• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আ.লীগের কাছে ১০০ আসন দাবি শরিকদের


সোনালী বিশেষ জুলাই ২৫, ২০১৭, ০৪:৪০ পিএম
আ.লীগের কাছে ১০০ আসন দাবি শরিকদের

ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটগতভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো। এবার শত আসনে দরকষাকষি করার টার্গেট নিয়ে কাজ করছেন তারা। এরই মধ্যে কয়েকটি দল তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা নির্বাচনী কাজে যুক্ত আওয়ামী লীগের এমন নেতাদের কাছে জমাও দিয়েছেন।

সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়ার কাজও চলছে। অনেকেই এরই মধ্যে মাঠে নেমে পড়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত সবকিছুই নির্ভর করছে প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের ওপর। প্রত্যাশা বা চাওয়া-পাওয়া যা-ই হোক ১৪ দলীয় জোটের নেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে শরিক দলের নেতারা জানিয়েছেন।

সূত্র জানায়, মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন ১৪ দলীয় জোটের নেতারা। অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি আগামী নির্বাচন নিয়েই সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। বিএনপিকে মোকাবেলায় ১৪ দলের বিকল্প নেই বলে ঐক্যমত্যে জোটভুক্তরা।

জোটের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভেতরে ভেতরে কাজ চললেও শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে এখনও কোনো কাজ শুরু করেনি। ১৪ দলের মনোনয়ন পেতে পারে এমন কয়েকটি শরিক দলের কাছ থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে তালিকা নেয়া হয়েছে যাচাই-বাছাই করার জন্য। বাকি দলগুলোও শিগগিরই তাদের তালিকা জমা দিতে কাজ করছেন।

কারণ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে শরিকদের বলা হয়েছে, যেখানে যে দলের প্রার্থীর অবস্থান ভালো, সেখানে তাকে মনোনয়ন দেয়া হবে। এ বার্তায় শরিক দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীরাও নিজেদের অবস্থান প্রমাণ করতে মাঠে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে যুক্ত একটি সূত্র জানায়, শরিকরা শতাধিক আসন চাইলেও এবার ১৫টি আসন ছেড়ে দেয়ার কথা মাথায় রেখে কাজ করা হচ্ছে।

১৪ দলের শরিক দলগুলোর নেতারা জানান, এবার সংসদে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাতজন এমপি আছেন। এর মধ্যে একজন সংরক্ষিত নারী সদস্য। গত নির্বাচনে চারটি আসনে ১৪ দলের মনোনয়ন পায় ওয়ার্কার্স পার্টি। সবকটিতেই জয় হন তাদের প্রার্থীরা। এর বাইরে এককভাবে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে আরও দুইটি আসনে জয় পায় দলটি।

আগামী নির্বাচনে এ দলটি ৩০টি আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে তাদের টার্গেট থাকবে ১৫ আসন। বর্তমান সাতটির সঙ্গে যশোর, কুষ্টিয়া, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, নাটোরসহ বরিশালের একাধিক আসন মিলিয়ে ১৫টি আসন চাইবে তারা। সে হিসেবে সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ে তা জানানোও হয়েছে বলে দলীয় একটি সূত্রে জানা গেছে।

জানতে চাইলে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন, বর্তমান সংসদে আমাদের সাতজন এমপি আছেন। তবে এবার আমরা ১৫টি আসন টার্গেট করেছি। আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে কাজও শুরু করে দিয়েছেন।

গত নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নেয়া জাসদ এখন দুই ভাগে বিভক্ত। সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরিফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বে একটি অংশ পৃথক জাসদ গঠন করে। এটি জাসদ আম্বিয়া নামে পরিচিত। জাসদের দুই অংশই আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। গত নির্বাচনে অবিভক্ত জাসদ চারটি আসনে ১৪ দলের মনোনয়ন পায়। এর মধ্যে তিনটিতে জয় পায় দলটি। জোটের বাইরে দলীয় মশাল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে আরও দুইটি আসনে জয় পায় জাসদ।

একজন নারী সংসদ সদস্যসহ বর্তমানে সংসদে জাসদের ছয়টি আসন রয়েছে। এদের মধ্যে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদে তিনজন ও আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন জাসদে দুইজন সংসদ সদস্য রয়েছেন। অন্য এক সংসদ সদস্য দল ভাঙার পর এখনও তার অবস্থান স্পষ্ট করেননি। দুই পক্ষের সঙ্গেই তার যোগাযোগ রয়েছে। ফলে এবারের নির্বাচনে দুই জাসদের মনোনয়ন তালিকাতেই ওই সংসদ সদস্যের নাম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রকাশ্যে দলটির নেতারা কিছু না বললেও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে ১৫ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর একটি তালিকা করা হয়েছে। জানতে চাইলে জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, এ নিয়ে এখনও আলোচনা শুরু হয়নি। এটা নিয়ে আলোচনা করার সময় এখনও আসেনি। অন্যদিকে আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন জাসদের প্রার্থী তালিকা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

