• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্লাস্টিকদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি


কাজী মোহাম্মদ হাসান জানুয়ারি ২০, ২০২১, ০২:২৭ পিএম
প্লাস্টিকদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি

ঢাকা : বর্তমানে সামাজিক পরিবেশ বিভিন্নভাবে দূষিত হচ্ছে। তার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে প্লাস্টিক বা পলিথিন ব্যবহার করে। পলিথিন আমাদের পরিবেশকে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের জন্য প্রতিদিনই পলিথিন এবং প্লাস্টিক ব্যবহার করা হচ্ছে। এগুলো ব্যবহারের পর বর্জ্য হিসেবে ড্রেন, রাস্তাঘাট, মাঠে-ময়দানে, নদী-নালা, খাল-বিল এবং ফসলের মাঠে ফেলা হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর লাখ লাখ টন প্লাস্টিকের বর্জ্য নদী-নালা, খাল-বিলে বা নির্দিষ্ট জায়গায় না ফেলে যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে। মানুষের অসচেতনতাই সাধারণত এই দূষণের জন্য দায়ী। সাধারণত জনগণ প্লাস্টিক ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে না জেনেই ব্যবহার করছে এবং ব্যবহার শেষে যত্রতত্র ফেলছে।

প্লাস্টিক পচতে প্রচুর সময় লাগে, যাকে অপচ্য পদার্থও বলা হয়। এটি পচতে প্রচুর সময় লাগার কারণে প্লাস্টিক পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে থাকে। প্লাস্টিকের বর্জ্যগুলো বৃষ্টি হলে বা বর্ষাকালে কৃষকের জমিতে গিয়ে পড়ে, এতে করে কৃষিজমি দিন দিন উর্বরতা হারাচ্ছে, জমিতে আশানুরূপ ফসল ফলে না। প্লাস্টিক বর্জ্যগুলো উদ্ভিদকুলের জন্য এক প্রকার অভিশাপ বটে। প্লাস্টিক বর্জ্যগুলো নদী-সাগরে মিশে গিয়ে নদী বা সাগরে থাকা প্রাণীর পাকস্থলীতে প্রবেশ করে। এই প্লাস্টিক বর্জ্যগুলো হজম না হওয়ার কারণে প্রাণী দেহের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে, যার দরুন অনেক প্রাণী মারা যায়। যা কি না আমাদের জীববৈচিত্র্যের জন্য মঙ্গলকর নয়। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখতে পেয়েছেন, প্লাস্টিক বর্জ্যগুলো পাখির দেহেও প্রবেশ করতে পারে খাবার গ্রহণ করার সময়। তাই পাখিরাও এই প্লাস্টিক দূষণের হাত থেকে নিরাপদ নয়। প্লাস্টিক এমন এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ যা মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে নানা রোগ হতে পারে। তার মধ্যে ক্যানসারের মতো মরণব্যাধিও হতে পারে। প্লাস্টিক বর্জ্যগুলো শহরের ড্রেনগুলোতে আটকে থাকার কারণে হালকা বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি জমে যায়। উদাহরণ, বর্ষা মৌসুমে রাজধানী ঢাকার পথঘাট। প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে ড্রেনগুলোর মুখ বন্ধ থাকায় স্বাভাবিক গতিতে পানি সরে যেতে পারে না বিধায় বর্ষাকালে রাজধানীতে দেখা দেয় জলজট। বর্ষাকালে জমে থাকা পানি বের হতে না পারার কারণে রাস্তায় পানি জমে থাকে, যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারে না, আবার পানি জমে থাকার কারণে রাস্তাগুলোর মারাত্মক ক্ষতি হয়ে থাকে। অনেক সময় ধরে রাস্তায় পানি জমে থাকার কারণে রাস্তাগুলো নষ্ট হচ্ছে, রাস্তার মধ্যে গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। অথচ প্রতি বছর প্রশাসন এই রাস্তাগুলো মেরামত করতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে থাকে। তা ছাড়া রাস্তা ঠিক না থাকার কারণে জনগণ যেমন ভোগান্তিতে পরে, তেমনি বিভিন্ন রোগের প্রাদর্ভাবও দেখা দেয়। এডিস মশা, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া এরই প্রতিফল।

২০০২ সালে বাংলাদেশে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ আইন করা হয়। কিন্তু এই আইন অকার্যকর বললেই চলে। কেননা বাংলাদেশে দিন দিন এই প্লাস্টিকের তৈরি তৈজস ব্যবহার যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি পলিথিনের ব্যবহারও যেন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। এখন পরিবেশ আইনের কঠোর প্রয়োগ ছাড়া এর হ্রাস কিছুতেই সম্ভব নয়। বাংলাদেশ একটি জনবসতিপূর্ণ ছোট দেশ। ছোট আয়তনের এই দেশটিতে দিন দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি প্রতিনিয়ত এভাবে প্লাস্টিক ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পায় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের পরিবেশের জন্য ভয়ংকর বিপদ অপেক্ষা করছে। এসব প্লাস্টিক বর্জ্য সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করতে হবে। এগুলো যাতে বাজারজাতকরণ বা উৎপন্ন করতে না পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তারও আগে প্রয়োজন এর সর্বতো ব্যবহার বন্ধে সরকারের সদিচ্ছা। নতুবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা প্রশাসন ইচ্ছা কররেও তা পারবে না।

এমতাবস্থায় প্লাস্টিক কেবল বিশেষ প্রয়োজনীয় কাজের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ব্যবহার করার পর এগুলো যত্রতত্র না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। প্রশাসনকে এদিকেও বিশেষ নজর দিতে হবে। মানুষকে এই প্লাস্টিক যত্রতত্র ফেলার কারণে কী কী সমস্যা হতে পারে বা আমাদের পরিবেশের জন্য প্লাস্টিক ক্ষতিকর সেটা বোঝাতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ ও পরিকল্পনা। বিভিন্ন সচেতনমূলক বিজ্ঞাপন দিয়ে বা গ্রামে গ্রামে, মহল্লায়-পাড়ায়, এমনকি শহুরে জীবনেও সাধারণ জনগণকে বোঝাতে হবে এবং তাদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশ পাটশিল্পের জন্য বিখ্যাত। আমাদের পাটের হূতগৌরব এক্ষেত্রে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। প্লাস্টিক বা পলিথিন ব্যবহাররের পরিবর্তে আমরা পাটের তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার করতে পারি। আমরা যদি দেশীয় পাটের তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার করি, আমাদের পরিবেশ যেমন সুরক্ষিত থাকবে, তেমনি দেশের অর্থনীতির চাকাও সচল থাকবে। ক্রমান্বয়ে দেশীয় পণ্যের ওপর মানুষের নির্ভরশীলতাও বৃদ্ধি পাবে। এতে করে পাটশিল্পের উন্নতি ঘটবে এবং দেশের অর্থনীতিও স্বাবলম্বী হবে। এ দেশ এগিয়ে যাক বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, এমনটি প্রত্যাশা।

লেখক : শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!