• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সুবিধাবঞ্চিতদের উন্নয়নে কৌশলপত্র তৈরি


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ১৪, ২০১৬, ০৯:২১ পিএম
সুবিধাবঞ্চিতদের উন্নয়নে কৌশলপত্র তৈরি

ঢাকা: সুবিধাবঞ্চিতদের উন্নয়নে সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র তৈরি করা হয়েছে। এই কৌশলপত্রটি বিবেচনায় রেখে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। কৌশলপত্র অনুযায়ী, বয়স্ক, বিধবা, দুস্থ মহিলা, দুগ্ধ দানকারী দরিদ্র মা, অসচ্ছল, প্রতিবন্ধী, মুক্তিযোদ্ধা, হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠী এ সুবিধা পাবে। একই সঙ্গে ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকজনিত প্যারালাইজড ও জন্মগত হৃদরোগীরাও এ সুবিধার  আওতায় আসবে।

এরই মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির উপকারভোগীর সংখ্যা ও ভাতা নির্ধারণ-সংক্রান্ত কমিটি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। একই সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল বাস্তবায়নসংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনাও তৈরি হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের প্রাথমিক কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে। এখন এসব কর্মপরিকল্পনা পর্যালোচনার কাজ চলছে।

সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলে নিরাপত্তা কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগগুলোকে পাঁচটি বিষয়ভিত্তিক ক্লাস্টার (ভাগ) গঠনের যে রূপরেখা দেয়া হয়েছে, তা কার্যকর করতে ইতিমধ্যে একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে।

তিনি জানান, এ ছাড়া ২৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তাদের এবং ২৬টি মন্ত্রণালয়ের ২৯৬ জন সরকারি কর্মকর্তাকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নসংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের ওপর ওরিয়েন্টেশন দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া আরো বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

সামাজিক নিরাপত্তা নিয়ে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) মূল্যায়ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির উপকারভোগীর সংখ্যা ও ভাতা নির্ধারণ-সংক্রান্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে কমিটিগুলো কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, তা-ও উল্লেখ রয়েছে। পদক্ষেপগুলো হলো বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৩১ লাখ ৫০ হাজার জনে এবং ভাতার হার ১০০ টাকা বৃদ্ধি করে ৫০০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।

বিধবা, স্বামী নিগৃহীতা ও দুস্থ মহিলা ভাতার হার ১০০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা এবং ভাতাভোগীর সংখ্যা বাড়িয়ে ১১ লাখ ৫০ হাজারে উন্নীত করা হয়েছে। ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট (ভিজিডি) কর্মসূচির উপকারভোগী দুস্থ মহিলার সংখ্যা দুই লাখ ৫০ হাজার বাড়িয়ে ১০ লাখে উন্নীত করা হচ্ছে। মাতৃত্বকালীন ভাতাভোগীর সংখ্যা প্রায় ৯০ শতাংশ বাড়িয়ে পাঁচ লাখে উন্নীত করা হবে। দেশের সব পৌরসভায় কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার (দুগ্ধ দানকারী মা) সহায়তা কর্মসূচি সম্প্রসারণের মাধ্যমে এক লাখ ৮০ হাজার ৩০০ জন দরিদ্র মাকে ভাতার আওতায় আনা হবে। এ ছাড়া অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতার হার ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৬০০ টাকায় এবং ভাতাভোগীর সংখ্যা ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে সাত লাখ ৫০ হাজার জনে উন্নীত করা হবে। আর নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টের তহবিলে আরো ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে।

এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা ভাতা আট হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা, হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রমের অধীনে বিশেষ ভাতা ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ভাতা ৪০০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা, চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচির বরাদ্দ ১০ কোটি থেকে বাড়িয়ে ১৫ কোটি টাকায় উন্নীত করা হবে।

এ ছাড়া ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকজনিত প্যারালাইজড ও জন্মগত হৃদরোগীদের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচির বরাদ্দ ২০ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৩০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হবে।

জিইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, দেশের দারিদ্র্য ও বৈষম্য হ্রাসে এবং জনসাধারণের জীবনমান উন্নয়নে ২০১৫ সালে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি প্রণয়ন করে সরকার। এ কৌশলের মাধ্যমে সব যোগ্য বাংলাদেশির জন্য এমন একটি সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে, যা দারিদ্র্য ও ক্রমবর্ধমান বৈষম্যকে কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করবে। এ ছাড়া বৃহত্তর মানব উন্নয়ন কর্মের সুযোগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে জীবনচক্রভিত্তিক সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪৫ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। এ বরাদ্দ মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং জিডিপির ২ দশমিক ৩১ শতাংশ। বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থায় বর্তমানে ১৪২টি কর্মসূচি রয়েছে। ২৩টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!