• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
রোহিঙ্গা নারীর ভয়ঙ্কর বর্ণনা

‘ওরা আমাদের এক এক করে ধর্ষণ করেছে’


আন্তর্জাতিক ডেস্ক নভেম্বর ২৬, ২০১৬, ০২:০৫ পিএম
‘ওরা আমাদের এক এক করে ধর্ষণ করেছে’

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা হাবিবা এবং তার বোনের গণধর্ষণের ঘটনা হাজারো রোহিঙ্গা নারীর কাছেই এখন সাধারণ বিষয় হয়ে গেছে। দেশটির সেনাদের হাতে প্রতিনিয়তই ধর্ষণের শিকার হতে হচ্ছে রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের নারীদের। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য এখন হয়ে উঠেছে নির্যাতনের এক জনপদ।

বর্তমানে বাংলাদেশের একটি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে বাস করছে ২০ বছর বয়সী রোহিঙ্গা নারী হাবিবা। সেনাবাহিনীর ধর্ষণের বর্ণনা দিতে গিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, ‘ওরা প্রথমে আমাদের দুই বোনকে শক্ত করে বিছানার সাথে বেঁধে ফেলে। পরে এক এক করে আমাদের ধর্ষণ করতে থাকে।’

হাবিবার সঙ্গে রাখাইন থেকে পালিয়ে এসেছেন তার বড় ভাই হাশিম উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে প্রায় না খেয়েই আছি। তবে অন্তত আমাদের কেউ মারতে আসছে না, বা নির্যাতন করছে না।’ বোন হাবিবা এবং সামিরাকে (১৮) নিয়ে মিয়ানমারের মুসলিম-অধুষ্যিত রাখাইন রাজ্যের উদাং গ্রামে বাস করতেন হাশিম। চলমান সামরিক অভিযানে দেশটির সেনারা তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। সেইসঙ্গে গণধর্ষণ করেছে হাবিবা ও সামিরাকে।

হাবিবা বলেন, ‘ওরা আমাদের বাড়িগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে। আমার বাবাসহ অনেককে হত্যা করেছে এবং অনেক তরুণীকে ধর্ষণ করেছে। ওদের একজন যাওয়ার আগে আমাদের বলে গেছে, ওই এলাকায় আমাদের পুনরায় দেখলে মেরে ফেলবে। পরে ওরা আমাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়।’

এভাবেই একের পর এক ধর্ষণের অভিযোগ আসছে মিয়ানমারের সেনাদের বিরুদ্ধে। নারীদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত যৌন সহিংসতা চালাচ্ছে তারা। সহিংসতার শিকার হয়ে হাজারো রোহিঙ্গা পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। ইতিমধ্যে মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ‘জাতিগত নির্মূলের’ অভিযোগ এনেছে জাতিসংঘ।

নাফ নদী পাড় হয়ে বাংলাদেশে আসা হাশিম উল্লাহ এবং তার দুই বোন এদেশে প্রবেশের আগে শতাধিক রোহিঙ্গার সঙ্গে চারদিন ধরে একটি পাহাড়ে আত্মগোপনে ছিলেন। পরে নৌকার এক মাঝি তাদের বাংলাদেশে পৌঁছে দিতে রাজি হয়। মিয়ানমার থেকে আসার সময় জমানো ৪০০ ডলার নিয়ে এসেছিলেন তারা, যার পুরোটাই দিতে হয় নৌকার মাঝিকে।

হাশিম জানান, নৌকার মাঝি তাদের ছোট্ট একটি দ্বীপে ফেলে রেখে যায়। সেখান থেকে বহু কষ্টে তারা বাংলাদেশে একটি রোহিঙ্গা পরিবারের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন বলেও জানান তিনি। এমন ঘটনা এখন হাজারো রোহিঙ্গা মুসলিমের জীবনের নিত্য সঙ্গী। গত ৯ অক্টোবরের পর থেকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর যৌন সহিংসতা ছাড়াও নানা ধরনের দমন-পীড়ন শুরু করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। ওই এলাকায় সাংবাদিক প্রবেশও নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ।

রোহিঙ্গা নারীদের বিরুদ্ধে সেনাদের যৌন সহিংসতার ঘটনা এই প্রথম নয়। থাইল্যান্ডভিত্তিক নারী অধিকার সংস্থা ‘ওমেন্স লিগ অব বার্মা’ জানায়, ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত রোহিঙ্গা নারীদের ওপর সেনাবাহিনীর ৯২টি যৌন সহিংসতার অভিযোগ পেয়েছেন তারা। আদিবাসী এই সম্প্রদায়টিকে জাতিগত নির্মূলের লক্ষ্যেই সেনারা ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করে সংস্থাটি।

সোমবার বোন মোহসিনাকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে পাড়ি জমিয়েছেন আরেক রোহিঙ্গা মুজিবুল্লাহ। তিনি জানান, চার সেনা সদস্য মিলে তার বোনকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিল। এরপর তারা পালিয়ে এসেছেন। সেনারা মোহসিনাকে একটি পুকুরে নিয়ে যায়। পরে নিজে অনেক নির্যাতন সহ্য করে বোনকে বাঁচাতে সমর্থ হন মুজিবুল্লাহ।

প্রসঙ্গত, গত ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যের কয়েকটি সীমান্ত ফাঁড়িতে হামলার ঘটনার পর থেকে সেখানে সেনা অভিযান চালাচ্ছে সরকার। ওই এলাকায় সাংবাদিক এবং সাহায্যকর্মীদের প্রবেশও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও মানবাধিকার কর্মীরা অভিযোগ করেছেন, রাখাইন অঞ্চলের মানুষের ওপর মিয়ানমারের সেনারা নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছেন। সেখানকার নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে এবং বাড়িঘরে আগুন দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের।

সোনালীনিউজ/ ঢাকা/ আরএস

Wordbridge School
Link copied!