• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পুরোদমে ব্যস্ত আমন চাষিরা


সুমন মুখার্জী, নীলফামারী জুলাই ১৯, ২০১৭, ০২:৫৯ পিএম
পুরোদমে ব্যস্ত আমন চাষিরা

আমন রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছে নীলফামারীর কৃষকেরা

নীলফামারী: বৃষ্টি পেয়ে পুরোদমে আমন রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছে নীলফামারীর কৃষকেরা। দিন রাত হাল চাষ, বীজ তোলা ও রোপণের কাজ করে যাচ্ছে তারা। এখন যেন তাদের দম ফেলার সময় নেই।

আষাঢ়ের শুরু থেকেই বৃষ্টির পানে তাকিয়ে ছিল এখানকার কৃষকরা। কারণ বৃষ্টির গতিপ্রকৃতি দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে আষাঢ় চলছে। আমন মৌসুম শুরু হলেও বৃষ্টির অভাবে মাঠে নামতে পারছিল না কৃষকরা। তবে আষাঢ়ের বিদায় বেলায় দেখা মিলেছে ভারী বর্ষণের। এতে স্বস্তি ফিরে এসেছে কৃষকের মাঝে। এখন পুরোদমে আমন রোপনে মাঠে নেমে পড়েছে এই অঞ্চলের কৃষকরা।

নীলফামারী জেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি বছরে বর্ষার ভরা মৌসুমে বৃষ্টিপাত হওয়ায় অনেকটা আগে ভাগেই আমন আবাদে নেমে পড়েছেন কৃষকরা। আগাম চাষ করায় ক্ষতি থেকে রক্ষা, উৎপাদন এবং দাম ভালো পাবেন বলে মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

নীলফামারী সদর উপজেলার ইটাখোলা ইউনিয়নের কানিয়াল খাতা গ্রামের কৃষক আব্দুর রউফ সোনালীনিউজকে জানান, ‘বোরোতে সাড়ে তিন বিঘা জমির ধান শ্যাষ হয়া গেইছে, ত্রিশ হাজার টাকা নাই, ব্লাস্ট রোগ হামাক খেয়া ফেলাইলো’ কষ্ট করি হইলেও আমন লাগাইছি। আশা করছি লাভ হইবে।’

বর্ষার ভরা মৌসুমে জেলার চারদিকে চলছে আমন আবাদের ধুম। পানিতে টইটুম্বুর জমিতে উৎসব মুখর পরিবেশে চলছে আমন চারা রোপণের কাজ। দেখা মিলছে দল বেঁধে চারা লাগানোর চিত্রও।

শ্রমিক জাহাঙ্গীর আলম সোনালীনিউজকে বলেন, ‘আমরা আট জনে সাড়ে পাঁচ বিঘা জমি চুক্তিতে নিয়েছি। চারা রোপণের পর সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা পাবো। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়েছে। জমিতে আটকা রয়েছে যথেষ্ট পানি। যার ফলে চারা লাগাতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য পাচ্ছি আমরা।’

সেখানকার আরেক কৃষক আসাদুজ্জামান আসাদ সোনালীনিউজকে বলেন, ‘আমন মৌসুমে ধানের ভালো বাজার পাওয়া যাবে। লোকসান হবে না।’

আমন রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছে নীলফামারীর কৃষকেরা

তিনি বলেন, ‘আমনে বিঘা প্রতি প্রায় ২ হাজার ২০০টাকা খরচ হবে। আর বিঘা প্রতি ধান উৎপাদন হবে অন্তত ১৬ মণ। বিক্রি করে বিঘা প্রতি দশ হাজার টাকার মত লাভ হবে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমনে সেচ (পানি) লাগে না, সার ও কীটনাশক খরচও কম।’

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি আমন মৌসুমের জন্য ৬ হাজার ৩৯৮ হেক্টরে বীজতলা করেছেন কৃষকরা। আর ১লাখ ১২ হাজার ৩৪৮ হেক্টরে আবাদ করবেন আমন। গতবার ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করেছিলেন তারা।

জেলা সদরের ইটাখোলা, টুপামারী, রামনগর, লক্ষ্মীচাপ, কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুটিমারী, নিতাই, জলঢাকা উপজেলার খুটামারা, কাঁঠালি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে কৃষকদের ব্যস্ততার চিত্র। কেউবা জমি তৈরি, কেউবা বীজতলা থেকে বীজ তোলা, কেউবা জমি চাষ আর কেউবা ব্যস্ত রোপণে।

নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাকিব আবেদীন হিরু সোনালীনিউজকে জানান, কৃষকদের সারিবদ্ধ ভাবে চারা রোপণ, সেচ, পরিমিত সার ও কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি। এছাড়া পোকা মাকড়ের অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে লাইভ ও ডেড পার্চিং করারও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কৃষকরা উৎসব মুখর পরিবেশে মাঠে আমন আবাদে সময় কাটাচ্ছেন বলে জানান রাকিব আবেদীন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নীলফামারীর উপ-পরিচালক গোলাম মোহাম্মদ ইদ্রিস সোনালীনিউজকে জানান, কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিরলসভাবে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। বন্যা বা আপদকালে যাতে আমনের চারা সংকট না হয়, সেজন্য চারা তৈরি করে রাখতে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘কৃষকেরা যেন রোপা আমন চাষে কোনো সমস্যায় না পড়েন সে জন্য সার্বক্ষণিক নজর রাখছি। যেখানেই সমস্যা দেখা যাচ্ছে, সেখানেই দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে এলাকায় কিছু পরিমাণ জমিতে ধান রোপণ সম্পন্ন হয়েছে। নিম্নাঞ্চল থেকে বন্যার পানি নেমে গেলে চাষের লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।’


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!