• ঢাকা
  • শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

জমি দখল নিয়ে আট খুন


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ২৪, ২০২১, ১১:৫০ এএম
জমি দখল নিয়ে আট খুন

ঢাকা : রাজধানীর পল্লবীতে নিজ সন্তানের সামনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে সাহিনুদ্দিন হত্যা মামলায় আসামি মো. মনির বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, সাহিনের ঘাড়ে একের পর এক কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে এই মনির।

এদিকে, পল্লবীতে জমি দখলকে ঘিরে গত ৬ বছরে সাহিনুদ্দিনের আগে আরো ৮টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সাহিনুদ্দিন হত্যার পর বেরিয়ে আসছে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য। অন্যদিকে গ্রেপ্তারকৃত আরো ৩ আসামির চারদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।

বন্দুকযুদ্ধে মনির নিহত :  ডিএমপির গোয়েন্দা মিরপুর জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, গত শনিবার রাত আড়াইটার দিকে পল্লবীর সাগুফতা হাউজিং এলাকায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মিরপুর বিভাগের একটি জোনাল টিমের সঙ্গে বন্ধুকযুদ্ধে গুরুতর আহত হয় মো. মনির। পরে তাকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পুলিশের দুজন সদস্যও আহত হয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, নিহত মনির পল্লবীর চাঞ্চল্যকর সাহিনুদ্দিন হত্যা মামলার ৬ নম্বর আসামি। হত্যাকাণ্ডে সে সরাসরি জড়িত ছিল। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে পল্লবীর ইস্টার্ন হাউজিং এলাকায় ওই মামলার পাঁচ নম্বর আসামি মো. মানিক র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।

গত ১৬ মে বিকেলে জমির বিরোধের মীমাংসার কথা বলে সাহিনুদ্দিনকে পল্লবী থানার ডি-ব্লকের একটি গ্যারেজের ভেতর নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়। প্রকাশ্য দিবালোকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা আকলিমা বেগমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৭ মে পল্লবী থানায় হত্যা মামলা হয়।

মীমাংসার কথা বলে আগে থেকেই সাহিনকে ঘটনাস্থলে আসতে বলা হয়েছিল। প্রথমে সুমন, মনির, মানিক, হাসান, ইকবাল ও মুরাদসহ ১০-১২ জন ধারালো অস্ত্র দিয়ে সাহিনকে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। শেষ পর্যায়ে শরীরের ওপরের অংশে মনির এবং হাঁটু ও হাত-পায়ে কুপিয়ে মানিক মৃত্যু নিশ্চিত করে।

দখলবাজিতে ৮ খুন : পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাহিনুদ্দিন হত্যার ঘটনার আগে গত ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৮টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি ঘটনার পেছনেই ছিল জমি দখল। এক সময় মমিন বক্স ছিলেন মিরপুর এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক। রাজধানীর পল্লবীর ৯ নম্বর ও ১২ নম্বরে হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতার অভিযোগে তার নামে ছিল ১৮ মামলা। ২০১৫ সালের ৮ জুলাই মোহাম্মদপুর থেকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয় পল্লবীর ১২ নম্বরের টেকেরবাড়ির সামাদ বক্সের ছেলে মমিন বক্সকে। চার দিন পর কালশী ব্রিজ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার হয়।

২০১৫ সালের ১৪ মে বুড়িরটেকে দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় বঙ্গবন্ধু কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র চঞ্চল খুন হন। ওই হত্যা মামলায় মমিন বক্স ছিলেন প্রধান আসামি। পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে এ দুই খুনের মূল পরিকল্পনাকারী আমান। আমানের বিরুদ্ধে খুন, অপহরণসহ ১৪টি মামলা আছে। মমিন বক্সের পর খুন হন মাছ ব্যবসায়ী পাগলা খোকন ও ডি-ব্লকের স্থানীয় মিন্টু। এরপর কালাপানির মুসা, ডিওএইচএস সড়কে খুন হন বিহারী মোহাম্মদ আলী।

২০০৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সিরামিকের পেছনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় র‌্যাব-পুলিশের সোর্স আব্বাসকে। আব্বাস হত্যার পর আলোচনায় আসেন সাবেক এমপি এম এ আউয়াল। ওই সময় হ্যাভেলি প্রপার্টিজ গড়ে বুড়িরটেকে শুরু করেন দখলবাজি।

জমি দখল করাই যেন লক্ষ্মীপুরের সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব আউয়ালের নেশা। এজন্য মূল হাতিয়ার হিসেবে তিনি বেছে নেন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, হামলা ও মামলা। ওই এলাকায় জমি দখল নিয়ে বিরোধে এখন পর্যন্ত লাশ পড়েছে আটটি। সর্বশেষ প্রকাশ্য দিবালোকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় স্থানীয় জমির মালিক সাহিনুদ্দিনকে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, আউয়ালের বাড়ি লক্ষ্মীপুরে হলেও রাজত্ব কায়েম করেছেন রাজধানীর পল্লবীতে। মিরপুরের সিরামিকস এলাকার পূর্বপাশের সরকারি, খাস ও অন্যের জমি জোরপূর্বক দখলে নিয়ে হাউজিং প্রজেক্ট গড়েন। প্রথমে তিনি জমি কেনার প্রস্তাব দিতেন। প্রস্তাবে সাড়া না দিলে হামলা, তারপর মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করতেন। তাতেও কাজ না হলে খুন করতেও দ্বিধা করতেন না আউয়াল। এসব অপকর্মের জন্য তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন ক্যাডার বাহিনী। এসব বিষয়ে পুলিশে অভিযোগ করলেও কোনো লাভ হয়নি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

স্থানীয় লোকজন এবং পল্লবী থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পল্লবীর বাসিন্দা জয়নুদ্দিনের দুই ছেলে সাহিনুদ্দিন ও মাইনুদ্দিন। বংশগত এবং পারিবারিকভাবে তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল প্রায় ১২ একর জমি। সেই জমি দখল পেতে আউয়ালের সঙ্গে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত সাহিনুদ্দিনের পরিবারের।

নিহত সাহিনুদ্দিনের পরিবারের অভিযোগ, কয়েক বছর ধরে হ্যাভেলি কোম্পানির সঙ্গে তাদের বিরোধ চলছিল। একাধিকবার মামলা-হামলা চালিয়েও সাহিনুদ্দিনকে বাগে আনতে না পেরে সম্পর্ক ও যোগাযোগ বাড়ায় আউয়ালের লোকজন। তবে হ্যাভেলির সঙ্গে সমঝোতা করলেও জমির দখল না ছাড়ায় খুন করা হয় সাহিনুদ্দিনকে।

তিন আসামির রিমান্ড : চাঞ্চল্যকর এ খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত টিটু, শরিফ ও ইকবালকে ৪ দিনের করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ধীমান চন্দ্র মন্ডল রিমান্ডের এই আদেশ দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) সৈয়দ ইফতেখার হোসেন আসামিদের আদালতে হাজির করে প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে আসামিদের চারদিন করে রিমান্ডের আদেশ দেন। মামলায় লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এমএ আউয়ালসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। এদের মধ্যে সুমন ও রকি তালুকদার দোষ স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!