• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হলিউড রিপোর্টারে ‘ডুব’-এর সমালোচনা


বিনোদন ডেস্ক আগস্ট ১৪, ২০১৭, ০৪:১৫ পিএম
হলিউড রিপোর্টারে ‘ডুব’-এর সমালোচনা

ঢাকা: বাংলাদেশে বহুল আলোচিত মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘ডুব’ সিনেমা নিয়ে একটি রিভিউ প্রকাশ করেছে হলিউড রিপোর্টার ডটকম। ‘জীবন ফুলশয্যা নয়’ শিরোনামে রিভিউটি করেছেন বিখ্যাত রিভিউয়ার দেবোরাহ ইয়াং।

বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনার ছবি ঢালিউডের বিখ্যাত পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর পরিচালনায় বলিউড অভিনেতা ইরফান খান নিয়ে এসেছে পরিবার ভাঙার গল্প। বিচ্ছেদের কাহিনী নিয়ে নির্মিত ছবিটি ইরফান খানের খ্যাতি ও উচ্চমাপের অভিনয়ে হয়েছে অসাধারণ।

লেখক ও পরিচালক বাংলাদেশের মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সূক্ষ্ণতা এবং বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে যেভাবে সবকিছু ফুটিয়ে তুলেছেন তাতে এই কাহিনী মেলোড্রামায় রূপান্তরিত হতে পারেনি।

দেশীয় সংস্কৃতির বাইরে গিয়ে একজন স্বনামধন্য চলচ্চিত্র নির্মাতা স্ত্রী ও কিশোর বয়সী সন্তানকে রেখে মেয়ের বান্ধবীকে বিয়ে করেন। এটা কোনো হত্যাকাণ্ডের কাহিনী নয়, বরং মানুষের অহংকার ও আত্মমর্যাদার কাহিনী, যা রাজধানী ঢাকার একটি মধ্যবর্তী পরিবারের অবস্থান পাল্টে দেয়।

চতুর এই চলচ্চিত্রকার কৌতুকময়ী চলচ্চিত্র ‘টেলিভিশন’ ও ‘পিপঁড়াবিদ্যা’র মত গল্প থেকে বের হয়ে ‘ডুব’ এর মত কাহিনী নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করেছেন। এতে আধুনিক মানের সেই পরিচিত পারিবারিক গল্প থাকলেও এর মধ্যে রয়েছে অন্যরকম তৃপ্তি। চলচ্চিত্রের দৃশ্যায়ন এবং গল্পের গতি প্রতিটি মানুষের হৃদয়কে ছুঁয়ে দেয়। ‘ডুব’ সাংহাই চলচ্চিত্র উৎসবেও সাড়া জাগানোর ক্ষমতা রাখে।

সিনেমার একটি দৃশ্য

লাইফ অব পাই, জুরাসিক ওয়ার্ল্ড এবং ইনফারনো-খ্যাত ইরফান খানের জন্য চলচ্চিত্রটি ভারতের বাজার মাতাবে তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু বাংলাদেশের সেন্সর বোর্ডে ছবিটি এই ফেব্রুয়ারি মাসে অনুমোদনের জন্য আটকে যায়। অনুমতি ছাড়া অন্যের পরিবারকে নিয়ে ছবিটির কাহিনী তৈরির জন্য কিছু সময়ের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এ অভিযোগ উঠিয়ে নেওয়া হলেও একজন পুরুষের বিচ্ছেদ এবং নিজের থেকে অনেক কম বয়সী নারীকে বিয়ে করার কাহিনীর জন্য সরকার রয়েছে দোলাচলে থাকলেও পরে ছবিটির সেন্সর ছাড়পত্র পায়। ছবিতে কামোদ্দীপক ও আবেদনময়ী দৃশ্য নেই বললেই চলে, তবুও বাস্তবধর্মী একটি রূপ রয়েছে।

