• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মেহেরপুরের একমাত্র খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়ালিউল


মেহেরপুর প্রতিনিধি ডিসেম্বর ১৬, ২০১৬, ১২:২৪ পিএম
মেহেরপুরের একমাত্র খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়ালিউল

মেহেরপুর: বীর প্রতীক শহীদ ওয়ালিউল হোসেনের নাম মেহেরপুর জেলার অনেকেই হয়তো জানে না। জেলার একমাত্র ব্যক্তি যিনি মরনোত্তর বীর প্রতীক পদকে ভুষিত হয়েছেন। তিনি কেন বীর প্রতীক খেতাব পেলেন? এ প্রশ্নের উত্তর শুধু জানেন তাঁর সহযোদ্ধারাই।

১৯৩৯ সালের ২ আগস্ট মুজিবনগর উপজেলা মোনাখালী গ্রামের কানাই শেখের পরিবারে জন্ম ওয়ালিউল হোসেনের। চার ভাই বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। বাইশ বছর বয়সেই তিনি যোগ দেন মুজাহিদ বাহিনীতে। ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ ৮ নং সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন তিনি। এ সেক্টরের অধীনে মেহেরপুরের তৎকালীন এসডিও তৌফক-ই-এলাহী চৌধুরী ও কোম্পানি কমান্ডার লে. খন্দকার নুরুন্নবীর নেতৃত্বে বৃহত্তর কুষ্টিয়া, যশোর, সাতক্ষীরা ও ফরিদপুর জেলায় অংশ বিশেষ বিভিন্ন স্থানে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন এই বীর যোদ্ধা।

১১ নভেম্বর রাতে কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানার ব্যাংগাড়ির একটি মাঠে বাঙ্কারে অবস্থান নেন মুক্তিযুদ্ধারা। ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করার কথা ছিল তাদের। ১২ নভেম্বর রাত ৩ টার দিকে পাকস্তানী হানাদার বাহিনী সেখানে অতর্কিত আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা আক্রমণে শুরু তুমুল যুদ্ধ। পাশের একটি বাঙ্কারে যুদ্ধ করছিলেন ওয়ালিউল হোসেন। মরনপণযুদ্ধে পাকিস্তানিদের ভারি অস্ত্রের মোবাবেলা করছিলেন হালকা অস্ত্র দিয়ে। এক পর্যায়ে চোঁখে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ওয়ালিউল। প্রচন্ড গোলাগুলির কারণে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও তাঁকে সরিয়ে আনতে ব্যর্থ হন সহযোদ্ধারা। কিন্তু পিছু হটেননি। তার কথা না ভেবে শত্রুদের মোকাবেলা করতে সহযোদ্ধাদের অনুরোধ করেন ওয়ালিউল হোসেন। যুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনীর কয়েকজন নিহত হলে তারা পিছু হটে। কিন্তু বাঁচানো যায়নি ওয়ালিউলের। অবশেষে রাতের কোনো এক সময় লাশটি সরিয়ে পাশের একটি পানের বরজে লুকিয়ে রাখা হয়। যুদ্ধ শেষে সেখানেই ওয়ালিউল হোসেনের লাশটি দাফন করা হয়। কথাগুলো জানান শহীদ ওয়ালিউল হোসেনের সহযোদ্ধা জসিম উদ্দীন।

শহীদ হওয়ার সময় তিনি রেখে যান স্ত্রী জবেদা খাতুন ও তিন মেয়েকে। বড় মেয়ের তখন বয়স ছিল ৬ বছর। অভাবের সংসারে হাল ধরেন স্ত্রী। অনেক কষ্টে মেয়েদের বড় করেন। ১৯৮০ সালে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান মেঝ মেয়ে রেবেকা খাতুন। এখন দুই মেয়ে-জামাই ও নাতি-নাতনি নিয়ে দিন কাটছে তার। সংসারে অভাব-অনটন না থাকলেও শূন্যতা শুধুই ওয়ালিউলের।

২০০৪ সালের ১১ মার্চ বীর প্রতীকে পদকে ভূষিত হয়েছেন শহীদ মুজাহিদ ওয়ালিউল হোসেন। স্বামী দেশ স্বাধীন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন এতেই গর্বে বুক ভরে যায় স্ত্রী জবেদার।

তিনি জানান, স্বামী দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। এতেই গর্ব তাদের। পেয়েছেন সরকারী অনেক সহযোগীতা। না পাওয়ার কোন আক্ষেপ নেই তাদের মাঝে। তবে স্বামীর কবরটি পড়ে আছে সেই ব্যাংগাড়ির মাঠে। কবরটি স্থানান্তর করে, নিজ এলাকায় স্থাপনের দাবি তাঁর।

এ গ্রামের উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ুয়া ছাত্র সোহানুর রহমান জানান, গ্রামে এমন একজন মুক্তিযোদ্ধার খবর জানেনা তারা। আবার তিনি যে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হয়েছেন সেটি সম্পর্কেও অজানা তরুণ প্রজন্মের। তাঁর নামে একটি সড়কের নামকরণ ও পাঠাগার স্থাপনের দাবি তাদের। যাতে পরবর্তী প্রজন্ম এ বীর শহীদের বীরত্বের ইতিহাস জানতে পারে।

জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ জানান, পরিবারটির খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ সব ধরনের সহযোগীতা করা হবে। এছাড়াও তাঁর বীরত্বগাঁথা ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুল ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানোর মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!