• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
শরিয়াহভিত্তিক ৯ ব্যাংকের আগ্রাসী ঋণ বিতরণ

১৭ ব্যাংক ঋণ সীমার বাইরে


আবদুল হাকিম  মার্চ ২১, ২০২৩, ১২:১৯ পিএম
১৭ ব্যাংক ঋণ সীমার বাইরে

ঢাকা: নিয়ম ভেঙে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আগ্রাসী ঋণ বিতরণ করছে। এতে ব্যাংক গ্রাহকদের বাড়তি ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। প্রচলিত ধারার ব্যাংকে আমানতের ৮৭ শতাংশ ও ইসলামি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকে ৯২ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করার বিধান থাকলেও তা মানছে না ব্যাংকগুলো। বেসরকারি খাতের ৯ ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি লঙ্ঘন করে অ্যাডভান্স ডিপোজিট রেশিও (এডিআর) বা ঋণ-আমানত অনুপাতসীমার বেশি ঋণ দিয়েছে। এটাকে ব্যাংকিং পরিভাষায় অ্যাডভান্স ডিপোজিট রেশিও (এডিআর) বা ঋণ-আমানত অনুপাত সীমা বলা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। 

আমানতকারীর ন্যূনতম সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ঋণ বিতরণে সীমা বেঁধে দেওয়া আছে। সীমারেখা টেনে দেওয়া হলেও অনেক ব্যাংকই তা মানছেনা। আমানত এবং ঋণের যে ভারসাম্যপূর্ণ শৃঙ্খলা থাকা দরকার, সেটা ভেঙে গেছে ১৭ ব্যাংকের। আগ্রাসী ঋণ দিয়ে প্রচলিত ও শরিয়াহভিত্তিক এসব ব্যাংক প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। আগ্রাসী ঋণ বিতরণ করায় ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে। আমানতকারীদের জন্যও বাড়তি ঝুঁকি বেড়েছে। এর মধ্যে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো আগ্রাসী ঋণ বিতরণে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। মূলত অনিয়ম, দুর্নীতি এবং বেনামি ঋণের কারণেই ১৭ ব্যাংকের ঋণশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, প্রচলিত ধারার ব্যাংক ১০০ টাকা আমানতের মধ্যে ৮৭ টাকা এবং ইসলামী ধারার ব্যাংক সর্বোচ্চ ৯২ টাকা ঋণ দিতে পারে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত এবি ব্যাংকের এডিআর দাঁড়িয়েছে ৯৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ব্যাংকটির ইসলামিক উইন্ডোর এডিআর দাঁড়িয়েছে ১০৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। প্রচলিত ধারার স্টান্ডার্ড ব্যাংক ১০০ টাকার আমানতের মধ্যে ৯৬ টাকারও বেশি ঋণ বিতরণ করেছে। ওয়ান ব্যাংকের এডিআর দাঁড়িয়েছে ৮৯ শতাংশ। গত জানুয়ারি পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের এডিআর ৯১ দশমিক ১৭ শতাংশ।  আলোচিত সময়ে আইএফআইসি ব্যাংকের এডিআর দাঁড়িয়েছে ৮৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এনআরবি ব্যাংকও সীমার অতিরিক্ত ঋণ দিয়েছে। এছাড়া কমিউনিটি ব্যাংকের এডিআর ৮৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। প্রিমিয়ার ব্যাংকের ইসলামিক উইন্ডোর এডিআর দাঁড়িয়েছে ১৫৫ দশমিক ৯ শতাংশ। আর কমার্স ব্যাংকের ইসলামিক উইন্ডোর এডিআর ১৩৩ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

তবে প্রচলিত ধারার চাইতে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো আগ্রাসী ঋণ বিতরণে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে। এক্সিম ব্যাংক তাদের জমাকৃত আমানতের চেয়েও বেশি ঋণ দিয়েছে। গত ২৬ জানুয়ারি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকটির এডিআর দাঁড়িয়েছে ১০০ দশমিক ২৮ শতাংশ। চতুর্থ প্রজন্মের গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের এডিআর দাঁড়িয়েছে ১০২ দশমিক ২৭ শতাংশ। কমার্স ইসলামি ব্যাংকের এডিআর দাঁড়িয়েছে ১৩৩ দশমিক ২৭ শতাংশ। ফাস্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের এডিআর ১০৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ। ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশের এডিআর ৯৩ দশমিক ১ শতাংশ। এনআরবিসি ব্যাংকের ইডিআর দাঁড়িয়েছে ৮৮ দশমিক ৮ শতাংশ। স্যান্ডার্ড ব্যাংকের এডিআর দাঁড়িয়েছে ৯৬ দশমিক ২৮ শতাংশ। সোস্যাল ইসলামি ব্যাংকের এডিআর দাঁড়িয়েছে ৯৬ দশমিক ৮১ শতাংশ। ইউনিয়ন ব্যাংকের এডিআর দাঁড়িয়েছে ১০৪ দশমিক ৪ শতাংশ। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘আমানতের বিপরীতে কত টাকা ঋণ দিতে পারবে এর একটি সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। তবে ব্যাংকগুলোর এ অনুপাত বিভিন্ন সময় ওঠানামা করে। কারণ কোনো ব্যাংকের যদি বড় একটি আমানত আসে তাহলে তাদের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা বেড়ে যায়। একইভাবে হঠাৎ করে কোনো গ্রাহক আমানত তুলে নিলে তখন ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। তখন সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের এডিআর সীমার বাইরে চলে যায়। এছাড়া ঋণ আদায়ে বিশেষ ছাড় দিলেও এটা হতে পারে। বিষয়টি সাময়িক এবং আপেক্ষিক। তবে দীর্ঘদিন ধরে কোনো ব্যাংক এডিআর সীমার বাইরে থাকলে সে ব্যাংককে অবশ্যই চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হবে। অস্বাভাবিক কিছু ঘটলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’

ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলোকে নির্ধারিত আইনে বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে টানা পাঁচবার এডিআর সমন্বয়ের সময়সীমা বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও অনেক ব্যাংক এটি সমন্বয় করতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে গতিশীলতা আনা, ব্যাংকিং খাতের সার্বিক তারল্য পরিস্থিতির উন্নয়নে এডিআর ২ শতাংশ বাড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরেও সীমা লঙ্ঘন করে আমানতকারীদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছে।

সোনালীনিউজ/এম

Wordbridge School
Link copied!