• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘শিক্ষকরাতো চামচামিতে গেছেই, এমপির রুচিও কতো জঘন্য’ (ভিডিও)


নিউজ ডেস্ক অক্টোবর ১২, ২০১৮, ০২:২১ পিএম
‘শিক্ষকরাতো চামচামিতে গেছেই, এমপির রুচিও কতো জঘন্য’ (ভিডিও)

ঢাকা : যশোর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও যশোর-২ (চৌগাছা-ঝিকরগাছা) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মনিরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

বৃহস্পতিবার(১১ অক্টোবর) যশোরের চৌগাছা উপজেলার এবিসিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবন অনুষ্ঠানে ফুল হাতে এমপি মনিরকে বরণ করে ছাত্রীরা।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, এমপি মনির ও আওয়ামী লীগের নেতারা রুমের মধ্যে বসে আছেন। একদল ছাত্রী ফুলের মালা হাতে অতিথিদের সামনে দাঁড়ায়। তারপর তারা ‘ ধনধান্য পুষ্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা...’ গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফুল হাতে মাথানত করে উঠছে আর, বসছে।

পাশ থেকে একজন শিক্ষক ছাত্রীদের শিখিয়ে দিচ্ছেন। অতিথির সামনে দাঁড় করিয়ে ছাত্রীদের এভাবে উঠবস করাকে ভালোভাবে নেয়নি এলাকাবাসী। নাজমুল হোসেন নামে এক ব্যক্তির ফেসবুক পেজে ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছে।

কমেন্টস রিপ্লাইয়ে নাজমুল হোসেন জানান, এবিসিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানের ভিডিও এটি। প্রথমে এমপি সাহেব নিজেই আপলোড করেন। পরে তিনি ডিলেট করে দিয়েছেন বলেও দাবি করেছেন নাজমুল হোসেন।

তাদের ভাষ্য, আয়োজকরা সুবিধা নিয়েছেন, এজন্য এমপির প্রতি এমনটি করতেই পারেন। কিন্তু, সচেতন মানুষ হিসেবে এমপি মনিরুল ইসলাম কেন বাচ্চাদের এই কাজ করতে দিলেন? শুরুতেই তো ছাত্রীদেরতার থামিয়ে দেয়া উচিত ছিল।

ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে ফেসবুক ব্যবহারকারীরাও আয়োজক, এমপি এবং সেখানে উপস্থিত শিক্ষকদের ধিক্কার জানাচ্ছেন।

নাজমুল হোসেন সোহেল রাজ নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভিডিওটি শেয়ার করে নিখেছেন, ‘আমার রাগটা ওই শিক্ষকদের ওপর বেশি, তারপর তথাকথিত এমপির ওপর। একজন শিক্ষিত মানুষ হয়েও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এ রকম মালা নেয়া দৃষ্টিকটূ দেখায়।’

মেহেদী হাসান নামের আরেকজন লিখেছেন, ‘শুধু ব্যক্তিগতভাবে নয়, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবেও এ ধরনের অপকর্ম বন্ধ হওয়া উচিত। আর একই সঙ্গে এমন কাজের নীতি-নির্ধারকদেরও উপযুক্ত শাস্তি হওয়া দরকার।’

আসাদুজ্জামান মুকুল নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কী জঘন্য! শিক্ষকরা তো চামচামিতে গেছেই, এমপির রুচিও কতো জঘন্য! এই সার্কাসের মাধ্যমে আমাদের দেশপ্রেমকেই অপমান করা হয়েছে!’

মিজানুর রহমান দাবি জানিয়ে লেখেন, ‘কোথায় এই স্কুল? আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানাই। এইভাবে ফুল দিয়ে বরণ করতে তো কোথাও দেখিনি! বারবার হাঁটু গেড়ে ওঠবস করে ফুল দেয়া, এটা কিসের নিয়ম? শিক্ষক ও স্থানীয়রা আবার এটি উপভোগও করছেন! ধিক্কার সবার প্রতি!’

এম এনামুল হক লেখেন, ‘শিক্ষায় জাতির মেরুদণ্ড। যদি শিক্ষক সব বলদ হন, তবে আমরা খুব শিগগিরই মেরুদণ্ডহীন জাতি পেতে যাচ্ছি!’

মনির-উজ জামান নিজের ফেসবুকে লেখেন, ‘এটা যদি আধুনিকতা বা উচচ শিক্ষার ফল হয়ে থাকে, তাহলে ধিক্কার জানাই এই শিক্ষাকে। সবার মনে রাখা উচিত, সম্মান গায়ের জোরে হয় না, তা কামাই করে অর্জন করতে হয়। আমি ধিক্কার জানাই যারা এর আয়োজক ছিল, তাদের প্রতি।’

বিইউ হায়দার লিখেছেন, ‘অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে-বিধেয়, প্রয়োজনীয়তা, চিন্তাশক্তি, রুচিবোধ— সবই আমার মাথার উপর দিয়ে চলে গিয়েছে। আমি বাকরুদ্ধ। ঘৃণা আর ধিক্কার জানানো ছাড়া এই মুহূর্তে কিছু বলতেও মন চাইছে না।’

ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চৌগাছার বকসিপুর গ্রামের বাসিন্দা ও আইডিইবির যশোর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নুরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ধনধান্য পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা...গানের সঙ্গে ফুলের মালা হাতে মেয়েরা এমপি মহোদয়সহ অতিথিদের বরণ করে নিয়েছে।

অতিথির প্রতি শ্রদ্ধা জানতেই এভাবে বরণ করা হয়েছে। মূলত গানটি কন্টিনিউ করার জন্য মেয়েরা ফুল হাতে, এভাবে উঠাবসা করেছে। এই ঘটনাটিকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা ঠিক হবে না।

নুরুল ইসলাম বলেন, ওই স্কুলের জমি দান করেছিল আমার মামা। দীর্ঘদিন ভবন ছিল না। নতুন ভবন পেয়ে এলাকার সবাই খুশি। তাই এমপিসহ অতিথিদের বরণ করে নিয়া হয়েছে।

এদিকে, সন্ধ্যায় এমপি মনিরুল ইসলাম মনিরের মেইল থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে- বৃহস্পতিবার(১১ অক্টোবর) যশোরের চৌগাছা উপজেলা হাকিমপুর ইউনিয়নে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নকাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন এমপি মনিরুল ইসলাম মনির।

উদ্বোধন করা কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে- এবিসিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪তলা বিশিষ্ট ১তলা ভবন, ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে দেবীপুর-বকশীবাজার ১১শ মিটার পাকাসড়ক নির্মাণ, ইউনিয়নের পাতিবিলাসহ বিভিন্ন বাজারে স্থাপিত সোলার স্ট্রিট লাইট উদ্বোধন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শাহাজান কবীর, জেলা মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার ও আইডিইবির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী বিদ্যুৎ বিভাগ ও আইডিইবির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নুরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাস্টার সিরাজুল ইসলাম, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সহিদুল ইসলাম মিয়া, সাবেক শ্রমবিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম রাজ, যুব মহিলা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজনিন সুলতানা, আওয়ামী লীগ নেতা শহিদুল ইসলাম, সেলিম হোসেন, অধ্যক্ষ রেজাউল ইসলাম, অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম, হাকিমপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ইকবাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক খাইরুল ইসলাম প্রধান শিক্ষক শাহাজান কবীর, ছাত্রলীগ নেতা ফিরোজ হোসেন, রয়েল খান, রুমান খান, এসএম রকি, আকাশ খান প্রমুখ।

সোনালীনিউজ/আরজে

Wordbridge School
Link copied!