• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে স্বাধীন বাংলার পতাকা


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ২৩, ২০১৮, ০২:৩২ পিএম
বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে স্বাধীন বাংলার পতাকা

ঢাকা : আজ ২৩ মার্চ। অসহযোগ আন্দোলনের ২২তম দিন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে এ দিনটি পাকিস্তান দিবসের পরিবর্তে ‘ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। সারা বাংলায় ছিল সরকারি ছুটি। এই দিনেই বঙ্গবন্ধু তাঁর ধানমন্ডির বাসভবনে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গানটি সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত হয়। এর আগে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সদস্যরা সামরিক কায়দায় তাঁকে অভিবাদন জানান।

ঢাকায় প্রেসিডেন্ট ভবন ও সেনাবাহিনীর সদর দফতর ছাড়া আর কোথাও পাকিস্তানের পতাকা ওড়েনি এদিন। ঢাকায় সচিবালয়, হাইকোর্ট, ইপিআর সদর দফতর, রাজারবাগ পুলিশ সদর দফতর, ঢাকা বেতার, ঢাকা টেলিভিশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, টেলিফোন ভবন, হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল, প্রধান বিচারপতি ও মুখ্য সচিবের বাসভবনসহ সব সরকারি-বেসরকারি ভবন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের পতাকা তোলা হয়। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে স্বাধীন বাংলার পতাকা তোলার সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাধা দিলে ছাত্র-জনতা তা উপেক্ষা করে পতাকা তোলেন।

স্বাধীন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ ‘প্রতিরোধ দিবস’ পালন করে। লাঠি-বর্শা-বন্দুকের মাথায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়ে হাজারো জনতা ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে ঢাকা প্রকম্পিত করে। জনতা ভুট্টো ও সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধেও স্লোগান দেয়। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ছবি, জুলফিকার আলী ভুট্টো ও জেনারেল ইয়াহিয়া খানের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।

কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও সাবেক বাঙালি সৈনিকদের সমন্বয়ে গঠিত ‘জয় বাংলা বাহিনী’ আউটার স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজ মহড়া দেয়। এখানে সামরিক কায়দায় অভিবাদনের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলিত হয়। তখন রেকর্ডে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি বাজানো হয়।

জয় বাংলা বাহিনীর পাঁচ শতাধিক সদস্য প্যারেড করে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে যান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে তারা সেখানে অভিবাদন জানান। বঙ্গবন্ধু সালাম গ্রহণ শেষে জয় বাংলা বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলেন, ‘বাংলার মানুষ কারো করুণার পাত্র নয়। আপন শক্তির দুর্জয় ক্ষমতাবলেই আপনারা স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনবেন। বাংলার জয় অনিবার্য।’

আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ ও ড. কামাল হোসেন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা বিচারপতি এ আর কর্নেলিয়াস, লে জেনারেল পীরজাদা, এমএ আহমেদ ও কর্নেল হাসানের সঙ্গে দুপুর এবং বিকালে দুই দফায় দুই ঘণ্টা স্থায়ী বৈঠক করেন। আওয়ামী প্রতিনিধিরা এই দিন প্রস্তাবিত শাসনতন্ত্রের খসড়া উপস্থাপন করেন। ছয় দফার ভিত্তিতে প্রণীত এ খসড়ায় প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক বাণিজ্য, পররাষ্ট্র, মুদ্রা, নাগরিকত্ব, কেন্দ্রীয় ঋণ, ওজন ও পরিমাপের মানদণ্ড, কেন্দ্রীয় সম্পদ, আন্তর্জাতিক ও আন্তঃপ্রাদেশিক যোগাযোগ কেন্দ্রের হাতে রেখে এর বাইরে অন্য সকল বিষয় প্রদেশের অধীনে রাখার সুপারিশ করা হয়।

অন্যদিকে বিকালে জাতীয় পশ্চিম পাকিস্তানি পরিষদের সংখ্যালঘিষ্ঠ দলের নেতারা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর বাসভবনে এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রধান, জমিয়তে ওলামায়ে প্রধান, পাঞ্জাব কাউন্সিল প্রধান ও বেলুচিস্তান ন্যাপের সভাপতি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে পশ্চিম পাকিস্তানের নেতারা অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা চাই দেশের মঙ্গলের জন্য সবকিছু খুব তাড়াতাড়ি নিষ্পত্তি হয়ে যাক।’ এ সময় বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আপনারা ভালো কামনা করুন, কিন্তু খারাপের জন্যও প্রস্তুত থাকুন।’

বিকালে এই আলোচনা যখন চলছে তখন সৈয়দপুরে সেনাবাহিনী ও গ্রাসবাসীদের মধ্যে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন হতাহত হয়। সন্ধ্যায় সেনাবাহিনী জোরপূর্বক সৈয়দপুর শহরের কর্তৃত্ব গ্রহণ করে কারফিউ জারি করে। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে সেনানিবাসে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি সৈনিকদের উদ্দেশেও ভাষণ দেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!