• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

রাকসুর ভোটগ্রহণ চলছে, উৎসবের আমেজ কেন্দ্রে কেন্দ্রে


রাবি প্রতিনিধি অক্টোবর ১৬, ২০২৫, ০৯:৩৪ এএম
রাকসুর ভোটগ্রহণ চলছে, উৎসবের আমেজ কেন্দ্রে কেন্দ্রে

অবশেষে শুরু হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে । সকাল থেকেই কেন্দ্রের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন ভোটাররা। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি ও হল সংসদ নির্বাচন। প্রার্থীদের প্রচারণা, ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি প্রান্ত। শিক্ষার্থীরা বলছেন, এত বছর পর ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেয়ে তারা উচ্ছ্বসিত। প্রার্থীরাও শিক্ষার্থীদের একাডেমিক সমস্যা, বাসস্থান সংকট, মানসম্মত খাবার ও যৌক্তিক ফি কাঠামোসহ নানা দাবি ইশতেহারে তুলে ধরেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, জুলাই অভ্যুত্থানের পর যে পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে, এই নির্বাচন সেই পরিবর্তনকে স্থায়ী করবে। দীর্ঘদিনের প্রভাব-প্রতিদ্বন্দ্বিতার রাজনীতি পেরিয়ে এবার শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি নির্বাচিত হোক গণতান্ত্রিক ও অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ায়—এমনটাই আশা সবার।

রাকসুর ৬৩ বছরের ইতিহাসে এটি ১৫তম নির্বাচন। পাকিস্তান আমলে অনুষ্ঠিত হয়েছিল সর্বাধিক ৮টি নির্বাচন। স্বাধীনতার পর ৫ দশকে নির্বাচন হয়েছে মাত্র ছয়বার। সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালে, যেখানে সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হয়েছিলেন রুহুল কবির রিজভী। এরপর তিন দশক ধরে ছাত্র সংসদ কার্যত অচল হয়ে পড়ে।

এবারের নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। রাকসুর ২৩টি পদের বিপরীতে লড়ছেন ৩০৫ জন, সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি ৫টি পদে ৫৮ জন এবং ১৭টি হলে হল সংসদের ১৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫৫৫ জন প্রার্থী। মোট ৪৩টি পদের জন্য প্রার্থী হচ্ছেন ৯১৮ জন—যা রাকসুর ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

মোট ভোটার ২৮ হাজার ৯০১ জনের মধ্যে ছাত্রী ১১ হাজার ৩০৫ এবং ছাত্র ১৭ হাজার ৫৯৬ জন। ৯টি ভবনে ১৭টি কেন্দ্র ও ৯৯০টি বুথে ভোটগ্রহণ চলছে।

রাকসু ইতিহাসে এবারই প্রথম ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে আবাসিক হলের বাইরে। ক্যাম্পাসের নির্ধারিত একাডেমিক ভবনগুলোতে স্থাপন করা হয়েছে কেন্দ্র। উদাহরণস্বরূপ, সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজী ভবনে ভোট দেবেন জুলাই-৩৬ ও রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা, মমতাজ উদ্দিন কলা ভবনে মন্নুজান হলের ভোটাররা এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভবনে ভোট দেবেন তাপসী রাবেয়া, খালেদা জিয়া ও রহমতুন্নেসা হলের শিক্ষার্থীরা।

ভোটের নিয়মাবলি

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রতিটি ভোটারকে নিজের স্টুডেন্ট আইডি কার্ডসহ উপস্থিত হতে হবে এবং শুধুমাত্র নির্ধারিত কেন্দ্রে ভোট দিতে পারবেন। ভোটের আগে আঙুলে দেওয়া হবে অমোচনীয় কালি। পছন্দের প্রার্থীর নামের পাশে থাকা ঘরে ক্রস (×) চিহ্ন দিতে হবে।
ভোটকেন্দ্রের ৫০ মিটারের মধ্যে অবস্থান, প্রচারণা বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস বহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা মানতে হবে প্রত্যেককে।

রাকসুর গৌরবময় ঐতিহ্য

১৯৫৬-৫৭ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তখন নাম ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্টস ইউনিয়ন। ১৯৬২ সালে এটি “রাকসু” নামে পুনর্গঠিত হয়।
৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে রাকসু ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নেতৃত্ব গঠনের অন্যতম উৎস এই ছাত্র সংসদ।

তবে ৯০-এর দশকের পর রাকসু কার্যত অদৃশ্য হয়ে যায়। মাঝে কয়েকবার আন্দোলন হলেও নির্বাচনের ঘোষণা বাস্তবায়িত হয়নি। অবশেষে তিন যুগের বেশি সময় পর আবারও ব্যালট বাক্সে ফিরছে রাবির শিক্ষার্থীরা—যা শুধু রাবি নয়, পুরো দেশের ছাত্ররাজনীতির ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে থাকবে।

Wordbridge School
Link copied!