• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সার নিয়ে অনিয়ম, নির্যাতিত কৃষকদের মাঝে চরম উত্তেজনা


সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২১, ০২:০৫ পিএম
সার নিয়ে অনিয়ম, নির্যাতিত কৃষকদের মাঝে চরম উত্তেজনা

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে দেখা দিয়েছে সার সংকট। এর ফলে কৃষকরা তাদের জমির ফসল উৎপাদন নিয়ে হয়ে পড়েছে দিশেহারা। অভিযোগ উঠেছে ডিলাররা তাদের গুদামে পর্যাপ্ত পরিমান সার মজুত রেখে তৈরি করেছে সার সংকট। পরে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে। সার ডিলারদের এই অনিয়মের প্রতিবাদ করার কারণে কৃষকদেরকে হতে হচ্ছে লাঞ্চিত ও নির্যাতনের শিকার। কিন্তু এসব সমস্যা যেন দেখার কেউ নেই। একারণে হাওরাঞ্চলের কৃষকদের মাঝে চরম উত্তেজনা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে জানাগেছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়- জেলার ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর থানা সংলগ্ন মধ্যবাজারে বিসিআইসি অনুমোদিত সার ডিলার মন্তোষ চন্দ্র দেব ও তার ব্যবসায়িক পার্টনার শ্যামল রায়ের একটি সারের গুদাম রয়েছে। সেখানে সপ্তাহ খানেক ধরে ৫০ কেজি ওজনের এমওপি সার সরকার নির্ধারিত ৭৫০টাকার পরিবর্তে ৮৫০টাকায় বিক্রি করছে। গত শনিবার (১৩ই ফেব্রুয়ারী) বিকাল অনুমান ৩টার সময় মধ্যনগর ইউনিয়নের মাছিমপুর গ্রামের কৃষক বিজয় সরকার সার কিনতে গেলে ডিলাররা সারের দাম বেশি চায়। এনিয়ে প্রতিবাদ করার কারণে ডিলাররা দূর্ব্যবহার করে। এসময় পাশে থাকা একই ইউনিয়নের কান্দাপাড়া গ্রামের অন্য কৃষক প্রণব সরকার প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর করে ডিলাররা। এই বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকে এলাকার কৃষকদের মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

এব্যাপারে ভুক্তভোগী দুই কৃষক প্রণব সরকার ও বিজয় সরকার বলেন- আমাদের মধ্যনগর ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ কবির হোসেনের সামনে ডিলাররা বেশি দামে সার বিক্রি করার পরও তিনি এব্যাপারে কোন ভূমিকা নেয়নি। আমরা দুজন এব্যাপারে প্রতিবাদ করার কারণে ওই কৃষি কর্মকর্তার সামনেই সারের ডিলাররা আমাদেরকে মারধর করাসহ লাঞ্চিক করেছে। আমরা তাদের অন্যায় কাজের সুবিচার চাই।

অপরদিকে জামালগঞ্জ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ৬জন সার ডিলার থাকার পরও সারের সংকট দেখা দিয়েছে। কৃষক তাদের চাহিদা অনুযায়ী জমিতে সার দিতে পারছেনা। কারণ এক ওয়ার্ডের সার ডিলার অন্য ওয়ার্ডে অবৈধ ভাবে সার বিক্রি করছে বেশি দামে। কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী ডিলাররা সার সরবরাহ না করে তৈরি করেছে কৃত্রিম সংকট। পরে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে।

এব্যাপারে উপজেলার ফেনারবাঁক গ্রামের কৃষক রেন্টু সরকার, দেবল সরকার, নারায়ন সরকার ও নিরেশ সরকার বলেন- হাওর এলাকার মানুষের একমাত্র অবলম্বন হচ্ছে বোরো ফসল। কিন্তু আমাদের ওয়ার্ডে সারের ডিলার নাই। তাই খুচরা দোকান থেকে ১১০০টাকা বস্তা সার কিনতে হয়েছে। বেহেলী গ্রামের কৃষক আফাজ উদ্দিন, তাজুল ইসলাম, জম্মত মিয়া বলেন- বেশি লাভের আশায় ডিলাররা সার মজুত করে রেখেছে। যার কারণে সারের সংকট দেখা দিয়েছে। তাই সময় মতো জমিতে সার দিতে পারছিনা।

ভীমখালী ইউনিয়নের জল্লাবাজ গ্রামের কৃষক জিল্লুর রহমান,হাসান আলী,দিন ইসলাম বলেন- আমাদের ইউনিয়নের সার ডিলার জ্যোতিষ দাস এতদিন ৮৫০টাকা করে এক বস্তা সার বিক্রি করেছে। গত দুইদিন ধরে বলছে সার নাই। কিন্তু টাকা বেশি দিলে আবার সার পাওয়া যায়। গজারিয়া বাজারের সার ডিলার সোহেল রানা বলেন- অনেক দিন যাবত সার আসছে না। এজন্য যাদের কাছে সার আছে তারা বেশি দামে বিক্রি করছে।

সার নিয়ে কৃষক ও ডিলারদের সংঘর্ষের বিষয় নিয়ে ধর্মপাশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ নাজমুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন- কৃষক ও সার ডিলারদের মধ্যে একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে বলে জানতে পেরেছি। এব্যাপারে তদন্ত করে ডিলারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলার ধর্মপাশা ও জামালগঞ্জসহ তাহিরপুর,বিশ্বম্ভরপুর ও দিরাই-শাল্লা উপজেলাতে ও বোরো মৌসুমের শুরু থেকেই সার নিয়ে নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর পাওয়া গেছে। তাই এব্যাপারে জরুরী ভিত্তি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছেন হাওরাঞ্চলের ভুক্তভোগী লক্ষলক্ষ কৃষকগণ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!