জানতে চাইলে শরিফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, রোববার আমাদের ন্যাশনাল কমিটির মিটিং শেষ হয়েছে। সেখানে সাংগঠনিক সম্পাদককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা করার জন্য। এবার তার দল ১২ থেকে ১৫টি আসন চাইবে বলেও জানান তিনি।

এবারের সংসদে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি-জেপির দুইজন সদস্য রয়েছেন। গতবার কোনো আসন না চাইলেও এবার তারা ২০ আসন দাবি করবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, আমাদের দলে ১৪ থেকে ১৫ জন সাবেক এমপি আছেন। কিছু নতুন নেতারও জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা এদের মনোনয়ন চাইব।

এবারের সংসদে ১৪ দলের শরিক তরিকত ফেডারেশনের দুইজন সদস্য রয়েছেন। গতবার ১২টি আসন দাবি করে দুইটি আসনে জোটের মনোনয়ন পেয়েছিল দলটি। এবারে দলটির পক্ষ থেকে ৩০ জনের মনোনয়ন চাওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

জানতে চাইলে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভা-ারি বলেন, আমরা যে তালিকা জমা দিয়েছি, তার মধ্যে অন্তত ১২ থেকে ১৫ জন জেতার মতো প্রার্থী রয়েছেন। তারা জোটের মনোনয়ন পেলেই নির্বাচনে জয়লাভ করবেন। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে জোটনেত্রী শেখ হাসিনার ওপর। তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।

দলীয় একটি সূত্র জানায়, তরিকত ফেডারেশনের জমা দেয়া তালিকায় বাগেরহাট, পটুয়াখালী, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, ফরিদপুর, যশোর, রংপুর, লালমনিরহাট, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুষ্টিয়া, পাবনা, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, খুলনা মহানগরসহ আরও কয়েকটি জেলার আসন রয়েছে।

১৪ দলের আরেক শরিক বাসদ গত নির্বাচনে ১৮টি আসন দাবি করলেও একটিতেও মনোনয়ন পায়নি। এবার তারা ১৫ থেকে ২০টি আসন দাবি করবে বলে জানিয়েছেন দলটির আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান। তিনি বলেন, এবার ১৫ থেকে ২০টি আসন চাইব। নেত্রী যে কয়টা দেন।

গণতন্ত্রী পার্টি গতবার পাঁচটি আসন দাবি করলেও একটিতেও মনোনয়ন পায়নি। এবার দলটি ১০টি আসন দাবি করতে পারে। এ পার্টির একাধিক সূত্র জানায়, এরই মধ্যে দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরুর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জোটের মনোনয়ন না পেলেও অন্তত ১০টি আসনে তাদের প্রার্থীরা এককভাবে নির্বাচন করবেন।

গত নির্বাচনে পাঁচটি আসন দাবি করেছিল ১৪ দলের আরেক শরিক ন্যাপ। কিন্তু একটিতেও তারা মনোনয়ন পায়নি। বর্তমান সংসদে তাদের সংরক্ষিত আসনের একজন সংসদ সদস্য রয়েছেন। আগামী নির্বাচনে দলটি পাঁচটি আসন দাবি করতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী দল গত নির্বাচনে তিনটি আসন দাবি করেছিল। কিন্তু একটিতেও জোটের মনোনয়ন পায়নি দলটি। এবার তারা পাঁচটি আসনে মনোনয়ন চাইবে।

জানতে চাইলে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, মনোনয়নের বিষয়ে এখনও জোটগত কোনো আলোচনা হয়নি। আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হলে আমরা পাঁচটি আসন দাবি করব। কমিউনিস্ট কেন্দ্র গত নির্বাচনে তিনটি আসন চেয়েছিল কিন্তু একটিতেও জোটের মনোনয়ন পায়নি। এবার তারা ঢাকা, টাঙ্গাইল অথবা গোপালগঞ্জ থেকে দুইটি আসন দাবি করবে বলে জানিয়েছেন দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক অসিত বরণ রায়। ১৪ দলের সূত্রগুলো জানায়, জোটের অন্য দুই শরিক গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি ও গণআজাদী লীগের পক্ষ থেকেও বেশ কয়েকটি আসন দাবি করা হবে।

এদিকে ১৪ দলের শরিকদের আসন দাবির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইচ্ছামতো আসন চেয়ে লাভ হবে না। বাস্তবতাটা উপলব্ধি করতে হবে। কারণ আগামী নির্বাচন সহজ হবে না। এটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে।

সোনালীনিউজ/জেডআরসি/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!