• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে থার্ড টার্মিনাল


বিশেষ প্রতিনিধি    জুন ৬, ২০২১, ০৭:৩৪ পিএম
মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে থার্ড টার্মিনাল

ঢাকা : করোনাভাইরাস বা মাটির নিচে পাওয়া বোমা কোনো কিছুই বাধা হয়নি। উঠে দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৪৯টি পিলার। প্রকৌশলীদের তত্ত্বাবধানে রাতদিন কাজ করে চলেছেন দেড় হাজারেরও বেশি শ্রমিক। এভাবেই চলছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের কর্মযজ্ঞ। সরকারের বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে এটি অন্যতম। বিশ্বের অন্যান্য বিমানবন্দরের মতো এটিও দৃষ্টিনন্দন হবে।

বর্তমানে কাজের প্রায় ১৭ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই পুরো কাজ শেষ হবে।

শনিবার (৫ জুন) কাজের অগ্রগতি পরিদর্শনে গিয়ে এমনটাই জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। 

তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও এগিয়ে আছি। এ টার্মিনালের আকার বর্তমান বিমানবন্দরের দুই গুণের বেশি। টার্মিনালের কাজের সঙ্গে আশকোনার হজক্যাম্প থেকে একটি টানেল করা হবে। এর মাধ্যমে হাজিরা হজক্যাম্প থেকে সরাসরি বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে পারবেন। 

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ইচ্ছায় উন্নয়নের মহাসড়কে পা রেখেছে বাংলাদেশ। এরই অংশ হিসেবে দৃষ্টিনন্দন থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। এই টার্মিনালের সঙ্গে মেট্রোরেল সংযুক্ত থাকবে। টার্মিনালটি হবে সম্পূর্ণ অটোমেটেড। দৃষ্টিনন্দন এ বিমানবন্দরে পা রেখেই একজন বিদেশি বাংলাদেশের সৌন্দর্য অনুধাবন করতে পারবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোভিড আগ্রাসনে সারাবিশ্ব যখন থমকে ছিল তখন একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি থার্ড টার্মিনালের কাজ। ২০২৩ সালের জুন মাসে এই টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে আমরা আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ হবে। 

সরেজমিন দেখা যায়, ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের এ টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি প্লেন রাখার অ্যাপ্রোন (প্লেন পার্ক করার জায়গা) নির্মাণ করা হচ্ছে। টার্মিনাল ভবন হবে ২ লাখ ৩০ হাজার স্কয়ার মিটারের। ভবনের ভেতরে থাকবে বিশ্বের উল্লেখযোগ্য ও অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তির ছোঁয়া।

নতুন টার্মিনালে একই সঙ্গে ৩৭টি বিমানের অ্যাপ্রোন বা পার্কিং করার জায়গা থাকবে। আর ভেতরে থাকবে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ, ১১টি বডি স্ক্যানার, ১৬টি লাগেজ বেল্ট। এ ছাড়া থাকবে স্বয়ংক্রিয় ইমিগ্রেশন সিস্টেম।

বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে মেট্রোরেল। তৈরি হবে পৃথক একটি স্টেশনও। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে আসা যাত্রীরা বিমানবন্দর থেকে বের না হয়েই মেট্রোরেলে করে নিজেদের গন্তব্যে যেতে পারবেন। 

এ ছাড়া ঢাকার যে-কোনো স্টেশন থেকে মেট্রোরেলের মাধ্যমে সরাসরি বিমানবন্দরে ডিপার্চার বা বহির্গমন এলাকায় যাওয়া যাবে।

সূত্র জানায়, দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা টাওয়ার কিংবা সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের দর্শনীয় স্থাপনা যারা নির্মাণ করেছেন তাদের হাত ধরে দৃশ্যমান হচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের রূপাবয়ব।

