• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইসলামী ব্যাংকের খেলাপীকে ঋণ দিয়েছিল ফারমার্স ব্যাংক


অর্থনৈতিক রিপোর্ট এপ্রিল ৩, ২০১৮, ১১:২১ পিএম
ইসলামী ব্যাংকের খেলাপীকে ঋণ দিয়েছিল ফারমার্স ব্যাংক

ঢাকা : পোশাক খাতের কোম্পানি নার(এনএআর) সোয়েটার্স এলসির বিপরীতে ৬০ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছিল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের কাছে থেকে। কয়েক বছর পরে তা খেলাপী হয়ে যায়। ইসালামী ব্যাংকে খেলাপী হওয়া এ গ্রাহককে ১৩০ কোটি টার ঋণ দিয়েছিল নতুন প্রজন্মের ফারমার্স ব্যাংক।

সম্প্রতি ওই ঋণও খেলাপী হয়ে গিয়েছে। ঋণ খেলাপীর এ তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জানায়নি ফারমার্স ব্যাংক। উল্টো নার সোয়েটার্স লাভজনক আছে ও ঋণের অবস্থাও ভালো বলে প্রতিবেদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকে।

ফারমার্স ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় এমন ঋণ কেলেঙ্কারীর ঘটনা ঘটেছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে পাওয়া গিয়েছে। ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, খেলাপী হওয়া প্রতিষ্ঠানকে এমন বড় অঙ্কের ঋণ দিতে আলমগীর ও মাহবুববুল নামের ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক দুই পরিচালক তদ্বির করেছেন। এমনকি ঋণ দেয়ার বিষয়ে ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের সদস্যরাও জানতেন না।

বর্তমানে ঋণের ৩৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা আটকে আছে নার সোয়েটার্সের কাছে। আমদানিপত্রের (এলসি) বিপরীতে দেয়া ঋণের ৩৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা কোম্পানিটি পরিশোধ না করলে ফারমার্স ব্যাংককে ওই পরিমাণ টাকা পরিশোধ করে দিতে হবে।

সূত্র জানিয়েছে, নার সোয়েটার্স কোম্পানিটি এর আগে ইসলামী ব্যাংক থেকেও এলসির বিপরীতে ৫০ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছিল। ওই ঋণও খেলাপী হয়ে যায়। ইসলামী ব্যাংক ঋণটি খেলাপী দেখায়। পরবর্তীতে হাইকোর্টে গিয়ে ওই ঋণের উপর স্থগিতাদেশ নিয়ে আসে কোম্পানিটি। একইসঙ্গে আদালত ঋণটিকে খেলাপী না দেখানোর জন্য নির্দেশ দেয়। এভাবে ঋণ খেলাপীর তকমা থেকে বেঁচে যায় প্রতিষ্ঠানটি।

বিষয়টি জানতো ফারমার্স ব্যাংকের কর্মকর্তারা। তারপরও নার সোয়েটার্সকে ঋণ দিয়েছে ফারমার্স ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া গাইড লাইন অনুযায়ী নিজ বা অন্য ব্যাংকের কোনো ঋণ খেলাপী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে ঋণ দেয়া যাবে না।

দুর্নীতির এখানেই শেষ নয়। কোম্পানির নামে হিসাব খোলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ৪৫ কোটি টাকার ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণ অনুমোদন ও টাকা দিয়ে দেয় ব্যাংকটির মতিঝিল শাখা। ঘটনাটি ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি হয়েছে। সাধারণত এতো বড় ঋণের মঞ্জুরি ও টাকা পেতে কয়েকমাস সময় লাগে।

এছাড়ও একটি নাম সর্বস্ব ব্যাগ উৎপাদনকারী কোম্পানিকে ঋন দিয়েছে ৩৬ কোটি টাকা। এরমধ্যে কিছু টাকা পরিশোধও করেছে ফারুক ব্যাগস নামের প্রতিষ্ঠানটি। যদিও ঋণ নেয়ার পরে এখনো কোনো প্রকার ব্যাগ উৎপাদন দেখাতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে ঋণের টাকা কোথায় খরচ হয়েছে।

এরকম নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অ্যাডভান্সড টেকনোলজিস, আবেদা মেমোরিয়াল হাসপাতাল, ইনডেক্স হাউজিং, নাহার ফারমার্স গ্রুপ, অ্যাপোলো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, মল্লিক একুয়াকালচার ফার্ম, মেসার্স প্রেমজয় ম্যাক ট্রেডিং অ্যান্ড বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট কোম্পানিকেও প্রয়োজনীয় জামানত ছাড়াই ঋণ দিয়েছে ব্যাংকটির মতিঝিল শাখা।

এই সব কোম্পানিকে কোনো প্রকার নিয়ম-কানুন না মেনেই ৫০০ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে ফারমার্স ব্যাংক। খেলাপী হওয়ায় এর দায় টানছে পুরো ব্যাংক খাত।

যখন ঋণগুলো বিতরণ করা হয়, তখন ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর। তিনি বর্তমান মেয়াদেও এমপি হিসেবে আছেন। ফারমার্স ব্যাংকের এতো ঋণ অনিয়মের দায় মাথায় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে তিনি পদ ছাড়তে বাধ্য হন গত বছরে।

সোনালীনিউজ/তালেব

Wordbridge School
Link copied!