ঢাকা: মিউজিক ভিডিওর মডেল ও নায়ক পরিচয় ছাপিয়ে সম্প্রতি গায়ক বনে গেছেন আলোচিত-সমালোচিত মুখ হিরো আলম। এবার গায়ক হওয়ার পেছনের রহস্য উন্মোচন করলেন হিরো আলম নিজেই। তার দাবি, ‘এ’ গ্রেড শিল্পীদের প্রতি ক্ষোভই তাকে আস্তে আস্তে গায়ক বানিয়ে দিয়েছে।
সম্প্রতি বহু প্রতিভার অধিকারী আলোচিত এ গায়কের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে কথা হয় সোনালীনিউজের। মুঠফোনে আলাপচারিতার কিছু অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
সোনালীনিউজ: মডেল, নায়ক, রাজনীতিসহ বেশ কিছু অঙ্গনের পর এবার গানের জগতে আসলেন, সময়টা কেমন যাচ্ছে?
হিরো আলম: গানে সময়টা বেশ ভালো যাচ্ছে। সখের বসে গান করি। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করি। ভক্তদের ভালো সাড়া পাচ্ছি।
সোনালীনিউজ: দর্শকরা আপনার গানকে কতটা সাপোর্ট করছে?
হিরো আলম: দর্শকরা আমার গান শুনে এনজয় করে। নেগেটিভ কিংবা পজেটিভ যেভাবেই হোক না কেন তারা আমার গান নিয়ে এনজয় করে। তারা আমার গান শুনে ও দেখে আমাকে সাপোর্ট করে।
সোনালীনিউজ: গান দিয়ে আপনি দর্শকদের মানুষিকভাবে নির্যাতন করছেন- এমনটা কী আপনার মনে হয় না?
পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে হিরো আলম: আপনি কি আমার গান শুনেছেন? আপনি যদি আমার গান শুনে থাকেন তবে আপনার কি মনে হয়েছে? আমি কি গাইতে পারি না? দর্শকরা আমার গান কিভাবে পছন্দ করেছে তা তাদের কাছে জিজ্ঞেস করুন। তারা আমার গান পছন্দ করছে বলেই আমি গান গাই।
সোনালীনিউজ: গান গাওয়া কেন শুরু করলেন?
হিরো আলম: আমার ইউটিউব চ্যানেলের জন্য মিউজিক ভিডিও বানাতে এবং আমার অভিনীত সিনেমায় ব্যবহারের জন্য বড় বড় শিল্পীদের কাছে আমি গান চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাকে গান না দিয়ে অপমানজনক কথা-বার্তা বলেছে। যাতে আমার সম্মানে আঘাত লেগেছে। সেই ক্ষোভ থেকেই পরবর্তীতে আমি গান গাওয়া শুরু করেছি।
সোনালীনিউজ: বড় বড় শিল্পীদের বলতে কাদেরকে বুঝাচ্ছেন, তাদের দু’একজনের নাম বলুন?
হিরো আলম: আমি কারো নাম বলতে চাই না। শুধু এতটুকু বলি, আমি যাদের গান চেয়েছিলাম তারা দেশের ‘এ’ গ্রেডের শিল্পী। তারা বলেছে, তারা আমাকে গান দিলে তাদের সম্মানহানী হবে।
সোনালীনিউজ: আপনার গাওয়া গানে জনপ্রিয় কোনো মডেলকে অভিনয় করতে দেখা যাবে কিনা?
হিরো আলম: শিগগিরই আমার একটা মুভি আসতেছে। সেই মুভিতে আমার গানে দেশের নামি একজন হিরোইনকে অভিনয় করতে দেখা যাবে। এই মুর্হূতে আমি তার নামটা বলতে চাই না।
হিরো আলম নামে পরিচিতি পেলেও তার আসল নাম আশরাফুল আলম সাঈদ। ১৯৮৫ সালের ২০ জানুয়ারি বগুড়া জেলায় জন্ম তার। পিতার নাম আব্দুর রাজ্জাক, মা আশরাফুন বেগম। ছোটবেলা থেকেই অভাব-অনটনের সাথে চলা আলমের পরিবার তাকে আরেক পরিবারের হাতে তুলে দেয়। আলম চলে আসেন একই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের বাসায়। আব্দুর রাজ্জাক তাকে ছেলের মতো করেই বড় করে তোলেন। স্নেহ করতেন। কিন্তু গ্রামে অভাব তো প্রায় মানুষের আছে। আলমের পালক পিতা আব্দুর রাজ্জাকের সংসারও অভাবের ছোঁয়া পায়। স্থানীয় স্কুলে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে আলমকে নেমে পড়তে হলো জীবিকা নির্বাহের তাগিদে। সিডি বিক্রি থেকে আলম ডিশ ব্যবসায় হাত দিয়ে সফলতা অর্জন করেন।
সিডি ব্যবসার শুরু থেকেই হিরো আলম ক্যাসেটে মডেলদের ছবি দেখতেন। সেই থেকে মাথায় আসে মডেল হওয়ার। ২০০৮ সালেই করে ফেলেন একটা গানের মডেলিং। সেটাই ছিল শুরু। এরপরে সেসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে সংসারে মনোযোগী হন। ২০০৯ সালে বিয়ে করেন পাশের গ্রামের সুমী নামের এক তরুণীকে। আলম সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়লেও সুমী পড়েছেন এসএসসি পর্যন্ত।
হিরো আলমের ইউটিউবে আপলোড করা গানের ভিডিও নিয়ে ২০১৬ সালের দিকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুকে বাংলাদেশের ব্যবহারকারীরা ট্রল এবং মিম তৈরি শুরু করলে দ্রুতই তিনি পরিচিত হয়ে উঠেন। বর্তমানে হিরো আলম সিনেমাতে হিরোর ভূমিকায় অভিনয়ও করছেন, আবার গানও গাইছেন। অন্যদিকে ইউটিউব ভিত্তিক প্রচারিত মডেল গানে ও নাটকেও অভিনয় করছেন তিনি। বর্তমানে তার অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ৮ লাখ ৩ হাজারেরও বেশি সাবস্কাইব রয়েছে।
এছাড়াও ২০১৮ সালে হিরো আলম একাদশ সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসনে প্রার্থী হয়ে তুমুল আলোচিত হন।
সোনালীনিউজ/এমএইচ/এআই
আপনার মতামত লিখুন :