• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চরিত্র বদলাচ্ছে বিএনপি-আ.লীগ


হৃদয় আজিজ ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৭, ০৮:৩৭ পিএম
চরিত্র বদলাচ্ছে বিএনপি-আ.লীগ

ঢাকা: ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করেছে দেশের রাজনীতির চিরাচরিত চেহারা। রাজপথে রক্ত নিয়ে আর হলিখেলা নেই। প্রতিপক্ষকে নিয়ে উচ্চবাচ্য কিংবা মাঠ গরম করা নেই। রাজনৈতিক বাকযুদ্ধের ধরনও যাচ্ছে বদলে। কমে আসছে স্বদলীয় নেতাদের ‘ফেরেসতা’ বলার বাতিকও। যেমন যে কোনো সন্ত্রাসীর রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে দলকে পড়তে হচ্ছে প্রশ্নের মুখে। আর আগের মতো অপরাধ করে আইনের ফাঁক গলে বের হতে পারছেন না ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। অপরাধ করলেই যে কাউকে আসতে হচ্ছে আইনের আওতায়। সেটা যে দলেরই হোক না কেন।

তাছাড়া দলীয় রাজনীতিতেও ধীরে ধীরে আসতে শুরু করেছে পরিবর্তন। শত অপরাধ করেও শুধু টাকার বিনিময়ে পদ কেনার প্রবণতাও কমছে। অভিযুক্তদের পদ-পদবী থেকে দূরেও রাখা হচ্ছে। ত্যাগী ও আপদকালীন লড়াকুদের দলে মূল্যায়ন আগের চেয়ে বাড়ছে। এছাড়া জাতীয় যেকোনো ইস্যু নিয়ে রাজনীতির মাঠে ঢিল আর পাটকেল ছোঁড়াছুঁড়ির পাশাপাশি নগ্নভাবে আক্রমণের প্রবণতাও কমে আসছে। শুধু তাই নয়, অতীতমুখী জিকির তুলে একে অপরকে নোংরা আবর্জনায় চুবিয়ে দেয়ার নোংরা চর্চাও কমে এসেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ওয়ান ইলেভেনের পর দেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন এসেছে। এছাড়া ক্ষমতার পালাবদলের যে রীতি দীর্ঘদিন চলমান ছিল তাও হোঁচট খেয়েছে। এখন সরকারের মেয়াদ শেষে জাতীয় নির্বাচন এলেই যে ভোটাররা বিরোধীদলকে সমর্থন বা বেছে নেবেন চিরাচরিত এই প্রবণতারও পরিবর্তন হচ্ছে।

রাজনৈতিক দলের শীর্ষনেতারা উপলব্ধি করতে শুরু করেছেন, আন্তরিকভাবে জনগণের সেবা করলেই কেমন তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন পাওয়া সম্ভব। সেজন্য তাদের দ্বারে দ্বারেই যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। জনগণকে বেকায়দায় ফেলে পার পাওয়া সম্ভব নয়।

বিশ্লেষকরা আরো বলছেন, ওয়ান ইলেভেন ছাড়াও নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোকে। নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা আর বাস্তবতা থেকে শিক্ষা নিয়েই সামনে চলতে হচ্ছে নেতাদের। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতি বদলে যাচ্ছে দারুণভাবে। বিশ্বের এই পরিবর্তিত রাজনীতির সঙ্গে খাপ খেয়ে চলে গিয়ে নিজেদেরও বদলে ফেলতে হচ্ছে। গতানুগতিক ধারার রাজনীতির স্টাইলটা বদলে ফেলতে হচ্ছে।

নিন্দুকেরা বলছেন, সময়ের দাবি, চাপ আর দায়ে পড়েই চরিত্র বদলাতে হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করেছে। অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই তাদের চরিত্র বদলাতে হচ্ছে। একই ভাবে জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে নিজেদের হিমালয় ভেবে অন্ধ হয়ে যাওয়া বিএনপিকেও বিগত এক দশক ধরে চালিয়ে যেতে হচ্ছে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই।

