• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিস্কুট শিল্পের অবদান বাড়ছে


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ২২, ২০২১, ০৫:১০ পিএম
বিস্কুট শিল্পের অবদান বাড়ছে

ঢাকা : প্রায় সব শ্রেণির মানুষের কাছে বিস্কুট একটি জনপ্রিয় খাদ্যপণ্য। চায়ের সাথে কিংবা নাশতার টেবিলে অতিথি আপ্যায়নের দৈনন্দিন চাহিদার তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে বিস্কুট। 

পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে বিস্কুট এবং কনফেকশনারি পণ্যের বাজারের আকৃতি প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি। যার মধ্যে ৫০ শতাংশই নামিদামি ব্র্যান্ডের।

লাইট ক্যাসেল পার্টনার নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ২০১৯ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বিস্কুট রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৬০০ কোটি টাকারও বেশি (৮০.৪১ মিলিয়ন ডলার); যা আগের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালের প্রায় দ্বিগুণ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪৩ দশমিক শূন্য ৯ মিলিয়ন ডলার। প্রতি বছর ১৫ শতাংশ হারে এ খাতের বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরে জিডিপিতে এই খাতের অবদান ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এই শিল্পের মোট বাজারমূল্যের প্রায় ৩৫৮ মিলিয়ন ডলার অংশিদারিত্ব রয়েছে অলিম্পিক, হক, নাবিস্কো, ড্যানিশ এবং বঙ্গজসহ নামি ব্র্যান্ডের কোম্পানিগুলোর। বাংলাদেশ অটো বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের  (বিএবিবিএমএ) তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে বিস্কুট উৎপাদন ৬৫ হাজার মেট্রিক টন ছাড়িয়ে গেছে। 

বিএবিবিএমএ’র তথ্য অনুযায়ী দেশে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার বিভিন্ন ধরনের বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি ও সংস্থা এ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে ১০০টি অটোমেটিক ফ্যাক্টরি রয়েছে যার মধ্যে ১০ থেকে ১৫টি মেগা ফ্যাক্টরি, ৩৫টি বড় এবং ৫০টি মাঝারি আকৃতির।

দেশের কর্মসংস্থানেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে সেক্টরটি। প্রায় ১৫ থেকে ১৭ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। 

করোনা মহামারীতে সংক্রমণের ভয়ে হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেককে নির্ভর করতে হয়েছে ড্রাই জাতীয় খাবারের ওপর। ফলে এ সময়টিতে অন্য সব খাদ্যপণ্যের বাজার সংকুচিত হলেও বিস্কুট বিক্রিতে ভাটা পড়েনি। ফলে মহামারীর সময় বিশ্ব বাজারে বেশকিছু জায়গা দখল করতে পেরেছে বাংলাদেশ।

জানা যায়, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ভারত, মালয়শিয়া, সিঙ্গাপুর, নেপাল, ওমান, কাতার, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিস্কুটের প্রধান ক্রেতা। সরকার রপ্তানি খাতে ২০ শতাংশ ইনসেনটিভ দেওয়ায় তা বিদেশের বাজারে বিক্রি বাড়াতে অবদান রাখছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে এ খাতের জন্য বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিস্কুট উৎপাদনের প্রধান উপাদান গম এবং সয়াবিনের সিংহভাগই আমদানিনির্ভর। 

পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আর মোট আমদানির ৯০ শতাংশ প্রাইভেট সেক্টর আমদানি করে থাকে। বিভিন্ন সময় এসব পণ্যের দাম ওঠানামা করায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় কোম্পানিগুলোকে। 

এ ছাড়া পণ্যের মান উন্নয়নে এ সেক্টরে পর্যাপ্ত গবেষণারও অভাব রয়েছে। 

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সরকারের যথাযথ সহযোগিতা পেলে দেশের অর্থনীতিতে বিস্কুট শিল্প সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালনা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মাদাদ আলী বিরানী বলেন, ‘ভোক্তাদের মধ্যে ভাইরাসের উদ্বেগের কারণে রেস্তোরাঁ ও ফুটপাথের বিক্রেতাদের বিক্রি হওয়া খাবারের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। সস্তার বিকল্প হিসেবে আমরা বিস্কুটের চাহিদা বেড়ে যেতে দেখলাম।’ 

তিনি বলেন, সরকার ২০ শতাংশ প্রণোদনা দিয়েছিল; তা বিদেশের বাজারে বিক্রিতে বেশ অবদান রাখে।

বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের অংশীদার রোমানিয়া ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের প্রধান বিক্রয় কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, এপ্রিলের প্রথম দিকে কিছ দিন বাদে মহামারীর সময়ে কোনো বিস্কুট কারখানা বন্ধ ছিল না।

পার্টেক্স স্টার গ্রুপের মালিকানাধীন ডেনিশ বিস্কুট রপ্তানির প্রধান দেবাশীষ সিংহা বলেছেন, ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে গ্রাহকরা তাদের প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ বা নিয়মিত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকায় রপ্তানিকারকরা মহামারীর সময় কিছু বিশ্ব বাজার দখল করতে পেরেছিল। 

তিনি বলেন, ‘এটি বাংলাদেশি শুকনো খাদ্য রপ্তানিকারীদের জন্য একটি সুযোগ তৈরি করেছে।’

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে শুকনো খাবারের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে; যেহেতু মানুষ এসব পণ্যের ওপর নির্ভর করেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!