গত বছর করোনাভাইরাসের কারণে দফায় দফায় লকডাউন আর মাটিতে পুঁতে থাকা পাঁচটি শক্তিশালী বোমা উদ্ধারের পরও কাজের গতিতে কোনো সমস্যা হয়নি বরং সচল আছে কাজের গতি।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনালে বর্তমানে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা বছরে ৬৫ থেকে ৭০ লাখ। নতুন টার্মিনাল হলে শুধু হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে প্রায় ২ কোটি যাত্রী সেবা পাবেন। সবকিছু ঠিক থাকলে ২১ হাজার ৩শ কোটি টাকা ব্যয়ে এই বিমানবন্দরের কাজ শেষ হবে ২০২৩ সালের জুনে।

হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর অনুমোদন পায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক)। শুরুতে টার্মিনালটি নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। পরে অবশ্য প্রকল্প ব্যয় ৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাড়ানো হয়। সবমিলে এখন প্রকল্পটির খরচ ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকারও বেশি।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৫ হাজার ২৫৮ কোটি ৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। বাকি ১৬ হাজার ১৪১ কোটি ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে জাপানের সংস্থা জাইকা।

তৃতীয় টার্মিনালের ভেতরের ভবনটির নকশা করেছেন বিখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিন। সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি এয়ারপোর্টের টার্মিনাল-৩, চীনের গুয়াংজুর এটিসি টাওয়ার ভবন, ভারতের আহমেদাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ইসলামাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মতো সব স্থাপনার নকশাকার তিনি। 

এ ছাড়া মালদ্বীপ, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া, ব্রুনাই, মিয়ানমার ও ভিয়েতনামসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রকল্পের নকশা করেছেন ওই স্থপতি।

থার্ড টার্মিনালের নির্মাণকাজ বিষয়ে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, ‘আমরা করোনা মহামারীর মধ্যেও বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের নির্মাণকাজ বন্ধ রাখিনি। বরং স্বাস্থ্যবিধি মেনে পুরোদমে কাজ এগিয়ে চলছে।’

সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান আশা প্রকাশ করেন, ‘বিমানবন্দরের টার্মিনালটি চালু হলে বাংলাদেশ অন্য কাতারে চলে যাবে। পুরো বিমানবন্দর থাকবে কম্পিউটারাইজড। এর মাধ্যমে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত বিমানবন্দরের মালিকানা তালিকায় যাবে বাংলাদেশ।’

এদিকে প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল মালেক বলেন, এ ধরনের প্রকল্পে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং হচ্ছে মাটি ও বালু ভরাট। এখানে বর্ষার আগে টার্মিনাল ভবনের মূল ভিত্তিটায় মাটি ও বালু ভরাট হয়ে গেছে। সেই মেঘনা দাউদকান্দি থেকে বালু এনে পাহাড় গড়া হয়েছে। দিবারাত্রি ট্রাক আনলোড করা হচ্ছে। একযোগে কাজ চলছে প্রতিটি বিভাগে। 

একদিকে বালু আনা, সেই বালু আনলোড করে পাহাড়ের ন্যায় স্তূপ করা, সেখান থেকে বালু নির্দিষ্ট পয়েন্টে ছড়িয়ে দিয়ে বুলডোজার দিয়ে তা মিশিয়ে সমানতালে মসৃণ করে শক্তিশালী ভিত করে তোলা হচ্ছে। তার ওপর চলে রিগারের কাজ। একই তালে পাইলিং করা। বাকিগুলোও হয়ে যাবে বছরখানেকের মধ্যে।

তিনি জানান, এ প্রকল্পে অনেকগুলো স্থাপনা রয়েছে। তার মধ্যে মূল ও প্রধান হচ্ছে টার্মিনাল ভবনটি। এখানেই মোট পাইলিং হয়েছে ৩ হাজার ৪৯টি। বাকি অন্যসহ স্থাপনায় হবে আরো প্রায় ১ হাজারের মতো পাইলিং। সেগুলো পর্যায়ক্রমে নির্মাণ করা হলেও সবার আগে শেষ করা হবে টার্মিনাল ভবনটির কাজ। নির্ধারিত সময়ের আগেই মেগা এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে তিনিও আশা প্রকাশ করেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!