• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার-হেফাজত সম্পর্কে ক্ষুব্ধ সুশীলরা


বিশেষ প্রতিনিধি এপ্রিল ১৬, ২০১৭, ০৬:৩৮ পিএম
সরকার-হেফাজত সম্পর্কে ক্ষুব্ধ সুশীলরা

ঢাকা: সম্প্রতি কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে মূলধারায় সম্পৃক্ত করা এবং হেফাজতের আমির আল্লামা শফিদের দাবির প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট চত্বর থেকে ভাস্কর্য সরানোর প্রক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী আশ্বাসে বিস্মিত দেশের সুশীল সমাজ।

এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন দেশের বিশিষ্টজনরা। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, সরকার একের পর এক হেফাজতের দাবি মেনে নিচ্ছে। এর মধ্যে পাঠ্যপুস্তকে বর্জন ও গ্রহণের দাবি মেনে নেওয়ায় বাংলা বা সাধারণ মাধ্যমের শিক্ষা দুর্বল হয়েছে। কওমি মাদরাসার শিক্ষাকে সাধারণ মাধ্যমের মাস্টার্সের সমপর্যায়ে নিয়ে আসায় সাধারণ শিক্ষার ডিগ্রির অবমূল্যায়ন হলো।

একইভাবে ভাস্কর্য অপসারণের দাবিও মেনে নেওয়া হলো। এগুলো এক ধরনের আপস এবং হেফাজতকে সন্তুষ্ট রাখতেই করা হচ্ছে। লক্ষ্য নির্বাচন ও ভোটের রাজনীতি। অথচ উচিত ছিল এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। তাতে তারা পিছু হটত। কিন্তু সেটি না করে সরকার তাদের প্রশ্রয় দেওয়ায় ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতি হলো। ভবিষ্যতে হেফাজতে ইসলামের মতো সামন্তবাদী গোষ্ঠীগুলো আরো পেয়ে বসবে।

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান বলেন, ভোটের রাজনীতির সমীকরণ আর ইসলামপন্থি দলগুলোকে নিয়ে খালেদা জিয়ার রাজনীতি বিবেচনা করেই আওয়ামী লীগ এ রাজনৈতিক কৌশল নিয়েছে। ইসলামপন্থিদের একটা অংশকে কাছে রাখতে চাইছে আওয়ামী লীগ।

এটি ইসলামপন্থি দল নিয়ে বিএনপির কাউন্টার রাজনীতি। বিএনপি জোটের রাজনীতি মোকাবিলা করতে হলে আওয়ামী লীগকে ইসলামপন্থিদের নিয়ে মিত্র করার বিষয়টি স্বাভাবিক। তাতে সরকার রাজনৈতিকভাবে কতটুকু লাভবান হবেন, তা ভবিষ্যৎ বলবে; তবে এর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র নষ্ট হচ্ছে।

তবে হেফাজতের সঙ্গে সরকারের এমন সম্পর্কে ও দাবি মেনে নেওয়ার ঘটনায় ভীষণ ক্ষুব্ধ সরকারের শরিকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য সরানো এবং কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ সনদকে স্নাতকোত্তর মর্যাদা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় স্পষ্ট আপত্তি জানিয়েছে সরকারের শরিক দল জাসদ।

এ ব্যাপারে তথ্যমন্ত্রী ও দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এক বিবৃতিতে ‘তেঁতুল হুজুর গোষ্ঠী’র বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন। তারা বলেন, তেঁতুল হুজুর গোষ্ঠীর রাজনৈতিক অবস্থান শুধু সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধীই নয়, তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, সকল গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনবিরোধী অন্ধকারের শক্তি।

আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ের এসব ঘটনাপ্রবাহ এবং হেফাজতের সঙ্গে আপস অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক চেতনাবোধ ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্তকে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-ধারা থেকে পদস্খলন’ বলে মন্তব্য করেছেন।

ছাত্র ইউনিয়নের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বললেও হেফাজতে ইসলামের মতো সংগঠনগুলোর দাবিতে তার সায় জঙ্গিবাদে মদদ জোগাবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!