• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চীনের স্বপ্ন ‘সোনার বাংলার’ সঙ্গে নিবিড় সংহতি


মেহেদী হাসান/সুজন আকন, নিউজরুম এডিটর অক্টোবর ১৪, ২০১৬, ১০:৫১ পিএম
চীনের স্বপ্ন ‘সোনার বাংলার’ সঙ্গে নিবিড় সংহতি

ঢাকা: চীন বাংলাদেশের সম্পর্কের বয়স আড়াই হাজারেরও বেশি। প্রাচীন ‘দক্ষিণ সিল্ক রোড’এর মাধ্যমে গড়ে ওই সম্পর্কের নিদর্শন বিভিন্ন জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। চীনের রাজকীয় দূত ঝাং কিয়ান, বৌদ্ধ পুরোহিত ফা জিয়ান এবং হু এন সাং বাংলা ভ্রমণ করেন পুরনো দক্ষিণ সিল্ক রোড ধরে। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দী থেকে শুরু করে ২২১ সাল পর্যন্ত কার্যকর থাকা ওই রোড চীনের ইউনান থেকে মিয়ানমার হয়ে চট্টগ্রামকে যুক্ত করেছিল। বাঙালি পুরোহিত অতীশ দীপঙ্কর চীনে যান ১০৩৪ সালে।

১৩০০ সালের দিকে আরবদের মাধ্যমে পাওয়া জাহাজ প্রকৌশল, কম্পাস, সমুদ্র মানচিত্র চীনাদের আকৃষ্ট করে নিয়ে আসে বাংলায়। সোনারগাঁর সুলতান জিয়াসউদ্দিন আজম শাহ (১৩৯০-১৪১২) মিং রাজা ঝু দির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। এ সময়ে দুই রাজ্যের মধ্যে শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। এ সম্পর্কের রেশ ধরে দুই পক্ষের মধ্যে অর্থনৈতিক লেনদেন চলে দীর্ঘকাল।

১৬০০ সালের দিকে ব্রিটিশ শাসনামলে চীনের সঙ্গে বাংলা তথা ভারতবর্ষের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এমনকি ব্রিটিশরা যখন ভারত ছেড়ে চলে যায় তার পরেও ভারত-পাকিস্তানকে ব্রিটিশদের ‘হাতের পুতুল’ হিসেবে বিবেচনা করতো চীনারা। আর চীনের সঙ্গে তৎকালীন পাকিস্তানের সম্পর্ক তৈরি হয় বাঙালিদের হাত ধরেই।

এ সম্পর্কের মূলে ছিলেন বগুড়ার মোহাম্মদ আলী, মাওলানা ভাষানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীরা। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথমে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আতাউর রহমান খান এবং প্রাদেশিক শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালে চীন সফর করেন। একই বছর বাংলাদেশ সফরে আসেন চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই। তবে শেখ মুজিবুর রহমান কিন্তু এর আগে ১৯৫২ সালে চীন সফর করেছিলেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্য স্থাপনের আকাঙ্ক্ষায় মধ্যপ্রাচ্যসহ দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্রাজ্যবাদী নীতি কার্যকর করার চেষ্টা করে। এসময়ই ঘটে সেই দ্বি-মেরুকরণ প্রক্রিয়া। চীন ঝুঁকে পড়ে ব্রিটিশবিরোধী মনোভাবের ভারতের দিকে। আর একই সঙ্গে ব্রিটেনের সহচর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। পরবর্তীতে চীনারা ভারতীয় সমাজের সমাজতান্ত্রিক ধ্যানধারণার অনুকূলে থাকা সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। 

