• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
মতিঝিল থানায় মামলা

যুবলীগ কর্মী খুনের নেপথ্যে চাঁদাবাজি


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৬, ০৮:৪৫ পিএম
যুবলীগ কর্মী খুনের নেপথ্যে চাঁদাবাজি

চাঁদাবাজিসহ এলাকার আধিপত্য নিয়ে তিন বছর আগে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কী হত্যাকাণ্ডের রেশ ধরেই খুন হয়েছেন যুবলীগ কর্মী রিজভী হাসান বাবু। মিল্কীর অনুসারী বাবুর হামলাকারীরা মিল্কীর ‘প্রতিপক্ষ’ যুবলীগনেতা জাহেদ সিদ্দিকী তারেকের অনুসারী। মিল্কী হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত তারেক সে সময় র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।

এদিকে নিহত যুবলীগ কর্মী রিজভী হাসান বাবুর পিতা আবুল কালাম বাদী হয়ে শনিবার রাতে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় যুবলীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। এরা হচ্ছেন, হিরক (৩০), মিলন (৩১), সানী (৩০), আমিনুল (৩১), রাজা (৩০) ও আলম (৩০)। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার আসামিরা সবাই এজিবি কলোনির বাসিন্দা।

রিজভী হাসানের বাবা আবুল কালাম বলেছেন, তার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। মৃত্যুর আগে যাদের নাম বাবু নিজেই বলে গেছে। সে রাজনীতির পাশাপাশি ঠিকাদারিও করত।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার মতিঝিলে পূর্ববিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের গুলিতে গুরুতর আহত হন যুবলীগকর্মী রিজভী হাসান বাবু (৩৩) ও তার বন্ধু আহসানুল হক ইমন (৩২)। তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বাবুকে মৃত ঘোষণা করেন।

মতিঝিল থানার ওসি ওমর ফারুক বলেন, নিহতের বাবা আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে শনিবার রাতে মামলা করেছেন। প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার প্রায় ২০ দিন আগে বাবুর লোকজন কলোনির আইডিয়াল জোনের মিল্কি স্মৃতি ক্লাবে এক যুবককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। তার দেহের বিভিন্ন স্থানে ২৮টি সেলাই দেয়া হয়। তার নাম জানার চেষ্টা চলছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে একই ওয়ার্ডের যুবলীগ নেতা মারুফ রেজা ও রিজভী হাসান বাবু মুখোমুখি অবস্থানে ছিলেন। দীর্ঘদিন এটি চলে আসলেও তা দলীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে শান্ত ছিল। কিন্তু বাবুর লোকজন মারুফের দলের ওই যুবককে জখমের পর তা আবার প্রকাশ্যে চলে আসে। কী কারণে সেদিন ওই যুবকের ওপর হামলা হয়েছিল, তা-ই এখন তদন্ত করে বের করা হচ্ছে। তাহলে ঘটনার পেছনে কারা রয়েছে তা বেরিয়ে আসবে। এছাড়া যেখানে বাবুকে গুলি করা হয়েছে সেখানে বাইরে থেকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে পালিয়ে যাবে, সে সুযোগ থাকার কথা নয়। কেননা, ওই গেটের সামনেই বাজার। যেখানে সব সময় লোক সমাগম থাকে। তাই নিজেদের মধ্যেই কেউ কেউ এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।

মতিঝিল এলাকার বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ওই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যুবলীগের নেতাকর্মীদের দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। কারণ সেখান থেকে প্রচুর চাঁদাবাজি হয়। দলের কর্মকাণ্ডে পাওয়া যায় না, এমন সুবিধাভোগীরাই এখন সে এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। ত্যাগী নেতাকর্মীরা বঞ্চিতই রয়ে গেছে। দলের হাইকমান্ড বিষয়টি জানার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। হতাহত ব্যক্তি ও হামলাকারীরা বিবদমান ওই দুটি পক্ষের নেতাকর্মী। তাদের স্বজন ও নেতাকর্মীদের বক্তব্য থেকে ধারণা পাওয়া গেছে, পুরনো বিরোধের জের ধরেই শুক্রবার ওই হামলার ঘটনা ঘটেছে। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা দুই পক্ষের বিরোধকে আরও উস্কে দিয়েছে।

কোন্দলে নিহত বাবু ও আহত ইমন যুবলীগের কর্মী কি না নিশ্চিত করে বলতে পারেননি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা। তিনি কখনও শোনেননি তাদের নাম এবং আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ বা দলীয় কোন্দলের বিষয়েও কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ যুবলীগের দ্বিতীয় শীর্ষ এই নেতা। যুবলীগের ১০ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি মারুফ রেজা বলেন, যুবলীগের আগামী সম্মেলনে রিজভী ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী ছিলেন। এ নিয়ে একই ওয়ার্ডের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মিলনের সঙ্গে রিজভীর বৈঠক হয়। সেখানে এ নিয়ে দুজনের ঝগড়া হয়। এ থেকেও ঘটনার সূত্রপাত হতে পারে।

মতিঝিল থানা যুবলীগ নেতাকর্মীদের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মিল্কী হত্যার অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি পাওয়া ব্যক্তিরাই এখন বিভিন্নভাবে তৎপর হয়েছে। এই হত্যার সঙ্গেও তারা জড়িত। কিছুদিন আগেও দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়েছে। এ ঘটনায় তুষার, মিলন ও রানা জড়িত ছিল। তাদের আসামি করে মামলাও হয়েছিল। জামিনে বেরিয়ে এসে তারা নানারকম ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কী এক সময় এজিবি কলোনির দলীয় কার্যালয়ে বসতেন। ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই গুলশানে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডে যুবলীগ নেতা জাহেদ সিদ্দিকী তারেক জড়িত ছিলেন। পরে তিনিও র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। তার অনুসারীদের একজন হলেন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু।

স্থানীয় যুবলীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, টিপুর নির্দেশে একটি দল ১০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতিকে হত্যার উদ্দেশ্যে এসেছিল। তাকে না পেয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বসে থাকা বাবু ও তার বন্ধু ইমনকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। তাদের দাবি, জাহিদুল ইসলাম টিপুর সঙ্গে গত ১৪ আগস্ট বাবুর বাকবিতণ্ডা হয়। টিপুর লোকজন বাবুর এক কর্মীকে মারধর করায় তিনি এর কারণ জানতে চান। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডার সূত্রপাত হয়। তখন টিপু প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছিলেন। মৃত্যুর আগে বাবু তার স্বজনদের কাছে হামলাকারীদের নাম বলেছেন। তাদের মধ্যে টিপুসহ আছেন হীরক, মিলন, তুষার, সানি ও রাজী।

যুবলীগ কর্মী নিহত রিজভী হাসান বাবু পরিবারের সঙ্গে সবুজবাগ পূর্ব বাসাবো এলাকার ১০/৩/৩ নম্বর বাসায় থাকতেন। তার দুই সন্তান দীপা (৫) ও দোহা (২)। নিহতের বাবা আবুল কালামও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এদিকে গতকাল রবিবারও মতিঝিল এজিবি কলোনির ওই ক্লাবটিতে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। গেটের সামনে পুলিশি পাহারা। আশপাশের বাসিন্দাদের কাছ থেকে ঘটনার তথ্য নেয়ার চেষ্টা করছিলেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!