ছবি: সংগৃহীত
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দ্রুত প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ইতিমধ্যে দলটি প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা দিয়েছে, চূড়ান্ত তালিকাও প্রায় প্রস্তুত। ডাকসুসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্র সংগঠনের জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে এবার জাতীয় নির্বাচনেও ইনক্লুসিভ ও তরুণ নেতৃত্বকে অগ্রাধিকার দিয়েছে দলটি।
প্রাথমিকভাবে ঘোষিত ৩০০ আসনের তালিকা বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই যুব প্রার্থী। দলের নেতাদের মতে, সংগঠনগতভাবে শৃঙ্খল জামায়াত খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারে। মনোনয়ন নিয়ে দ্বন্দ্ব বা বিক্ষোভ সামনে আসে না বললেই চলে, যা তাদের প্রস্তুতিকে আরও এগিয়ে দিয়েছে।
হাইকোর্ট গাজীপুর-৬ আসনের গেজেট বাতিলের রায় দেওয়ার আগেই ওই আসনে তুরস্কের তুকাত গাজী উসমান পাশা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহমানকে প্রার্থী ঘোষণা করে জামায়াত। আমিরের ডাকে শিক্ষকতা ছেড়ে দেশে ফিরে এসেছেন তিনি। তার দাবি, এক-তৃতীয়াংশ প্রার্থীর বয়স ৪০-এর নিচে, অনেকের বয়স আবার ৩০ থেকে ৩২ বছরের মধ্যে। মানবিক বাংলাদেশ গড়ার জামায়াতের পরিকল্পনায় তরুণদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে বলেও তিনি মনে করেন।
নির্বাচন কমিশনের হিসেবে দেশে মোট ভোটার ১২ কোটি ৬১ লাখ ৭০ হাজার ৯০০ জন। এর মধ্যে ১৮ থেকে ৩৩ বছর বয়সী যুবক ৪ কোটির বেশি, যা মোট ভোটারের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এই বিশাল তরুণ ভোটারকে কাছে টানতে পারলে বড় চমক দেখাতে পারবে-এমনটাই ভাবছে জামায়াত। সেই অনুযায়ী প্রার্থীতায়ও সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছেন যুব নেতৃত্ব।
ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে প্রায় ৮০ জন যুবক। তাদের ৭০ শতাংশের বয়স ৫০ বছরের কম। আবার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রার্থী এক সময় ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা ছিলেন। ঘোষিত তালিকায় ১৬ জন আছেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি-যাদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান নায়েবে আমির ডা. আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, কেন্দ্রীয় নেতারা রফিকুল ইসলাম খান, নুরুল ইসলাম বুলবুল, ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, মো. সেলিম উদ্দিন, মো. রেজাউল করিমসহ আরও অনেকে।
দণ্ডপ্রাপ্ত নেতাদের পরিবারের মধ্য থেকেও প্রার্থী হয়েছেন কয়েকজন। পাবনা-১ আসনে ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেন, পিরোজপুর-২ এ শামীম সাঈদী, পিরোজপুর-১ এ মাসুদ সাঈদী এবং ঢাকা-১৪ এ ব্যারিস্টার আরমান মীর কাসেম আলী। কুষ্টিয়া-৩ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে আলোচিত বক্তা মুফতি আমির হামজাকে।
ঢাকা-১১ আসনে প্রার্থী বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান মনে করেন, সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানে তরুণদের ভূমিকা প্রমাণ করেছে, জাতীয় নির্বাচনে দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে জনগণের প্রত্যাশাও তরুণদের দিকে। তিনি বলেন, তরুণ প্রার্থীরাই মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন এবং যুব ভোটারদের কাছে টানতে পারছেন।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম জানান, শিক্ষা, পেশাগত যোগ্যতা ও মাঠের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় তরুণদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক তালিকায় থাকা সবার মাঠের কাজ পর্যবেক্ষণ করে চূড়ান্ত তালিকা দেওয়া হবে। সেখানে নতুন ও আরও তরুণ প্রার্থীর নামও থাকতে পারে।
প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রচার বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। তিনি বলেন, তৃণমূলের পরামর্শ এবং বিভিন্ন পেশাদার প্রতিষ্ঠানের করা জরিপ-এই দুই মূল্যায়ন বিবেচনাতেই প্রার্থীতার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জরিপে যাদের গ্রহণযোগ্যতা ও নৈতিক মান উঁচু পাওয়া গেছে, দায়িত্ব না থাকলেও তাদেরও মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি।
তরুণ নেতৃত্বকে সামনে রেখে নির্বাচনের মাঠে শক্ত অবস্থান নিতে যে ঐকান্তিক চেষ্টা চালাচ্ছে জামায়াত, তাদের প্রার্থী তালিকাই যেন তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ।
এসএইচ







































