• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সুদিন ফেরার অপেক্ষায় পোশাক শ্রমিকরা


বিশেষ প্রতিনিধি মে ১, ২০২১, ১১:৩৪ পিএম
সুদিন ফেরার অপেক্ষায় পোশাক শ্রমিকরা

ঢাকা : একসময় দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের শোষণ ও বঞ্চনা ছিল অবর্ণনীয়। অনেক আন্দোলন সংগ্রাম এবং রক্তে পোশাক শ্রমিকের অধিকার অনেকখানি আদায় হলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি শোষণ-নির্যাতন।

শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলেও অভিযোগ রয়েছে, জোর করে ওভারটাইম করানো হয়। পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি নারী কর্মীদের সব ন্যায্য অধিকার। ফলে শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠার যে লক্ষ্য নিয়ে মহান মে দিবস পালিত হয়, তা পোশাক শ্রমিকের অধিকার আদায়ে পুরোপুরি প্রযোজ্য নয়।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু বলেন, ‘১৮৮৬ সালে শ্রমদিবস ৮ ঘণ্টা করার যে লক্ষ্য নিয়ে আত্মদান করেছিল আজ ১৩৫ বছরে এসেও বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকরা সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত।’ তার দাবি, ‘এখনো কথায় কথায় শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ হয়নি। জোর করে ওভারটাইম করানোর প্রবণতা বন্ধ হয়নি। নারী শ্রমিকদের জন্য কর্মপরিবেশ নিশ্চিত হয়নি। পোশাক শ্রমিকদের ক্ষেত্রে মে দিবসের চেতনা এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি।’

দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি তৈরি পোশাক শিল্প। অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে এ খাতের অবদান অপরিসীম। দেশের রপ্তানি আয়ের ৮৪ ভাগ আসে পোশাক খাত থেকে। আর এর পেছনের কারিগর ৪৫ লাখেরও বেশি শ্রমিক। যাদের মধ্যে ৮০ ভাগেরও বেশি নারী। অথচ পোশাক কারখানাগুলোতে  নারী শ্রমিকরা শোষণ-বঞ্চনার শিকার হন। নারীদের শারীরিক অসুস্থতাকে আমলে নেন না অনেক কর্তৃপক্ষ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা টানা দাঁড়িয়ে কাজ করলেও বিশ্রামের সুযোগ দেওয়া হয়না; বরং কথায় কথায় বেতন কাটা এবং ছাঁটাই আতঙ্ক রয়েছে। নারীদের মার্তৃত্বকালীন ছুটি দেওয়ার ভয়ে আগেই তাদের কোনো না কোনো উপায়ে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

রাজধানীর রামপুরা এলাকার একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক রুবিনা আক্তার গত পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করেন পোশাক কারখানায়। বর্তমানে তার বেতন ১২ হাজার টাকা। ওভার ডিউটিসহ মাসে তার আয় ১৬/১৭ হাজার টাকা।

রুবিনা আক্তার জানান, এক সময় তার মা গ্রামে (পিরোজপুরে) গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন। তিনি অসুস্থ হওয়ার পর পরিবারের খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। তার বৃদ্ধ বাবা তেমন কোনো কাজকর্ম করতে পারেন না। তাই বাধ্য হয়ে ভাইয়ের সঙ্গে গ্রাম থেকে ঢাকায় চলে আসেন। পোশাক কারখানায় চাকরি করেই তিনি এখন মা-বাবার খরচের পাশাপাশি নিজের সংসারের খরচও চালান। রুবিনা আক্ষেপ করে বলেন, ‘চাকরি করি ঠিকই কিন্তু জীবনটা তেজপাতা। কোনো ছুটি নাই, শরীর খারাপ হলেও কোনো ছাড় দেয় না। আর কথায় কথায় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজতো রয়েছেই।’

বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক জুলহাসনাইন বাবু বলেন, ‘নারী শ্রমিকদের সন্তান প্রসবের আগে ও পরে চার সপ্তাহ করে মোট ৮ সপ্তাহ ছুটি দিতে হয়। কিন্তু অধিকাংশ কারখানাই শুরুতেই নারী শ্রমিকদের যে কোনো মূল্যে ছাঁটাই করে দেয়। হাতে গোনা দু একটি কারখানা ছাঁটাই না করলেও মার্তৃত্বকালীন ছুটির পাওনা দিতে চায় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শ্রমিকরা চাকরি টিকিয়ে রাখার ভয়ে আমাদের জানাতে চান না।’

তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের সর্বোচ্চ ২ ঘণ্টা ওভারটাইম করানোর কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করতে চান না মালিকরা। তারা রাষ্ট্রপতির দপ্তরে আবেদন করে ৪ ঘণ্টা ওভারটাইমের অধ্যাদেশ আদায় করে নেন।’

এর আগে রানা প্লাজা ধসের পর দেশি-বিদেশি চাপে গত ছয় বছরে শ্রমিকের অধিকার সুরক্ষায় শ্রম আইন সংশোধন, কর্মপরিবেশের উন্নয়নসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে শ্রমিক সংঘ বা ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা বৃদ্ধি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে দর-কষাকষির সুযোগ সৃষ্টি হলেও শ্রম অধিকার আদায়ের সুযোগ সীমিত হয়েছে। ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলনে নামলে হামলা, মামলা ও ছাঁটাইয়ের শিকারও হচ্ছেন শ্রমিকেরা।

শ্রমিকনেতারা বলছেন, ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা বাড়লেও তার অধিকাংশই কাগজ-কলমে। সংশোধিত শ্রম আইনের কোথাও কোথাও অস্পষ্টতা আছে। বঞ্চিত শ্রমিকের অধিকার সুরক্ষা দেখভালের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যকর পদক্ষেপের অভাবের পাশাপাশি শ্রমিক সংগঠনের সক্রিয় উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে। তা ছাড়া অধিকার আদায়ে শ্রমিক সংগঠনগুলো সংগঠিত নয়।

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক ব্যবসা হওয়ার কারণে পোশাক খাতের শ্রম অধিকার নিয়েই বেশি কথাবার্তা হয়। অন্য খাতের বিষয়ে আলোচনা কম।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজা ধসের আগে তৈরি পোশাক শিল্পে ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা ছিল ১৩২। নানামুখী চাপের কারণে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭৩৩। সংখ্যার দিক থেকে গত ছয় বছরে ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা বাড়লেও শ্রমিকদের অধিকার বাড়েনি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!