রোগীদের মন কেড়েছে রমেকের ফুল বাগান

রংপুর : পরিচ্ছন্ন একটি ফুল বাগানে বদলে গেছে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের দৃশ্যপট। দেশি-বিদেশি নয়নাভিরাম বাহারি ফুলের সমারোহে উৎফুল্ল এখানে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা।

হাসপাতালের বেড থেকে খানিকটা উঠে দাঁড়াতে পারলে অনেকেই ছুটে যাচ্ছেন ফুলের বাগানে। যেন ফুলের বাগানে এলেই ভালো হয়ে যায় তাদের মন। প্রতিদিনই সকাল আর বিকেলে রোগীদের ভিড় জমছে বাগানে। হেটে হেটে ফুলের সুবাস আর নির্মল বাতাসে স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলছেন অনেকেই। দৃশ্য দেখে মনে হবে হাসি কান্নায় ভরা হাসপাতালে রোগীদের মন কেড়েছে দৃষ্টিনন্দন বিশাল ফুলের বাগান।

নীলফামারীর ফজলু মিয়া। পেশায় শিক্ষকতা করেন। তার ৭ বছরের শিশু সন্তান শৈবাল আহম্মেদকে ভর্তি করেছেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে। তিনি প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে অসুস্থ সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালের দৃষ্টিনন্দন ফুলের বাগান ঘুরে ঘুরে দেখান। প্রভাষক ফজলু মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, মেডিকেলের বিছানায় শৈবাল সব সময় চুপচাপ থাকে। বাগানের কাছে আসলে ওর মুখে হাসি ফুটে।

কথা হয় বাগানে ঘুরতে আসা আরেক রোগী রামেনা বেগমের সঙ্গে। তার স্বামী ১২ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। তিনি সকাল নতুবা বিকেলে সুযোগ হলেই তার স্বামীকে নিয়ে ফুলের বাগানে ঘুরতে আসেন। দৃষ্টিনন্দন এ বাগানের পাশে যতক্ষণ থাকেন তাকে ততক্ষণ তাদের বেশ ভালো লাগে বলে জানান তিনি।

হাসপাতালের দৃষ্টিনন্দন এই ফুলের বাগান দেখে ফজলু মিয়া আর রামেনা বেগমের মতো আরো অনেক রোগী ও তাদের স্বজন বেশ খুশি। তাদের দাবি, ফুলের বাগানের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। আগের তুলনায় এখন মেডিকেলের সর্বত্রই পরিষ্কার ঝকঝকে। এই বাগানের কারণেই বর্তমানে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালটি ফুলের মেডিকেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এই বাগান ঘুরে দেখতে মেডিকেলের রোগী ও তাদের স্বজনদের পাশাপাশি আশপাশের এলাকার অনেকেই প্রতিদিন ভিড় জমান সেখানে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ২৫ শতক জমির ওপর রয়েছে বাগানটি। এ বাগানে সিলভিয়া, স্নৌবল, চন্দ্রমলিক্কা, সিলসিয়া, ডালিয়া, কচমচ, গাঁদা, সূর্যমুখি, গোলাপ, শিউলি, বেলি, জবা, জুঁই, চামেলী, হাসনাহেনা, কেয়া, বকুলসহ দেশি-বিদেশি অর্ধ শতাধিক জাতের ফুলের চারা রয়েছে। এ ছাড়াও এক একর আয়তন জুড়ে রয়েছে সূর্যমুখির বাগান। যেন সবুজের বুকে হলুদের হাসি।

গত বছরের আগস্ট মাসে রমেকের তৎকালীন পরিচালক মওদুদ হোসেন মেডিকেলের সামনে একটি ফুলের বাগানের সিদ্ধান্ত নেন। ৬ মাস আগে প্রথমে দেশি জাতের কিছু ফুলের গাছ রোপণের মধ্য দিয়ে সৌখিন ফুলের বাগান গড়ার স্বপ্ন শুরু করলেও মাত্র কয়েক মাসে সেই স্বপ্ন পূরণে সফল হয়েছেন।

সাবেক পরিচালক মওদুদ আহমেদ বলেন, রোগীর মনে আনন্দ দেয়ার জন্যই তিনি বাগানটি করেছেন। বাগান করার পর রোগীর স্বজনরা বেশ খুশি হয়। ফুলের গাছগুলো তার কাছে সন্তানদের মত তিনি নিয়মিত বাগান ঘুরে ঘুরে ফুলের গাছগুলো দেখতেন। এখনো অবসর সময় পেলে দেখতে আসেন।

অন্যদিকে বর্তমান পরিচালক অজয় কুমার রায় বলেন, বাগানটি আরো দৃষ্টিনন্দন করার জন্য মেডিকেলের পক্ষ থেকে কাজ করা হচ্ছে।

হাসপাতালের ওয়ার্ড মাষ্টার মাহমুদ হাসান ও সহকারী ওয়ার্ড মাষ্টার অর্জুন কুমার জানান, এ মেডিকেলে প্রতিদিন ৩ হাজারেরও অধিক লোক চিকিৎসা নিতে আসেন। এসব লোকের অনেকেই বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করেন। আর যারা ভর্তি আছেন, তাদের স্বজনরা বাগানে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, সর্দার রোমানসহ বেশ কয়েকজন নিয়মিত ফুল গাছের যত্ন নিয়ে থাকেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর