• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
রোহিঙ্গা নির্যাতন

মিয়ানমারে অশান্তি, তবুও চুপ শান্তির দূত


আন্তর্জাতিক ডেস্ক নভেম্বর ১৯, ২০১৬, ১২:০৫ পিএম
মিয়ানমারে অশান্তি, তবুও চুপ শান্তির দূত

বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের কয়েকটি পুলিশ ফাঁড়িতে গত ৯ অক্টোবর হামলার ঘটনায় ৯ পুলিশ নিহত হওয়ার পর থেকে সেখানকার রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের দমন-পীড়ন শুরু করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। তাদের দাবি, ওই হামলার পেছনে রোহিঙ্গারা জড়িত।

এদিকে কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ ধরনের অভিযান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যাপক সমালোচনায় পড়েছে। এক্ষেত্রে শান্তিতে নোবেলজয়ী ও দেশটির গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি’র ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এসব নিপীড়নের ঘটনায় এখনো পর্যন্ত নীরব রয়েছেন তিনি।

৯ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত ১৩০ রোহিঙ্গা মুসলিমকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। যদিও স্থানীয় রোহিঙ্গাদের দাবি এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি হবে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো কথা না বলায় সু চি’র নোবেল পুরস্কার ফিরিয়ে নিতে নোবেল কমিটির কাছে আহ্বান জানিয়েছেন অনেক সমালোচক। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের সংখ্যা ১১ লাখের ওপর। জাতিসংঘের মতে, তারা বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত সম্প্রদায়ের একটি। আশা করা হয়েছিল, সু চি’র দল ক্ষমতায় এলে রোহিঙ্গাদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে।

এর আগে ২০১২ সালের এক সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় স্থানীয় বৌদ্ধদের হাতে নির্মম নির্যাতন এবং হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় রোহিঙ্গারা। তখনও এসব ইস্যুতে কোনো কথা বলেননি সু চি। বারবার রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে বিতর্কিত হয়ে উঠছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চি এবং বর্তামানে মিয়ানমারের রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা তার নেতৃত্বাধীন দল।

দীর্ঘদিন সামরিক শাসনের অধীনে ছিল মিয়ানমার। ২৫ বছর পর দেশটিতে গত বছরের ৮ নভেম্বর প্রথম কোনো গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে অর্ধ-শতকের সামরিক শাসনের অবসান হয়। মিয়ানমারের সামরিক সরকার বরাবরই ছিল রোহিঙ্গা-বিরোধী। ধারণা করা হচ্ছিল, সু চি’র দল এনএলডি ক্ষমতায় এলে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যারও অবসান ঘটবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। ওই অঞ্চলে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনে কূটনৈতিকদের দাবিও ফিরিয়ে দিয়েছেন সু চি।

মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের এখনো নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। সু চি’র দল ক্ষমতায় আসলে তাদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে- এমনটা আগে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু এ বিষয়ে সু চি’র অবস্থান সামরিক সরকারের মতোই। বরং, রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছে না- তার এই মন্তব্য ব্যাপক বিতর্কের ঝড় তুলেছিল। এতে ক্ষমতাসীন দলের ওপর রোহিঙ্গা আস্থা শুন্যের পর্যায়ে নেমে এসেছে।

রোহিঙ্গা শিবিরে স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত মং আয় সুয়ে জানান, এক বছর আগে সু চি’র ঐতিহাসিক নির্বাচনের পর কোনোকিছুই পাল্টায়নি। তিনি বলেন, ‘এই এক বছরে কোনো উন্নতি হয়নি। আমাদের ওপর শুধুই নির্যাতন করা হয়েছে। কোনো পরিবর্তন নেই, কোনো উন্নতি নেই।’

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মনে করছে, মিয়ানমারের মানুষের জীবনে স্বাধীনতা এনে দেবেন- সু চি বরাবর এমন কথা শুনিয়ে এলেও রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে তিনি আসলে কিছুই করতে পারেননি।

এদিকে প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গাদের অনেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছেন। বেসরকারি হিসাব মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা বাস করছে। তাই নতুন করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া কঠিন। গত কয়েক দিনে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নাফ নদী পাড়ি দেয়ার সময় কিছু রোহিঙ্গা গুলিবিদ্ধ হয়েছে। অনেকে নৌকায় করে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করলেও তাদের পুশব্যাক করছে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি।

শনিবার কোস্টগার্ড টেকনাফ স্টেশনের ইনচার্জ লে. নাফিউর রহমান জানান, শুক্রবার ৭টি নৌকায় করে নাফ নদীর নয়াপাড়া পয়েন্ট দিয়ে ১২৫ রোহিঙ্গা রাত সাড়ে ৯টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে। কোস্টগার্ডের টহল দল নাফ নদীতে অবস্থান করে তাদের অনুপ্রবেশ করতে দেয়নি। তাদের নাফ নদী থেকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যের কয়েকটি সীমান্ত ফাঁড়িতে হামলার ঘটনার পর থেকে সেখানে সেনা উপস্থিতি বাড়িয়েছে দেশটির সরকার। ওই এলাকায় সাংবাদিক এবং সাহায্যকর্মীদের প্রবেশও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও মানবাধিকার কর্মীরা অভিযোগ করেছেন, রাখাইন অঞ্চলের মানুষের ওপর মিয়ানমারের সেনারা নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছেন। সেখানকার নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে এবং বাড়িঘরে আগুন দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের।

২০১২ সালে রোহিঙ্গাদের রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে কয়েকশ মানুষ নিহত হওয়ার পর সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সেখানে সবচেয়ে সহিংস অবস্থা চলছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার বাস। তবে মিয়ানমার সরকার তাদের নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। আর এ কারণে অনেকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বাংলাদেশে পাড়ি জমায়।

সোনালীনিউজ/ ঢাকা/ আরএস

Wordbridge School
Link copied!