মূল কাহিনিটি এরকম- জাভেদ হাসানের (ইরফান খান) একটি গোপন উদ্দেশ্য আছে। চারদিকে গুজব ছড়াচ্ছে যে, সে তার ছবির মূল অভিনেত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়েছেন। কিন্তু তার স্কুলশিক্ষক স্ত্রী মায়ার (রোকেয়া প্রাচী) কাছে সত্য জানানোর মতো সাহস ছিল না। সে মায়াকে গাড়িতে করে লং ড্রাইভে যায়। ধীরে ধীরে সত্যটা জানায়। মায়া যখন জাভেদকে দেখছিল, তার কাছে মনে হচ্ছিল জাভেদ উন্মাদ। জাভেদ জানায়, তাদের বৈবাহিক জীবন একঘেঁয়ে হয়ে উঠছে। অতীত জীবন তাদের ভিন্ন ছিল। মায়া হতবাক হয়ে যায়। জাভেদের সন্তানেরা যখন সব জানতে পারে, তারা কথা বলা বন্ধ করে দেয়। 

জাভেদ তার ফিল্ম স্টুডিওর একপাশে তৈরি করা ঘরে থাকা শুরু করে। নিজেকে সময় দিতে চায় এবং পৌতি নিতুকে (পার্ণো মিত্র) তার জীবন থেকে আলাদা করতে চায়। চলচ্চিত্র প্রযোজকের কন্যা সাবেরি (নুসরাত ইমরোজ তিশা) নিতুর সঙ্গে একই ক্লাসে পড়ত। দুজনেই স্কুলে পুরস্কার পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করে। কিন্তু এখানে যেন নিতুরই জয় হয়। পরস্পরকে চেনার কারণে দুজনের মধ্যে ভয়ঙ্কর বেদনার তৈরি হয়।

নিতু চলচ্চিত্র ছেড়ে দেয়, অন্যান্য আরো স্ক্যান্ডালের জন্য। কিন্তু একরাতে জাভেদকে সে পটায়, যা তার জন্য কঠিনও ছিল না। জাভেদের পরিবারের জন্য পরিস্থিতি মেনে নেয়া এবং তাকে ছাড়া থাকাটা কষ্টকর ছিল। সারা বিশ্ব তাকে সংবেদনশীল শিল্পী বলে চেনে। যখন তার পরিবার ও তরুণ নারীর মধ্যে একজনকে বেছে নেয়ার সময় হলো সে সবচেয়ে আত্মকেন্দ্রিক সিদ্ধান্ত নিল।

তিশা ও ইরফান খান

অন্যান্য প্রাণবন্ত চরিত্রের মধ্যে আছে নির্মাতার কন্যা সাবেরি। সে খুবই বাস্তবসম্মত, আবেগপ্রবণ ও শক্তিশালী চরিত্রে অভিনয় করেছে। প্রথমে সে রাগ হয় এবং লজ্জিতও হয়। পরে প্রতিহিংসা পরায়নণ হয়ে যায়। তার নিরপরাধ মাকে দোষারোপ করার ফলে সে বাবার জন্য ঘৃণা পোষণ করে। চলচ্চিত্রের শেষ দৃশ্যে উঁচু ঘাসের মাঠে পুরনো মোবাইল ফোন কলে মা ও মেয়ের ব্যথা উপশম করতে দেখা যায়।

বাংলাদেশের প্রখ্যত কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ুন আহমেদের জীবনীকে অবলম্বন করে নির্মিত সিনেমা ‘ডুব’ যৌথ চলচ্চিত্রের নীতিমালা মেনে তৈরি হয়নি বলে অভিযোগ করেন হুমায়ূন পত্নী মেহের আফরোজ শাওন।। তার কথা, অবশ্যই তার পরিবারের অনুমতি নেয়া উচিত ছিল ।

এরপর যৌথ চলচ্চিত্রের নীতিমালা মেনে গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রিভিউ কমিটির কাছে জমা দেয়া হয় সিনেমাটি। প্রিভিউ শেষে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এক অনাপত্তিপত্রের মাধ্যমে ছাড় দেয় কমিটি। কিন্তু তার এক দিন পরই ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টায় এক আদেশে অনাপত্তিপত্রটি স্থগিত করা হয়।    

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!