সূত্রমতে, দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি এখন সত্যিই রাজনীতির ঘূর্ণিপাকে পড়েছে। ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেনের রাজনৈতিক বিপর্যয়ের পর এক দশকেও নাজুক পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারছে না। দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের 'ভুল' সিদ্ধান্তে প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদাও হারাতে হয়েছে। নাশকতা-বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় রাজপথেও কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অনুমতি নিতে পারছে না। ৩৮তম বার্ষিকীতে এসে যে চরম রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে রাজনৈতিক ইতিহাসে আগে কখনো এমনটি ঘটেনি।

দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর আপদকালীন সময়ে হাল ধরা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই চরম বৈরী সময় পার করছে নেতাকর্মীরা। দলটির ৩৮ বছরের মধ্যে প্রায় ৩৩ বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন তিনিই। তবে তিনি ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের নামে অসংখ্য মামলা মোকাবিলা, দলে অসন্তোষ দূরীকরণসহ একাদশ নির্বাচন পর্যন্ত রাজনীতির মাঠে টিকে থাকাই এখন মূল লক্ষ্য দলটির।

এমন পরিস্থিতিতে সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যুতে বেশ উদার দৃষ্টিভঙ্গির হতে দেখা গেছে দলটিকে। নিভুল সিদ্ধান্তে এগিয়ে যাওয়া চেষ্টা করছে। বিতর্ক কিংবা নতুন আলোচনা বা সমালোচনার খোরাক হতেও চাচ্ছে না দলটি। রাজনৈতিক চরিত্রের এই বদলকে শুধু স্বদলীয় নেতারাই নয়, প্রতিপক্ষই রাজনৈতিক দলের নেতারাও দেখছেন ইতিবাচক দৃষ্টিতে।

অপরদিকে, উপমহাদেশের প্রাচীন ও দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও এসেছে পরিবর্তন। দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষাসহ জনকল্যাণমুখী কাজে আত্মনিয়োগ করতে নেতাকর্মীদের বার বার তাগাদা দেয়া হচ্ছে। অন্যায় কাজের জন্য কঠোর শাস্তি পেতে হবে বলেও সতর্ক করে দিচ্ছেন শীর্ষ নেতারা।

দলটির কুড়িতম জাতীয় সম্মেলনে পর দলীয় প্রধানসহ শীর্ষ নেতারা কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। দলের ভেতরেও কঠোর অবস্থান নেয়া হচ্ছে। কোনো নেতাকর্মী অন্যায়-অনিয়মের সঙ্গে জড়িত হলে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়া হয়েছে কারো ব্যক্তিগত দায়ভার দল বহন করবে না।

অন্যায়-অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার দৃষ্টান্ত ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে দেখা গেছে। জাতীয় সম্মেলনের পর এক মাস পেরুতে না পেরুতেই কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী এ দলটি।

রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি আর দুর্বৃত্তায়নের কবলে পড়া সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমতাসীন দলের এ দৃষ্টান্ত স্বস্তিদায়ক হলেও কেউ কেউ এটাকে দেখছেন ভিন্নদৃষ্টিতে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিগত সময়ে স্থানীয় বিভিন্ন নির্বাচনে নানা অভিযোগ ওঠায় সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে আওয়ামী লীগকে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওইসব অভিযোগ এড়াতে কৌশল প্রয়োগে নেতাকর্মীদের নির্বাচনমুখী করা হচ্ছে।

তবে সাম্প্রতিক নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন অনেকেই। এর মধ্যে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল থেকে অর্ধেকের বেশি সমর্থন আদায় করতে পেরেছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার ক্ষেত্রে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। বিরোধী ও প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিয়ে আসার এ উদ্যোগকে জনগণ ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। প্রতিপক্ষ বৃহৎ রাজনৈতিক। দলও তাদের গতানুগতিক বিরোধিতা স্টাইল পরিবর্তন করে এগিয়ে যাচ্ছে।

ক্ষমতার রাজনীতির এ দেশের বৃহৎ ও জনপ্রিয় দুই দলের রাজনৈতিক চরিত্রের ইতিবাচক পরিবর্তনের মধ্যেই রয়ে গেছে জনগণের প্রকৃত কল্যাণ ও দেশের সমৃদ্ধি। এমনটাই মনে করছেন সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক বিশ্বেষকরা।

সোনালীনিউজডটকম

Wordbridge School
Link copied!