• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কর ফাঁকি : এনবিআর’র নজরদারিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ২২, ২০১৬, ০৩:৪৬ পিএম
কর ফাঁকি : এনবিআর’র নজরদারিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান

এদেশের অনেক প্রতিষ্ঠানই দীর্ঘদিন ধরেই বেতন-ভাতার হিসাব দেখিয়ে ফাঁকি দিয়ে আসছে। মূলত বেতন-ভাতার খরচ বেশি দেখিয়েই কর ফাঁকি দেয়া হচ্ছে। ওসব প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সেজন্য ইলেকট্রনিক কর শনাক্তকারী নম্বর (ই-টিআইএন) ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারবে না। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান হিসাব বছর শেষে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আর্থিক বিবরণীর সাথে উৎপাদন-সংশ্লিষ্ট শ্রমিক ছাড়া প্রশাসন কিংবা ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর টিআইএন নম্বর জমা দিতে হবে।

টিআইএন ছাড়া বেতন পরিশোধিত হলে তা ব্যয় হিসেবে গ্রহণ করবে না এনবিআর। তাতে চাকরিজীবীদের করের বোঝা বাড়বে না। তবে যারা করযোগ্য শুধুমাত্র তাদের কাছ থেকেই কর আদায় করা হবে। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এনবিআরের নতুন উদ্যোগে কোনো প্রতিষ্ঠান চাইলেই ভুয়া টিআইএন প্রদর্শন করে ব্যয় দেখাতে পারবে না। কারণ কোনো ব্যক্তি ই-টিআইএন নিবন্ধন করলে তা তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভান্ডারের সাথে যুক্ত হয়ে যায়।

ফলে এনবিআর চাইলেই যে কোনো ই-টিআইএনের তথ্য পরীক্ষা করতে পারবে। তাতে কর ফাঁকির সুযোগ কমে যাবে। পাশাপাশি আগামী অর্থবছর ব্যক্তিগত করদাতার সংখ্যা বর্তমান ১২ লাখ থেকে ১৫ লাখে উন্নীত করার এনবিআরের যে লক্ষ্য তা বাস্তবায়নেও এই উদ্যোগ ভূমিকা রাখবে।

সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের অর্থ বিলে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৯৮ সালের ধারা ৩০ সংশোধন করে এনবিআর বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে। তবে কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন আয়কর মুক্ত হলে কোনো কর পরিশোধ করতে হবে না।

তাছাড়া একই অধ্যাদেশ সংশোধনের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের অন্যান্য ভাতায় করমুক্তির সীমাও বাড়ানো হয়েছে। আগামী জুলাই থেকে এ আইন কার্যকর হবে। যদিও সরকারি-বেসরকারি যে কোনো প্রতিষ্ঠানকেই বছর শেষে তাদের হিসাব বিবরণী এনবিআরের কাছে জমা দিতে হয়। তবে এতো দিন প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয়ের হিসাবের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র কর্মীর সংখ্যা ও বেতন স্কেল দাখিল করতো।

কিন্তু এখন থেকে কোনো প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই আর ওই সুযোগ থাকছে না। বরং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় দেখালে কোম্পানিকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ১২ ডিজিটের কর শনাক্তকারী নম্বর জমা দিতে হবে। বেতন-ভাতা বাবদ কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যয় প্রদর্শনের প্রবণতা বন্ধ করতেই এই ধারা যুক্ত করা হয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর ধারা ৩০ সংশোধনপূর্বক নতুন একটি ধারা যুক্ত করে এই বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। জাতীয় সংসদে অর্থবিল পাসের পর যা চূড়ান্ত রূপ নেবে। আগামী জুলাই থেকে সব ধরনের প্রতিষ্ঠানকে এই আইনে বেতন পরিশোধ করতে হবে।

অধ্যাদেশে যুক্ত নতুন (এএএ) ধারায় বলা হয়েছে- যে কোনো প্রতিষ্ঠানকে বেতন বাবদ যে কোনো টাকা পরিশোধে ই-টিআইএন দিতে হবে। কোনো প্রতিষ্ঠান তার বার্ষিক হিসাব বিবরণীতে ই-টিআইএন ছাড়া বেতন পরিশোধ করলে তা অনুমোদন হবে না।

তবে সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বার্ষিক মূল বেতন ২ লাখ ৫০ হাজারের কম হলে তাদের ক্ষেত্রে কর পরিশোধ করতে হবে না। তাছাড়া তাদের অন্যান্য ভাতা বাবদ বার্ষিক করমুক্ত আয় ৪ লাখ ৭৫ টাকার কম হলে কর দিতে হবে না। যা আগে ছিল ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

এদিকে কোম্পানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন- কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ই-টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হলে তা প্রতিষ্ঠানের ওপর বাড়তি চাপ বাড়াবে। কারণ করের আওতার বাইরে থাকা ব্যক্তিদের টিআইএন গ্রহণ ও অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে তা বাড়তি ঝামেলা তৈরি করবে।

তবে কর আইনজীবীদের মতে- দেশের করযোগ্য মানুষের তুলনায় করদাতার সংখ্যা অনেক কম হওয়ায় সব চাকরিজীবীর ই-টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। করযোগ্য নয় এমন চাকরিজীবীদের জন্য তা ঝামেলাপূর্ণ হলেও ভবিষ্যতের জন্য ভালো। কোম্পানিগুলো এনবিআরকে বেতন বাবদ ব্যয় দেখানোর সময় ই-টিআইএন নম্বর প্রদর্শন করতে হলে পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে স্বচ্ছতা আসবে।

অন্যদিকে এই প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের উপদেষ্টা ও কর বিশেষজ্ঞ মঞ্জুর আহমেদ জানান, করের আওতা বাড়াতে সব চাকরিজীবীর জন্য ই-টিআইএন বাধ্যতামূলক করা ইতিবাচক।

তবে প্রতিষ্ঠানকে বেতন পরিশোধে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ই-টিআইএন প্রদর্শন করা একটু কঠিন। অস্থায়ী কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে তা জটিলতা সৃষ্টি করবে। তবে সাময়িক অসুবিধা হলেও দীর্ঘমেয়াদে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলার জন্য এটি ভালো উদ্যোগ। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম

Wordbridge School
Link copied!