• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
রোহিঙ্গা সঙ্কট

ঢাকা-নেইপিডো চুক্তি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের শঙ্কা


কূটনৈতিক প্রতিবেদক জানুয়ারি ২০, ২০১৮, ০১:১০ পিএম
ঢাকা-নেইপিডো চুক্তি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের শঙ্কা

ঢাকা : বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি নিয়ে শঙ্কা জানিয়েছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ঢাকা-নেইপিডো চুক্তির একদিন পর এসব সংস্থা বলেছে, এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া রোহিঙ্গাদের আরো বিপদের মুখে ঠেলে দেয়ার শামিল।

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, আঞ্চলিক রাজনীতির নানা বিবেচনায় বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যা দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধানের চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে এ সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের ওপর চাপ বজায় রাখতে আন্তর্জাতিক সমাজের সমর্থন চায় ঢাকা। দ্বিপক্ষীয় এ চুক্তি নিয়ে শঙ্কা থাকলেও বিশ্ব সম্প্রদায় সঙ্গে থাকবে বলে আশা ঢাকার।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ শরণার্থী-বিষয়ক জাতিসংঘের এজেন্সি ইউএনএইচসিআরকে পাশ কাটিয়ে এ চুক্তি করায় শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে তিনি বলেন, এটি কোনো চুক্তিই না। আমরা বিশ্বাস করি, (রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন) অপারেশন যাতে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে চলে তা নিশ্চিত করার জন্য এ প্রক্রিয়ায় ইউএনএইচসিআরকে যুক্ত রাখতে হবে। এ চুক্তির বিষয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী-বিষয়ক সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করা হলেও চুক্তিতে অংশীদার করা হয়নি।  

অ্যান্তোনিও আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়া হতে হবে স্বেচ্ছায় এবং তাদের অবশ্যই আদি বাড়িতে ফিরে যেতে দিতে হবে। তাদের কোনো আশ্রয় শিবিরে রাখা যাবে না। এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করা অত্যন্ত প্রয়োজন। তা না হলে এটি হবে সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয়।

অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বক্তব্যে বলেছে, এই প্রত্যাবর্তন বেশিই তাড়াতাড়ি (প্রিম্যাচিউর)। এ ছাড়া জোর করে তাদের প্রত্যাবর্তন করানো হবে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। সংস্থাটির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক পরিচালক জেমস গোমেজ বলেন, রোহিঙ্গাদের মনে ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতনের স্মৃতি এখনো পুরনো হয়নি। তাই তাদের ফেরত পাঠানোর সময় আসেনি। এ ছাড়া স্বেচ্ছায় যেতে চাইলেই শুধু কাউকে পাঠানো হবে-এমন কথাও এতে বলা হয়নি। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা না বলে প্রত্যাবাসনের সময়সীমা ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

গতকাল সৌদি আরবের সরকারি পত্রিকা সৌদি গেজেটের এক সম্পাদকীয়তে এ চুক্তিকে ভয়াবহ বিপজ্জনক চুক্তি হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে চূড়ান্ত চুক্তি আদৌ কোনো চুক্তি নয়। এই চুক্তি বাতিল করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবশ্যই চাপ দেওয়া উচিত। এ চুক্তিতে বিরাট ও চরম বিপজ্জনক ফাঁক (হোল) রয়ে গেছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো চুক্তির কোথাও ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি। উপরন্তু তাদের ‘রেসিডেন্টস’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাদের মিয়ানমারের ‘সিটিজেনস’ বা নাগরিক বলা হয়নি। অথচ তারা মিয়ানমারে প্রজন্মের পর প্রজন্মে ধরে বসবাস করে আসছেন। খুবই বিস্ময়কর বিষয় হলো, বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গা মুসলিমদের মধ্যে এ বিষয়ে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হতাশাজনক।

ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, এ চুক্তি একটি খারাপ চুক্তি। তাদের মতে, অতি তাড়াতাড়ির কারণে যেকোনো কিছুই খারাপ ফল বয়ে আনে। তবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমরা আমাদের দিক থেকে এ চুক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি। কারণ একটি কাঠামোর মধ্য দিয়ে দ্রুত বাংলাদেশ একটি প্রত্যাবাসন শুরু করতে চেষ্টা করছে। তবে আন্তর্জাতিক সমাজের পক্ষ থেকেও তারা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তাও যুক্তিযুক্ত।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিচ্ছি। এটা আমাদের প্রায়োরিটি। তবে যারা যাবে তাদের বিষয়ে যুক্তি থাকছে, নিরাপত্তা ও অধিকারের বিষয়গুলো সুনিশ্চিত করা। তবে আমি মনে করি আন্তর্জাতিক সমাজের মিয়ানমারের ওপরও অব্যাহত চাপ রাখা জরুরি। তবে বর্তমানে আন্তর্জাতিক সমাজের যে প্রতিক্রিয়া, তা তারা ঠিকই করছে।’

হুমায়ুন কবির বলেন, ‘তবে এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে, আমরা সাক্ষাৎ সমস্যায় ভুগছি। এই লোকজন যদি ফেরত যাওয়ার পর তা টেকসই না হয় তবে আবার ফেরত আসবে। তাই আন্তর্জাতিক সমাজের উচিত রোহিঙ্গাদের অধিকার ও নিরাপত্তার বিষয়ে মিয়ানমারকে চাপে রাখা। আর আমরা আন্তর্জাতিক সমাজের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আছি। এখন এ বিষয়ে মিয়ানমারকে সক্রিয় হতে হবে।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!