ছবি: সংগৃহীত
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখে প্রহসনের লটারীর মাধ্যমে ৩৭তম বিসিএসের ১৬৬ জনকে ইউএনও হিসেবে পদায়ন ও ৩৫ ও ৩৬ ব্যাচের ১৫৮ জনকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এই প্রজ্ঞাপনে দেখা যাচ্ছে, ঘোলাটে লটারীর আড়ালে আওয়ামী সুবিধাভোগী ও ফ্যাসিবাদমনা কর্মকর্তাদের ঢাকা ও আশেপাশের উপজেলায় পদায়ন করা হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদায়নের পেছনে মূলভাবে কাজ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি উইংয়ের সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন যুগ্মসচিব মিয়া আশরাফ রেজা ফরিদী, তার ডানহাত উপসচিব তৌহিদ বিন হাসান এবং নতুনভাবে যুক্ত হয়েছেন মো. উজ্বল হোসেন।
সিন্ডিকেটের কাজের ধরন মূলত বদলি ও পদোন্নতি নিয়ন্ত্রণ, ফাইল ও অনুমোদন বাণিজ্য, দলবদ্ধ লবিং, অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার। সিন্ডিকেটের ভেতরে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে মাঠপর্যায়ের কর্মচারী পর্যন্ত চেইন তৈরি রয়েছে।
মিয়া আশরাফ রেজা ফরিদী সাবেক সময়ে আওয়ামী সুবিধাভোগী কর্মকর্তা ছিলেন। ৫ আগস্ট, ২০২৪ এর পর তিনি নিজের প্রভাব খাটিয়ে অনেক কর্মকর্তার ভাগ্য নির্ধারণ করছেন। তার শ্যালক ও ব্যাচমেট ছিলেন আওয়ামী ফ্যাসিবাদী কর্মকর্তা।
উপসচিব তৌহিদ বিন হাসান সিন্ডিকেটের ডানহাত হিসেবে পদায়ন, পিএস নিয়োগ, ইউএনও/এডিসি/ডিসি নিয়োগসহ বিভিন্ন শাখার কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করেন। তিনি ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে ভোটভাঙচুরে যুক্ত ছিলেন।
নতুন সদস্য মো. উজ্বল হোসেন ৩৪ ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি ফ্যাসিবাদী আমলে নারায়ণগঞ্জের ডিসি রাব্বী মিয়ার ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে সিন্ডিকেটের কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করছেন।
প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেখা যায়, শিবালয়, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন উপজেলায় ফ্যাসিবাদমনা কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হয়েছে। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠদের মাধ্যমে এই সিন্ডিকেট প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে পুনর্বহাল করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সিন্ডিকেটের এই পদায়ন প্রক্রিয়া দেশকে ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের মূল চেতনার বিপরীতে ফেরাতে চেষ্টা করছে। ডিজিটালাইজেশন, স্বচ্ছ নীতি, জবাবদিহিতা ও জনচাপ ছাড়া সিন্ডিকেটের প্রভাব দুর্বল করা কঠিন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সিন্ডিকেট শুধু ইউএনও পদায়নেই সীমাবদ্ধ নয়। তারা স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থ মন্ত্রণালয়েও প্রভাব বিস্তার করছে। সিন্ডিকেটের হাতে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো থাকায় ভবিষ্যতের প্রশাসনিক নীতি ও নির্বাচন প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এই সিন্ডিকেটের প্রভাবের কারণে দেশের প্রশাসনিক ও নির্বাচনী পরিবেশে স্বচ্ছতা ও ন্যায়পরায়ণতা বজায় রাখা আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে।
তথ্য সূত্র: জুলাই রেভ্যুলেশনারী এলায়েন্স ফেসবুক পেজ
এসএইচ







































