• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যেভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে গানের কথা-সুর (ভিডিও)


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৮, ০৮:১১ পিএম
যেভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে গানের কথা-সুর (ভিডিও)

ঢাকা: গান মানুষের আত্মার খোরাক। একটি গান নিমেষেই আপনার মন ভালো করে দিতে পারে। আবার মন খারাপ করে দেবার জন্যও একটি গানই যথেষ্ট। 

গান এক প্রকার প্রাণ, যে প্রাণের টানে মানুষের প্রকৃত প্রাণটি আন্দোলিত হয়। একটি উৎকৃষ্ট মানের গান অর্থাৎ বাণীপ্রধান গান মানুষের অন্তরে স্থায়ী আসন পেতে বসে। বিশ্বের সব ভাষার মানুষই গানের ভেতরে অবগাহন করে। মানুষের আনন্দ ও সুখানুভূতিতে গান যেমন তৃপ্তিদায়ক, তেমনি দুঃখ-কষ্ট বা ব্যথা-বেদনার নিরাময়ক। গান শুনে আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায় আবার গুনগুন করে গেয়েও তৃপ্তি আসে।  

গানের কথায় যেমন থাকে মা-মাটি আর দেশ। তেমনি প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসা, জীবনবোধ, আধ্যাত্মবাদ, ধর্মবোধ, ভক্তি মূলক পল্লী, ভটিয়ালি, মারফতিসহ আরও অনেক। 

আধুনিক বাঙলা গানে আমরা পঞ্চকবির প্রভারের বিষয়টি জানি। এই পঞ্চকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রজনীকান্ত সেন, অতুল প্রসাদ সেন ও কাজী নজরুল ইসলামকেই অনুসরণ করে এখনকার গীতিকবিরা লিখে যাচ্ছেন। পঞ্চকবির সাথে লালন ও হাসান রাজার প্রভাবও বাঙলা গানে যথেষ্ট।  

বর্তমান সময়ের আধ্যাত্মিক গানের জনপ্রিয় গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরায়েজী বলেন, বাঙলা গানের ঐতিহ্য অনেক শক্তিশালী। রবীন্দ্র, নজরুল, লালন বা হাসন রাজার বাঙলা গানে যে সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রয়েছে সে পথ ধরেই গান লিখে যাচ্ছি। 

তিনি বলেন, যুগের চাহিদা, মানসিকতার পরিবর্তন বা প্রযুক্তির ছোঁয়ায় গানের বাণী পরিবর্তীত হচ্ছে। যা যুগে যুগে হয়েছে। কিন্তু গান নষ্ট হয়ে যাচেছ সেটি বলা যাবে না। গান শোনার মাধ্যম পরিবর্তিত হচ্ছে। ভালো গানের সাথে কিছু দুর্বল গানও হচ্ছে, এটি আগেও ছিল এখনো আছে। 

পঞ্চকবির আগে চণ্ডীদাস, মুকুন্দরাম চক্রবর্তী, রায়গুনাকর ভারত চন্দ্র, চণ্ডীদাস, বিদ্যাপতি, আব্দুল হাকিম, আলাওল, রামনিধি গুপ্ত, মাইকেল মধুসূদন দত্ত গীতিকবিতা লিখে প্রাণ সঞ্চার করেছেন। তাদের হাতে রচিত হয় শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন, চণ্ডীমঙ্গল, অন্নদামঙ্গল, বৈষ্ণব পদাবলী, নূরনামা, পদ্মাবতী, টপ্পা ও মেঘনাদবধ। 

আবার পঞ্চকবির পর পল্লীকবি  জসীমউদ্দীনও অনেক গান উপহার দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন ‘আমার হাড় কালা করলাম রে/আরে আমার দ্যাহ কালার লাইগা রে’ বা ‘রঙ্গিলা রঙ্গিলা রঙ্গিলা রে, এসব এখনো মানুষের মুখে মুখে। 

পল্লীকবির পর যারা বাঙলা গানকে সমৃদ্ধ করেছেন আজিজুর রহমান, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, শামসুর রাহমান, ফজল-এ-খোদা, সৈয়দ শামসুল হক ও মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান উল্লেখযোগ্য। 

আজিজুর রহমান লিখেছেন ‘পলাশ ঢাকা কোকিল ঢাকা আমার এ দেশ ভাই রে’,  মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের লেখা ‘আমার দেশের মাটির গন্ধে ভরে আছে সারা মন’, আবার আবু হেনা মোস্তফা কামালের লেখা ‘তুমি যে আমার কবিতা আমার বাঁশির রাগিনী’, ‘আমি সাগরের নীল’, শামসুর রাহমান লিখেছেন ‘মধুময় পৃথিবীকে নীলাকাশ ডাকবে’, ফজল-এ-খোদার লিখা কালজয়ী গান ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’, গানগুলো মানুষের অধিক সমাধৃত হয় এবং বাঙালির মুখে মুখে। 

বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির স্বর্ণযুগে অনেক ভালো ভালো গান হচ্ছে কিন্তু তার স্থায়ীত্বকাল বেশিদিন হচ্ছে না। এ বিষয়ে শহীদুল্লাহ ফরায়জী বলেন, বাঙালি গান প্রিয় জাতি। যুগে যুগে গান মানুষকে আন্দোলিত করেছেন, মোহিত করেছে। আমরাই একমাত্র জাতি যে এখানে বিয়েবাড়িতেও গান হয়। আবার শোক সভায়ও গান হয়। সব ধরনের গান বাঙালিকে টানে। এখানে গান অনেক শক্তিশালী। 

একটা সময় ছিল যখন বাড়ির পাশ দিয়ে হেটে গেলেও প্রকৃতির টানে আনমনা ভাব থেকে বেড়িয়ে আসতো গানের কথা। অনেক সময় অবচেতন মনে গেয়েও নিতো দুই লাইন। আর মাঝি-মাল্লা কৃষকতো হর হামেশাই সুর তুলতো। কিন্তু এখন চারপাশ ঢেকে যাচ্ছে ইট পাথরে। সংকুচিত হচ্ছে নদী, গ্রাম, খাল, বিল। এ অবস্থায় বাঙলার রূপের বর্ণনা বা নাড়ীর টানের সেসব সুর ও কথা কীভাবে আসবে। 

বর্তমান প্রজন্মের গীতিকার ও সুরকার মো. সাখাওয়াত হোসেন মারুফ বলেন, এই পরিবেশ থেকে বাঙলার প্রকৃত কথা ও সুর তুলে ধরা কঠিন। তবে ভাবনা জগত অনেক বড়। মানুষ চাদেঁ বা স্বর্গে না গিয়েও সে সম্পর্কে লিখছে। সেরকম ভাবনার পরিধি ভেঙ্গে অনেক কিছুই করা যায়। 

বর্তমান সময়ের সঙ্গীত শিল্পী ইউসুফ খান বলেন, এখন সঙ্গীত আয়োজনই পরিবর্তীত হচ্ছে। প্রযুক্তি এসেছে আমাদের সাহায্য করতে। তবে তাতে অনেক শিল্পীই মনে হয় যেন অলস হয়ে পড়ছে। আর সঙ্গীত ভক্তদের মাঝেও অনেক পরিবর্তন ঘটছে। তারা এখন বাঙলা গানে পাশ্চাত্যের প্রভাবকে কাছে টেনে নিচ্ছে। আর তাদের চাহিদা মেটাতে শিল্পীরাও সেভাবেই গাইছেন।

সোনালীনিউজ/জেএ

Wordbridge School
Link copied!