তবে ভূ-রাজনীতির কারণেই হোক না কেন আত্মনিমগ্ন চীনের সঙ্গে শেষ অবধি সোভিয়েত ইউনিয়নের সেই সম্পর্ক পড়ে যেতে থাকে। তৈরি হয় বৈরি মনোভাব। এদিকে, ভারতকে না পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রও জড়িয়ে পড়ে পাকিস্তানের সঙ্গে। এর মধ্যে চীনের সঙ্গে ভারতের দূরত্ব বাড়তেই থাকে। শেষ অবধি ভূ-রাজনৈতিক কারণেই চীনের কাছাকাছি চলে আসে পাকিস্তান। আর চূড়ান্তভাবে, একাত্তর সালে এসে পাকিস্তানের হাত ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভিত (‘পিংপং ডিপ্লোম্যাসি’) গড়ে চীন।

চীন-আওয়ামী লীগ: মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানের পক্ষে নেয়া, বঙ্গবন্ধু হত্যার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেয়ার ঘটনায় এমনিতেই চীনের ওপর ক্ষোভ ছিল। এর ওপর ভেটো দিয়ে জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ আটকে দেয়ার কারণে দুদেশের মধ্যে প্রকাশ্যে শীতল সম্পর্ক দেখা যায়। বিশেষ করে শেখ হাসিনার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় চীনের।

তবে এ কথাও স্মরণ করা প্রয়োজন, প্রাথমিক পর্যায়ে কিন্তু বাংলাদেশের উপর পাকিস্তানের সামরিক আগ্রাসন পছন্দ করেনি চীন। যুদ্ধ শুরুর পরে এপ্রিল মাসে আইয়ুব খানকে চিঠি লেখেন তৎকালীন চীনা প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই। চিঠিতে পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে পাকিস্তান সে পরামর্শ তোয়াক্কা করেনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে চীনের শত্রু সোভিয়েত ইউনিয়ন আর ভারতের সমর্থন থাকলেও চীন বেশিদূর অগ্রসর হয়নি।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, বৈরিতা নয়’ পররাষ্ট্রনীতির কারণে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করেন। প্রকাশ্য রাজনৈতিক আলোচনায় চীনের সমালোচনা না করাই তার বড় প্রমাণ। বঙ্গবন্ধুর নানা প্রচেষ্টার প্রতিক্রিয়ায় চীন পজিটিভি সাড়া দিয়ে বাংলাদেশনীতির পরিবর্তনও করে।

চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের সময় চীন থেকে খাদ্য সহায়তা পাঠানো হয়। ক্যান্টন বাণিজ্য মেলায় বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায় তারা। স্বাক্ষরিত হয় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে ‘সিমলা চুক্তি’। এরপরেই চীন জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের বিরুদ্ধে দেয়া ভেটো তুলে নিলে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। এ ছাড়াও চীন সে সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্যপদ অর্জনের জন্য বাংলাদেশকে সাহায্যও করে।

সম্পর্ক উন্নয়নে শেখ হাসিনা: ১৯৯৩ সালে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলের নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা চীন সফর করেন। এই সফরকে ‘বরফগলা সফর’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। এর তিন বছর পর (১৯৯৬) প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার তিন মাসের মধ্যে প্রথম বিদেশ সফরে চীন গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। এ দুই সফরের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সঙ্গে চীনা শাসক দল কমিউনিস্ট পার্টির সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করে। ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠনের সময় আন্তর্জাতিক সম্পর্কগুলো অনেক বদলে গিয়েছে।

চীন-বিএনপি: আদর্শ আর রাজনৈতিক কারণে এক পর্যায়ে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পেছনে রয়েছেন মাও সেতুংয়ের অনুসারী মাওলানা ভাসানী। তার সঙ্গে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ছিল গভীর সম্পর্ক। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর ভাসানী সমাজতান্ত্রিক দল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করে আওয়ামী লীগ থেকে দূরে সরে যান।

বলা প্রসঙ্গিক, স্বাধীনতার পর মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তিগুলো ভাসানীর ছায়াতলে বাংলাদেশে রাজনীতি করার চেষ্টা করে। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধীরা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে ও ভারতবিরোধী অবস্থান নিয়ে ভাসানীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে। তারা এসময় চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। এ সূত্র ধরেই চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় ও এদেশে দূতাবাস স্থাপন করে। 

