• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সেই খুনি এরশাদ শিকদারের নামে সরকারি স্কুল!


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১০, ২০১৭, ১০:৫৮ পিএম
সেই খুনি এরশাদ শিকদারের নামে সরকারি স্কুল!

খুলনা: নব্বই দশকের কুখ্যাত সন্ত্রাসী, খুনি ও মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর হওয়া এরশাদ শিকদারের নামে চলছে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। খুলনা নগরীর ৫নং ঘাট এলাকার ওই প্রতিষ্ঠানের নাম ‘এরশাদ আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’।

একজন জঘন্য খুনির নামে শিশুশিক্ষার আলো ছড়ানো ওই প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, পরিচালনা পর্ষদসহ এলাকাবাসী। তারা নাম পরিবর্তনে জোর দাবি জানালেও কোনো ফল হয়নি। বরং বহাল তবিয়তে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীই জানে এরশাদ শিকদারের সেই সিরিয়াল খুনের ঘটনা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কোমলমতি শিশুদের শিক্ষার আলো ছড়ানো প্রতিষ্ঠানটির নাম একজন ভয়ঙ্কর খুনির নামে হওয়ায় শিশুমন ও সমাজে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তারপরেও স্থানীয় শিক্ষা অফিস থেকে সাফ বলে দেয়া হয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ ছাড়া নাম পরিবর্তন সম্ভব নয়।

সরেজমিনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শনে গিয়ে কথা হয় এলাকাবাসীর সঙ্গে। তাদের অভিযোগ, নাম পরিবর্তনের বিষয়ে কোনো উদ্যোগই নেয়া হয়নি। এমনকি খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলী আজগর লবী ও খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বর্তমান সংসদ সদস্য তালুকদার আব্দুল খালেকও প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তনের পক্ষে মত দিয়েছেন। এরপরেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয়রা।

এরশাদ আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ফারহানা ও আরজু হাওলাদার, চতুর্থ শ্রেণির মেঘলা ও তন্নী জানায়, তারা সবাই খুনি এরশাদ শিকদারের অপরাধের কথা বড়দের মুখে শুনেছে।

সহকারী শিক্ষিকা রাবেয়া আকতার বলেন, এরশাদ শিকদার কুখ্যাত সন্ত্রাসী ছিল। ছোট বেলায় তো খবরে তার অপকর্মের কথা জেনেছি। গেল বছরের জুলাইয়ে স্কুলে জয়েন করেছি। স্কুলের নাম বলতে তাই অনেকের কাছেই খারাপ লাগে।

প্রধান শিক্ষক শওকত আলী শেখ বলেন, কিছুদিন আগে এরশাদ শিকদারের পরিবারের লোকজন স্কুল দেখতে এলে এলাকাবাসী তাদের অপমান করেছে।

এরশাদ আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সামছুজ্জামান মিয়া স্বপন বলেন, এলাকাবাসী স্কুলটির নাম পরিবর্তন চায়। তাদের সঙ্গে আমরাও একমত। তবে নাম পরিবর্তন করার প্রক্রিয়াটা অনেক জটিল, সময় সাপেক্ষ।

জানতে চাইলে খুলনা সদর থানার শিক্ষা কর্মকর্তা রীনা পারভীন বলেন, স্কুলটি রেজিস্টার থেকে সরকারি হওয়ায় জটিলতা অনেক। তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ ছাড়া কোনোভাবেই নাম পরিবর্তন যাবে না।

সূত্রমতে, বিগত ১৯৮৯ সালে রেলওয়ের ৪৯ শতক জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় ‘এরশাদ আলী প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামের ওই স্কুলটি। এরপর ১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি রেজিস্টার্ড হিসেবে স্বীকৃতি পায়। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে পহেলা জানুয়ারি সরকারিকরণ হলে প্রতিষ্ঠানের নাম ‘এরশাদ আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ করা হয়। বর্তমানে স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২২৮ জন। শিক্ষক রয়েছেন ৫ জন। সব ধরনের সরকারি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে স্কুলটি।

প্রসঙ্গত, ১৯৮৮ ও ১৯৯৪ সালে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঘাট শ্রমিক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এরশাদ শিকদার কমিশনার নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালের পর থেকে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। নামডাকের জন্য নিজের নামে ঘাট এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেন ওই রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়। পরবর্তীতে ভয়াবহ অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। তার বিরুদ্ধে পাঁচ ডজনের বেশি হত্যার অভিযোগ ছিল। বিচারে তার প্রাণদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়। ২০০৪ সালের ১০ মে খুলনা জেলা কারাগারে এরশাদ শিকদারের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়।

সোনালীনিউজ/এমএন

Wordbridge School
Link copied!