• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পোশাকের ২০ ডলার যায় কোথায়


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ২৩, ২০১৭, ১০:১২ পিএম
পোশাকের ২০ ডলার যায় কোথায়

ঢাকা: বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান বলেছেন, বিশ্ব পণ্য সরবরাহব্যবস্থায় (গ্লোবাল ভ্যালু চেইন) একধরনের অন্যায্যতা আছে। বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক নিয়ে অনৈতিক বাণিজ্য করছে। বাংলাদেশ থেকে একটি তৈরি পোশাক পাঁচ ডলারে কেনা হয়। তারপর তা বিশ্ববাজারে ২৫ ডলার বা এর বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। 

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত নিয়ে সামাজিক সংলাপবিষয়ক এক সংলাপ অনুষ্ঠানে রেহমান সোবহান এসব কথা বলেন। রোববার (২৩ এপ্রিল) সিপিডি ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ঢাকা অফিস যৌথভাবে আয়োজিত সংলাপটি রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সভারে অবস্থিত রানা প্লাজা ধসে পড়ে। সেই দুর্ঘটনার ৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে এ সংলাপের আয়োজন করা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। 

এ সময়ে রেহমান সোবহান প্রশ্ন করে বলেন, তাহলে পণ্য সরবরাহব্যবস্থায় ওই ২০ ডলার কোথায় যায়? এই অন্যায্য ব্যবস্থার কারণে সবাই এর সুফল পাচ্ছে না। এটি একটি কাঠামোগত সমস্যা।

রানা প্লাজা ধসের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, রানা প্লাজা ইস্যুতে জাতীয় সংসদে কোনো আলোচনা হয়নি। এমনকি সংসদীয় কমিটিতেও আলোচনা হয়নি। পোশাক খাতে রাজনৈতিকভাবে যে নজরদারির প্রয়োজন, এ ক্ষেত্রে তা দেখা যায়নি। আমরা যতই আলোচনা করি না কেন, রাজনৈতিক অঙ্গীকার না থাকলে কোনো সমস্যার সমাধান হবে না। ওই দুর্ঘটনার পর সামাজিক জবাবদিহিতার চরম অভাবের বিষয়টিও ফুটে উঠেছে। জনপ্রতিনিধিও এ ঘটনার পর্যালোচনা করেননি বলে উল্লেখ করেন রেহমান সোবহান।

সংলাপে ইউরোপিয় ইউনিয়নের ডেলিগেশনের ডেপুটি হেড ইয়োগান হেইম্যান বলেন, আগামী ১৮ মে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত এবং এর কর্মপরিবেশ নিয়ে ইউরোপিয় ইউনিয়নে আলোচনা হবে। সেই বৈঠকের ফল যদি নেতিবাচক হয়, তবে ইউরোপের বাজারে যে অগ্রাধিকার সুবিধা বাংলাদেশ পায়, তাতে সাময়িকভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি হবে।

তবে এ বিষয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব মিকাইল শিপার বলেন, শ্রমসচিব হিসেবে এ বিষয়ে আমি বেশ আত্মবিশ্বাসী। আশা করি, উন্নয়ন সহযোগিদের বোঝাতে সক্ষম হব।

নিট পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, পাঁচ ডলারে পোশাক বিক্রি করতে ক্রেতাদের বিস্তারিত জানাতে হয়। কিন্তু বিদেশি ক্রেতারা যখন ২৫ ডলারে পোশাক বিক্রি করেন, তাতে কত দিয়ে কেনা তা লেখা থাকে না। এ সময় শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করার দাবি জানান শ্রমিকনেতা বাবুল আক্তার। তিনি বলেন, সামাজিক সংলাপের কথা বলে ডেকে নিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শ্রমিকদের সংগঠন ইন্ডাস্ট্রি অল কাউন্সিলের নেতা কামরুল আলম বলেন, শ্রমিকদের ইউনিয়ন করার সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু পার্টিসিপেটরি কমিটি ও ট্রেড ইউনিয়ন এক নয়। পার্টিসিপেটরি কমিটিতে সদস্য মনোনীত হতে হবে ইউনিয়নের প্রতিনিধির মাধ্যমে।

বিজিএমইএ সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, বিজিএমইএ শ্রমিক ইউনিয়ন চায় না—এটা বলা হচ্ছে। কিন্তু এটা ঠিক নয়। ৫৯১টি কারখানায় শ্রমিক ইউনিয়ন আছে। তিনি আরও বলেন, পোশাক কিনতে ক্রেতারা বেশি পয়সা দেবেন না। বেশি পয়সার জন্য চাপ দিলে ক্রেতারা ইথিওপিয়া যাওয়ার কথা বলবেন। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ভারত ধীরে ধীরে বাংলাদেশের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে যাচ্ছে।

সিপিডির সম্মানীত ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রানা প্লাজা ধসের পরে বেশকিছু উদ্যোক্তা ব্যবসা ছেড়েছেন। এই ঘটনার পর ট্রেড ইউনিয়ন, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিয়ে যে পরিমাণ অগ্রগতি হওয়ার কথা ছিল- তা হয়নি। দেশে ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু কার্যকারিতা কম।

শ্রমিক নেতা কামরুল ইসলাম বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় বিদেশি সংস্থা থেকে ক্ষতিপূরণের একটি প্যাকেজ পেয়েছি। আইনানুগ কোনো ক্ষতিপূরণ পাইনি। স্পেকটার্ম গার্মেন্টস দুর্ঘটনার পর শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হলেও রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর গত ৪ বছরে শ্রমিকদের কোনো স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়নি।

শ্রমিক নেতা বাবুল আক্তার বলেন, যারা মরে গেছে তারা বেঁচে গেছে। যারা বেছে আছে তাদের নিয়ে শুধু আলাপ-আলোচনা হয়; আর কিছুই না। যতটুকু হয়েছে বিদেশিদের চাপেই হয়েছে। সরকার মন থেকে কিছু করেনি। উল্টো সামাজিক সংলাপের নামে শ্রমিকদের ডেকে নিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শ্রমিক নেতা তৌহিদুর রহমান বলেন, অনেক শ্রমিক এখনও মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। তারা কাজে যোগ দিতে ভয় পান; এমনকি বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করতেও ভয় পান। দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের মধ্যে ৪২ শতাংশ শ্রমিক এখনও বেকার রয়েছেন। রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় দায়ের করা দুই মামলার বিচার এখনও শুরু হয়নি। ক্ষতিপূরণের কোনো মানদণ্ডও নেই।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আতা

Wordbridge School
Link copied!