মূলত, পঁচাত্তর পরবর্তী চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন তখনকার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। দীর্ঘ সময় ধরে এ সম্পর্ক সংহত ছিল। তবে তা হোঁচট খায় ২০০১ সালে এসে। সে সময় বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় ঐক্যজোট ক্ষমতায় আসার পর তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে। ক্ষমতাসীন বিএনপি দুই চীন নীতি অবলম্বন করে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনে।

অভিযোগ রয়েছে, নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থে সেদিন যারা দুই চীন নীতি অবলম্বন করেছিলেন তারা অনেকেই এখন বিএনপির নীতিনির্ধারকের দায়িত্ব পালন করছেন।

বলা বাহুল্য, চীন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তাইওয়ানের ‘স্বাধীন রাষ্ট্র’ গঠন করার দাবি বহু পুরোনো। তবে চীন বরাবরই তাইওয়ানকে তাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ঘোষণা করে আসছে। সে কারণেই তাইওয়ান ইস্যুটি তাদের কাছে খুবই স্পর্শকাতর। কিন্তু ২০০১ সালে ক্ষমতায় থাকাকালীন বিএনপি জোট তাইওয়ানকে ‘স্বাধীন রাষ্ট্র’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এমনকি ঢাকায় তাইওয়ান কনস্যুলেট অফিসও খোলা হয়। এ ঘটনা চীন তাদের সার্বভৌমত্বের ওপর হস্তক্ষেপ বলে মনে করে। সে কারণে ঢাকায় তাইওয়ানের কনস্যুলেট অফিস খোলার তীব্র বিরোধিতা করে। মূলত, তখন থেকেই বিএনপির ওপর ক্ষিপ্ত চীন। এ কারণেই চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কেরও অবনতি ঘটে। তখন দেশে-বিদেশে ও বিএনপির ভেতরে বাইরে এই ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে।

কেউ কেউ অভিযোগের আঙুল তোলেন তখন রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের দিকে। যদিও শেষবার নতুন করে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিল বিএনপি। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে তাই ২০১০ ও ২০১২ সালে বেইজিং সফরে যান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দু’দফায় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেন। কিন্তু এরপরও চীন-বিএনপি সম্পর্কের বরফ গলেনি। এর প্রমাণ দেখা গেছে, গেল ২০১৫ সালের মে মাসে। চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী লিউ ইয়ান বাংলাদেশ সফরে এলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার দেখা পাননি।

বর্তমান প্রেক্ষাপট: চীন আর যুক্তারাষ্ট্রের মধ্যে সেই সুসম্পর্ক আর নেই। বরং তারা একে অপরের শত্রু! সেই নব্বই সালে ভেঙে গেছে সোভিয়েত ইউনিয়ন। রাশিয়া এখন চীনের শত্রু নয়, সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বন্ধু। সেই মনমোহন সিংয়ের প্রথম দফার ভারত সরকার কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা ইস্যুতে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করেছে। তবে ফল ভালো হয়নি। দ্বিতীয় দফায় সরকারের সঙ্গেও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ততটা মধুর ছিল না। ‘ব্রিকস’ গঠন করে এখন অনেক কাছাকাছি চলে এসেছে চীন আর ভারত।

ব্রিকস ভিত্তিক চীন-ভারতের এই অবস্থান বাংলাদেশের জন্য সুবিধাজনক হয়। শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতার বিরুদ্ধে এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছেন। এতে রাশিয়ার সমর্থন ছিল ষোলো আনা। শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে চীন বাংলাদেশে যে পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে তার সমপরিমাণ আর কখনও করেনি।

কূটনীতিতে ‘চিরশত্রু’ বা ‘চিরবন্ধু’ বলে কিছু নেই। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময়ে চীনের অবস্থান মানবিক ছিল না- শেখ হাসিনা সরকার এটা বিবেচনায় রেখেই চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন করেছে। মূলত, শত্রুকে বন্ধুতে পরিণত করার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত কূটনৈতিক সার্থকতা। এর ফলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শক্তি বৃদ্ধি পায়।

ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড: বিশ্বপরিসরে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক শক্তি চীন তার শক্তিকে ধরে রাখার পাশাপাশি আরো সংহত করতে গড়ে তুলতে চাইছে বাণিজ্যিক যোগাযোগের এক নতুন ধারণা। যাকে বলা হচ্ছে- ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’। এটিকে দক্ষিণ এশিয়ার পুরনো সিল্ক রোডের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ বলা হলেও চীন সরকারের দাবি, এই ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ আসলে বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মস্তিষ্কপ্রসূত একটি বাণিজ্যিক ধারণা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এবারের ঢাকা সফরের মূল বিষয়ই হচ্ছে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’। আর এই বৃহত্তম কানেকটিভিটির উদ্যোগে চীন ও বাংলাদেশসহ ৩০টির বেশি দেশ যোগ দিয়েছে। এর মাধ্যমে এশিয়ার মধ্য দিয়ে চীনের সঙ্গে ইউরোপের যোগাযোগ স্থাপন করা হবে। আর বাংলাদেশ হবে এই সিল্করুটের কেন্দ্র। ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং চীনের সঙ্গে সড়ক পথে সংযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মধ্যমণি। ভারতের পূর্ব অংশ, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার এবং চীনের বেশ কিছু অংশের পণ্য পরিবহণের জন্য চট্টগ্রাম এবং পায়রাবন্দর বেশ উপযোগী।

বাংলাদেশকে শুধু সাবধান থাকতে হবে নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রে। ভারতকে ঝুঁকিতে ফেলে চীনের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধির কোনো প্রয়োজনও নেই বাংলাদেশের। এ দিক থেকেও বাংলাদেশ রয়েছে সুবিধাজনক অবস্থানে।

বলা ভালো, তিন দশক ধরে জমা চীনের কয়েক ট্রিলয়ন ডলারের বেশির ভাগ অর্থ জমা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপের রাষ্ট্রীয় বন্ডে। এ থেকে চীনের আয় হয় খুবই সামান্য। বলা যায় শূন্য শতাংশের কাছাকাছি। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ অধিক লাভজনক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা প্রয়োজন দেশটি। এই প্রয়োজনের কথা বিবেচনায় রেখে চীনা প্রেসিডেন্টের সফরের আগেই বাংলাদেশ কারখানা স্থানান্তরের জন্য এবং চীনা ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত করা শুরু করেছে ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’।

চীনা রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য অবকাঠামো নির্মান প্রকল্পের বিরাট তালিকা প্রস্তুত রেখেছে বাংলাদেশ। যার অর্থমূল্য ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। চীন সেসব প্রকল্পেই বিনিয়োগ করবে যা বাস্তবায়ন করার সামর্থ রাখে বাংলাদেশ। কত বড় অংকের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেল তা বড় কথা নয়। কত বেশি এবং কত দ্রুত তা কাজে লাগানো যাবে তার ওপরেই নির্ভর করবে বাংলাদেশের এগিয়ে চলা। 
আর্থসামাজিক এবং রাজনৈতিক যে অবস্থা বাংলাদেশে বিরাজ করছে সেটাকে এগিয়ে নিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করতে অবকাঠামো আর শিল্পে বিনিয়োগ দরকার। এই দরকারি বিনিয়োগ করতেই চায় চীন।

বাংলাদেশ সফরে আসা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের দেয়া বিবৃত্তিতে সে বিষয়টিই উঠে এসেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ৪১ বছর ধরে বিদ্যমান বাংলাদেশ-চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। চীনের স্বপ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের স্বপ্ন ‘সোনার বাংলার’ সঙ্গে নিবিড় সংহতির মাধ্যমে পুরো চীনকে তেজোদীপ্ত করা।

সোনালীনিউজ/এমএন

Wordbridge School
Link copied!