ হয়।

তবে আরো বিশদ তল্লাশি ও নিশ্চিত হওয়ার জন্য আজকের দিনটি ব্যবহার করা হয়। সোমাবার (২৭ মার্চ) দুটি মৃতদেহ পুলিশ প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাকি দুটি মৃতদেহ সুইসাইডাল ভেস্টসহ থাকায় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। নিরাপত্তা বিবেচনায় ও পুলিশ প্রশাসনের পরামর্শে সোমাবারই (২৭ মার্চ) সেগুলো বিস্ফোরণ করা হয়। বিস্ফোরণের আগে প্রয়োজনীয় ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করা হয়। সকল কার্যক্রম শেষে আজ বিকেলে ভবনটি ক্রাইম সিন হিসেবে পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয় এবং অপারেশন টোয়াইলাইটের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

ফখরুল আহসান বলেন, অপারেশন টোয়াইলাইট যে কোন ক্রাইসিস মোকাবেলায় সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টার একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, সেনা কর্মকর্তা ছাড়া পুলিশ ও র‌্যাবের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!