• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সেপ্টেম্বর মাস থেকে বাড়ছে গ্যাসের দাম


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ২৪, ২০১৬, ০৩:২৬ পিএম
সেপ্টেম্বর মাস থেকে বাড়ছে গ্যাসের দাম

গ্যাসের দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। কমিশন স্বাধীন হলেও এ খাতে ভর্তুকি থাকায় দাম বাড়ানোর আগে সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন হয় বলে জানান বিইআরসির এক সদস্য। তবে এরই মধ্যে দাম বাড়ানোর এই প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলার দায়িত্বশীল সূত্র এই তথ্য জানিয়ে বলেছে, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত প্রস্তাব ইতিমধ্যে জ্বালানি মন্ত্রণালয় পেট্রোবাংলায় পাঠিয়েছে। এখন তারা ওই প্রস্তাব এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে জমা দেবে। এরপর কমিশন আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেবে। ফলে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে বাড়তি দাম কার্যকর হতে পারে। আবাসিক খাতে এই দাম বৃদ্ধির হার বেশি।

প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত প্রস্তাব অনুযায়ী, আবাসিক খাতে দুই চুলার গ্যাসের জন্য বর্তমান দাম ৪৫০ থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করা হচ্ছে। বৃদ্ধির হার ১২২ দশমিক ২২ শতাংশ। আর এক চুলার গ্রাহকদের ক্ষেত্রে বর্তমান দাম ৪০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা করা হবে। এ ক্ষেত্রে দাম বাড়ার হার ১১২ দশমিক ৫০ শূন্য শতাংশ।

আবাসিক গ্রাহকদের মধ্যে যাঁরা মিটার ব্যবহার করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে প্রতি এক হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম বর্তমানে ১৪৬ টাকা ২৫ পয়সা। নতুন প্রস্তাবে এটা ২৩৫ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। বৃদ্ধির হার ৬০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। আবাসিক খাতের পরেই গ্যাসের সবচেয়ে বেশি দাম বাড়বে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ (বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য মালিকদের নিজস্ব উৎপাদিত) উৎপাদনে।

বর্তমানে এক হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ১১৮ টাকা ২৬ পয়সা। নতুন প্রস্তাবে তা ২৪০ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। বৃদ্ধির হার ১০২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। সিএনজির দাম বাড়বে ৩৩ শতাংশ। বর্তমানে সিএনজির প্রতি এক হাজার ঘনফুটের দাম ৮৪৯ টাকা ৫০ পয়সা। নতুন প্রস্তাবে তা করা হচ্ছে এক হাজার ১৩২ টাকা ৬৭ পয়সা। শিল্পে বর্তমানে প্রতি এক হাজার ঘনফুটের দাম ১৬৫ টাকা ৯১ পয়সা। এটা বেড়ে হচ্ছে ২২০ টাকা। বৃদ্ধির হার ৩২ দশমিক ৬০ শতাংশ।

বাণিজ্যিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে বর্তমান দাম ২৬৮ টাকা ৯ পয়সা, এটা হচ্ছে ৩৫০ টাকা। বৃদ্ধির হার ৩০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। সিএনজি খাতে গ্যাসের দাম এখন ৬৫১ টাকা ২৯ পয়সা। এটা বেড়ে হচ্ছে ৯০৫ টাকা ৯২ পয়সা। বৃদ্ধির হার ৩৯ দশমিক ১০ শতাংশ। চা-বাগানে ব্যবহৃত গ্যাসের বর্তমান দাম ১৬৫ টাকা ৯১ পয়সা। এটা করা হচ্ছে ২০০ টাকা। বৃদ্ধির হার ২০ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে গ্যাস দেওয়া হয় বর্তমানে সে রকম প্রতি এক হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ৭৯ দশমিক ৮২ টাকা। এটা হচ্ছে ৮৪ টাকা, বৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। সার উৎপাদনে বর্তমানে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ৭২ দশমিক ৯২ টাকা। এটা বৃদ্ধি পেয়ে হবে ৮০ টাকা। বৃদ্ধির হার ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ। জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলার সূত্র জানায়, এবারই প্রথম দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে সম্পদ হিসেবে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ২৫ টাকা ধার্য করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী এই প্রস্তাবেও অনুমোদন দিয়েছেন। এর ফলে বাপেক্সসহ বিভিন্ন গ্যাস উত্তোলনকারী কোম্পানি যে গ্যাস উত্তোলন করে, তার ওপর এই দাম ধার্য হবে। এখন পর্যন্ত উত্তোলনকারী কোম্পানিকে উত্তোলিত গ্যাসের জন্য কোনো দাম দিতে হয় না। এই অর্থ রাষ্ট্র পাবে। এদিকে, সর্বশেষ গ্যাসের দাম বেড়েছিল ২০০৯ সালের আগস্ট মাসে। এর তিন বছর পর অর্থাৎ ২০১২ সালে আবারও গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল সরকারি সংস্থা পেট্রোবাংলা।

কিন্তু সেই প্রস্তাব যথাযথ না হওয়ায় পুনরায় প্রস্তাব দেওয়ার আহ্বান জানায় বিইআরসি। পরে ২০১৪ সালের অক্টোবরে গ্যাসের দাম বাড়ানোর জন্য ফের প্রস্তাব পাঠায় পেট্রোবাংলাসহ গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠাগুলো। সে সময় পেট্রোবাংলা আবাসিক খাতে এক চুলার জন্য বর্তমান মূল্য ৪০০ টাকার স্থলে দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা ও দুই চুলার ক্ষেত্রে ৪৫০ টাকার স্থলে এক হাজার টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছিল। 

কিন্তু আবাসিক খাতের তুলনায় গ্যাসের দাম আনুপাতিক হারে কম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয় শিল্প, সার কারখানা, বিদ্যুৎ উৎপাদন কারখানা ও সিএনজির জন্য।  তার পরিপ্রেক্ষিতে আইনি বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে গণশুনানিও করে বিইআরসি। কিন্তু সেই সময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতা আর নানা খুঁটিনাটি বিষয় যাচাই-বাছাই করায় এতদিন সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি কমিশন। এখন সিদ্ধান্ত দেওয়ার মতো একটি অবস্থায় এসেছে তারা।

ছয় বছরেও গ্যাসের দাম না বাড়ানোকে ‘ভুল সিদ্ধান্ত’ উল্লেখ করে বিইআরসির সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ  বলেন, ২০০৯ সাল থেকে যে এ যাবৎ আমরা গ্যাসের দাম সমন্বয় করিনি সেটা আসলে আমাদের একটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। এটা গ্যাস সেক্টরের জন্য কোনো সুখবর নয়। আমরা আগামী দুই মাসের মধ্যে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে পারব। তবে দেশে বামপন্থী সংগঠনগুলোসহ বিভিন্ন মহল বরাবরই গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিরোধিতা করে আসছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম

Wordbridge School
Link copied!