• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট

জনগণের উপর করের বোঝা বাড়ছে


অর্থনৈতিক প্রতিবেদক এপ্রিল ২৭, ২০১৭, ০১:৩৫ পিএম
জনগণের উপর করের বোঝা বাড়ছে

ঢাকা : আসন্ন বাজেট আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান আমলের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। ৪ লাখ ২৭০ কোটি টাকার বিশাল এ বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও ধরা হচ্ছে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড়। আসন্ন বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৭১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। এটি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় ২৯ শতাংশ বেশি।

আগামী অর্থবছরে সরকার ৪ লাখ কোটি টাকারও বেশি যে বাজেট দিতে চায়, তার সিংহভাগ জোগান দেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আর রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস হবে ভ্যাট। অর্থাৎ জনগণের ওপর করের বোঝা আরও বাড়ছে। বিশেষ করে রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে সরকারের সবচেয়ে বড় টার্গেট হচ্ছে নতুন ভ্যাট আইন। অর্থ মন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চলতি অর্থবছর বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে কর রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ১০ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। পরে অবশ্য সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে করা হয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ১০ দশমিক ৭ শতাংশ। আর সংশোধিত বাজেটে এনবিআর কর রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৯ দশমিক ২ শতাংশ।

যদিও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বরাবরই সংশয় প্রকাশ করে এসেছেন অর্থনীতিবিদরা। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) মতে, অর্থবছর শেষে রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি থাকবে ৪০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। আইবাসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ৪৪ দশমিক ৯ শতাংশ। যেখানে কর রাজস্ব আদায় হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার ৪৫ দশমিক ১ শতাংশ। আর করবহির্ভূত রাজস্ব আদায় হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ। এতকিছুর পরও সরকার আবারও উচ্চভিলাষী রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরতে যাচ্ছে।

আসন্ন বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ২ লাখ ৭১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১২ দশমিক ২ শতাংশ। এর মধ্যে এনবিআর কর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৩৬ হাজার ২০ কোটি টাকা। আসন্ন বাজেটের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬০ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা বেশি। আসন্ন বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত কর রাজস্ব ধরা হতে পারে ৮ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে যা ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আসন্ন ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে করবহির্ভূত রাজস্ব ২৭ হাজার কোটি টাকা ধরা হতে পারে। সংশোধিত বাজেটে এটি ২৪ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের ৭ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা। এটি আগের অর্থবছর থেকে ১৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। আগের অর্থবছর একই সময় আদায়ের পরিমাণ ছিল ৯১ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ৪ মাসে এনবিআর’কে ১ লাখ কোটি টাকার ওপর রাজস্ব আদায় করতে হবে। লক্ষ্য অর্জন অবাস্তব হলেও আসন্ন বাজেটে এর প্রতিফলন ঘটছে না।

আসন্ন বাজেটে বিশাল লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারের প্রধান ভরসা হবে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করে ভ্যাট আদায়। নতুন আইনে ৪ হাজার ৮০০ পণ্যে ১৫ শতাংশ মূসক আরোপিত হবে। আইনটি বাস্তবায়িত হলে প্রথম বছরের পরের ৩ বছরে মূসক থেকে রাজস্ব আদায় চার থেকে পাঁচগুণ বাড়বে। মূসক আদায় বাড়লে আয়করও বাড়বে।

অর্থনীতিবিদ ইব্রাহিম খালিদ এ প্রসঙ্গে বলেন, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা যে যে খাতগুলোতে নির্ধারন করা হচ্ছে, তাতে করে জনগনের উপর করের বোঝা বাড়বে এটা স্বাভাবিক। তবে এও সত্য সকলকে করের আওতায় নিয়ে আসতে পারলে সংশ্লিষ্ট জায়গাগুলোতে দায়বদ্ধতা বাড়বে। তবে বাজেট প্রণয়নের পরেই কি ধরনের প্রভাব পড়বে তা বলা যাবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!