• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁদা না দেয়ায় পুলিশ-গ্রামবাসী সংঘর্ষ, আহত ১৫


গাজীপুর প্রতিনিধি মার্চ ২৫, ২০১৭, ১০:১৯ পিএম
চাঁদা না দেয়ায় পুলিশ-গ্রামবাসী সংঘর্ষ, আহত ১৫

ফাইল ছবি

গাজীপুর: জেলার কালীগঞ্জে দাবিকৃত চাঁদা না দেয়ার জেরে পুলিশ ও গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশের দুই এসআইসহ ৬ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। একই ঘটনায় পুলিশের ছোড়া গুলি ও লাঠিচার্জে ৯ গ্রামবাসী আহত হয়েছেন।

শনিবার (২৫ মার্চ) সকালে দড়িপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশের ভয়ে সকাল থেকে ঘটনাস্থলের গ্রামসহ আশপাশের গ্রাম পুরুষ শূণ্য হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে আহত এসআই জামিল উদ্দিন রাশেদ বাদী হয়ে গ্রামবাসীকে আসামী করে কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলম চাঁদ।

আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন- কালীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক জামিল উদ্দিন রাশেদ ও আমিনুর রহমান, কনস্টেবল জিয়াউর রহমান, নজরুল ইসলাম, মো. মনির হোসেন ও আনসার মনির হোসেন। অন্যদিকে আহত গ্রামবাসীরা হলেন- উপজেলা তুমলিয়া ইউনিয়নের দড়িপাড়া গ্রামের দীনেশ রোজারিও’র ছেলে হৃদয় রোজারিও, অমল রোজারীও’র ছেলে অনিক রোজারিও, জেবিয়ার রোজারিও’র ছেলে প্লাসিড রোজারিও ও সুবল রোজারিও’র ছেলে রাজীব রোজারিও, অনীল দরেশের স্ত্রী ধ্বনি দরেশ, অরুন দরেশের স্ত্রী মন্দিরা দরেশ। বাকী তিনজনের নাম জানা যায়নি।

দড়িপাড়া গ্রামের মৃত বিমল দরেশের স্ত্রী মিনা ক্রুশ জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কালীগঞ্জ থানার এসআই জামিল উদ্দিন রাশেদ ও আমিনুর রহমান সঙ্গীয় তিন কনেস্টেবল ও এক আনসার সদস্য নিয়ে সাদা পোষাকে তার বাড়ীতে অভিযান চালায়। পরে মিনা ক্রুশের ঘরে জোর পূর্বক প্রবেশ এবং এই বাড়ীতে মাদক বিক্রি হয় বলে তার কাছে চাঁদা দাবি করে তারা। এ সময় তারা নিজেদের থানার লোক বলে পরিচয় দেয়। তাদের গায়ে পুলিশের পোষাক না থাকায় ও পরিচয়পত্র দেখাতে ব্যর্থ হলে বাড়ীর লোকজন তাদের অবরুদ্ধ করেন। এক পর্যায়ে গ্রামবাসীর সাথে পুলিশের দস্তাদস্তির সময় ওই দুই এসআইসহ ৬ পুলিশ সদস্য আহত হয়। পরে স্থানীয়রা বিষয়টি জানিয়ে থানায় খবর দেয়। খবর পাওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যে অবরুদ্ধ পুলিশ সদস্যদের ছাড়িয়ে নিতে থানার ২০-২৫ জন পুলিশ সদস্য এলাকাবাসীর উপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় পুলিশের লাঠিচার্জ ও ছোড়া গুলিতে ৯ গ্রামবাসী আহত হয়।

মিনা ক্রুশ আরও জানান, অবরুদ্ধদের মুক্ত করে আনার সময় থানা পুলিশ গ্রামবাসীকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। যে কারণে আহত পুলিশ সদস্যরা স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিলেও পুলিশের ভয়ে আহত গ্রামবাসী ঢাকার বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি রয়েছে। পুলিশের এমন কর্মকান্ডে তারা বর্তমানে আতঙ্কিত ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও জানান তিনি। যে কারণে এ ঘটনার পর পুলিশের ভয়ে শনিবার সকাল থেকে দড়িপাড়া গ্রামসহ আশপাশের গ্রাম পুরুষ শূণ্য রয়েছে।  

এদিকে ৬ পুলিশ সদস্য আহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক কবির আহমেদ। তিনি জানান, আহত অবস্থায় হাসপাতালে ৬ পুলিশ সদস্য চিকিৎসা সেবা নিয়েছে। তবে এদের মধ্যে জিয়াউর রহমানের অবস্থায় গুরুতর ছিল।

গ্রামবাসী আহতের বিয়ষটি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য দিলিপ কস্তা। দিলিপ কস্তা জানান, পুলিশ হচ্ছে জন সাধারণের জান-মালের নিরাপত্তার জন্য। তারা যদি এই ধরণের ঘটনা ঘটায় তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? তিনি আরো জানান, শুনেছি উল্টো নিরিহ গ্রামবাসীকে আসামী করে কালীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।

এ ঘটনার পর স্থানীয়ভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেজবুকে পুলিশকে নিন্দা জানিয়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। কেউ কেউ আবার বলছে পুলিশ সুপার হারুণ-অর-রশিদ পিপিএম (বিপিএম বার) এর মাদকমুক্ত গাজীপুর গড়ার মহৎ উদ্যোগটি কিছু অর্থলোভী পুলিশ কর্মকর্তার কারণে ভেস্তে যেতে চলেছে।

স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, কালীগঞ্জ থানার এসআই রেজাউল করিম পুলিশের এক বড় কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে থানার আরও দুই এসআই জামিল উদ্দিন রাশেদ ও আমিনুর রহমানকে সাথে নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন মাদক স্পট থেকে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আর এ সমস্ত কারণে পুলিশের সাথে সাধারণ মানুষের প্রায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।

সূত্র আরো জানায়, উপজেলার নাগরী ও তুমলিয়া ইউনিয়নটি হচ্ছে খ্রীস্টান অধ্যসিত এলাকা। নিজেদের ভোগ বিলাসের জন্য তারা চোলাই মদ তৈরী করে থাকেন। আর এই রীতি বহু পুরনো দিনের। এই সুযোগে অতি সম্প্রতি উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের গলান গ্রামে এসআই রেজাউল করিম ও জামিল উদ্দিন রাশেদ চোলাই মদ তৈরীর এক বাড়ীতে অভিযান চালায় এবং চাঁদা দাবি করে। তখন এলাকাবাসী তাদের আটক করে থানায় খবর দেয়। এ ঘটনার পর থানা পুলিশ তাদের মুক্ত করে আনেন। পরে ওই পুলিশ সদস্যরা উল্টো গ্রামবাসীর নামে মামলা দায়ের করে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পঙ্কজ দত্ত জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে থানা পুলিশ মাদক অভিযানে যায়। ওখানে কিছু মাদকাসক্তদের সাথে পুলিশের কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তাদের সাথে হাতাহাতি হয়। এ সময় এলাকাবাসী ডাকাত বলে চিৎকার করলে তারা পুলিশের উপর হামলা চালায়। পরে তিনিসহ থানার ওসি মো. আলম চাঁদ, সেকেন্ড অফিসার মুজিবুর রহমান ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!