• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লোকসানের শঙ্কায় হিমাগারের আলু নিচ্ছে না কৃষকরা


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭, ১১:২৮ এএম
লোকসানের শঙ্কায় হিমাগারের আলু নিচ্ছে না কৃষকরা

ঢাকা : অবিক্রিত অবস্থায় বিপুল পরিমাণ আলু পড়ে আছে হিমাগারগুলোতে। অথচ আর দেড় মাস পর নতুন আলু রোপণ মৌসুম শুরু হবে। বিপুল পরিমাণ আলু এখনই বিক্রি করতে না পারলে তা খাবার অনুপযোগী হয়ে পড়বে।

বর্তমানে আলু প্রকার ভেদে গড়ে ১১ হাজার ৩০০ টাকা প্রতি টন বিক্রি হচ্ছে। ওই হিসাবে শুধুমাত্র রংপুর বিভাগের হিমাগারগুলোতে যে পরিমাণ আলু এখন অবিক্রিত অবস্থায় আছে তার আর্থিক মূল্যই প্রায় ২২৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা হবে। শুধু রংপুর অঞ্চলে নয়, দেশের সব হিমাগারে যে পরিমাণ আলু অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে তার পরিমাণ প্রায় ৪৫ লাখ টন হবে।  হিমাগার ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, দেশের ৩৯০টি হিমাগারে থাকা প্রায় ৪৩ লাখ টন আলু এখন অবিক্রিত আছে। গত মৌসুমে অধিক আলু উৎপাদন হওয়ায় এখন বাজারে তেমন চাহিদা নেই। তাছাড়া কাক্সিক্ষত হারে আলু রফতানি না হওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ওই কারণে গত কয়েক বছরে ৩৩টি হিমাগার বন্ধ হয়ে গেছে। গত বছর আলুর বাজারদর ভালো থাকায় গত মৌসুমে কৃষকরা বিপুল পরিমাণ আলু চাষ করে। যা চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। ফলে লোকসানের আশঙ্কায় রংপুর অঞ্চলের ৮ জেলায় প্রায় ২০ লাখ টন আলু অবিক্রিত অবস্থায় হিমাগারে পড়ে আছে। ওসব আলুর বাজারমূল্য প্রায় ২২৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা। গত মৌসুমে অধিক আলু উৎপাদন হওয়ায় এখন বাজারে আলুর তেমন চাহিদা নেই। দামও নিম্নমুখী। তাছাড়া কাক্সিক্ষত হারে আলু রফতানি না হওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় ব্যাপক আর্থিক লোকসানের আশঙ্কা করছেন হিমাগার মালিক ও কৃষকরা।

সূত্র জানায়, দেশের সব হিমাগারে যে পরিমাণ আলু আছে তার আর্থিক মূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। বিগত ২০১৬ সালে দেশে আলু উৎপাদিত হয়েছিল ৮০ লাখ টন। চলতি বছর ওই উৎপাদন এক কোটি টন ছাড়িয়ে গেছে। অথচ আলুর চাহিদা ও ব্যবহার মোটেই বাড়েনি। হিমাগার থেকে আলু বিক্রির যে গতি তাতে বর্তমান মৌসুমের যে দেড় মাস বাকি আছে, অথচ ১৯ থেকে ২০ লাখ টন অবিক্রিত থেকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাতে বিপুলসংখ্যক কৃষক সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

অল্পসময়ে অধিক উৎপাদন হয় বলে আলু চাষে লাভ অপেক্ষাকৃত বেশি। প্রতি একর জমিতে যেখানে মাত্র ২০ থেকে ২৫ মণ চাল উৎপন্ন হয়, সেখানে আলু উৎপন্ন হয় ২৫০ থেকে ৩০০ মণ। ফলে কয়েক বছর ধরে কৃষকরা অধিক হারে আলু উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় উৎপাদনও ভালো হচ্ছে। বর্তমানে রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, ময়মনসিংহসহ, দেশের প্রায় প্রতিটি এলাকায় আলুর উৎপাদন বেড়েছে।

আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে সপ্তম এবং এশিয়ায় তৃতীয়। তবে রফতানির দিক থেকে অনেক পিছিয়ে। গত অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে দেশ থেকে আলু রফতানি হয়েছে মাত্র ৪৫ হাজার টন। রফতানিকারকদের কাছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবহন না থাকায় আলু রফতানি অলাভজনক এবং ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পচনশীল পণ্য হওয়ায় উৎপাদন মৌসুমে আলুর উপযুক্ত দামও পাওয়া যায় না।

সূত্র আরো জানায়, কৃষককে বাঁচাতে দেশেই আলু বিক্রির খাত তৈরি করতে হবে। সরকারের বিভিন্ন ত্রাণ কর্মসূচি ও বিভিন্ন সংস্থার রেশনের মধ্যে আলু সংযুক্ত করলেই ওই বিপুল পরিমাণ আলু বিক্রির খাত তৈরি হবে। তা ভোক্তা হিসেবে দেশের মানুষ খাবে। ফলে কৃষক তার ফসলের ন্যায্যমূল্য পাবে, হিমাগার মালিকরা তাদের ভাড়া আদায় করতে পারবেন। তা নাহলে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আলু হিমাগার থেকে নেবেন না।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ও হিমাগার ব্যবসায়ী মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু জানান, এ পরিস্থিতিতে যদি হিমাগারে অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে থাকা আলু নিয়ে সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা না হয় তা হলে আগামী মৌসুমে আলু চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে চাষীরা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!