• ঢাকা
  • শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

ওমিক্রনের উপধরনে উদ্বেগ


বিশেষ প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২২, ০১:৫৮ পিএম
ওমিক্রনের উপধরনে উদ্বেগ

ঢাকা : প্রায় দুই বছর ধরে চলা করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত সারা বিশ্ব। কিন্তু গত বছরের শেষ দিকে ভাইরাসটির নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে ফের ওলটপালট করে দেয় সবকিছু। এই ভ্যারিয়েন্টের বেশ কয়েকটি নতুন উপ-ধরনের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে।  যার প্রভাব থেকে রক্ষা পায়নি বাংলাদেশও। তবে ওমিক্রনের নতুন উপ-ধরনে সংক্রমণ আরো বেশি হতে পারে বলে সতর্ক করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

কিন্তু নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, টানা পাঁচ থেকে সাত সপ্তাহ সংক্রমণ বাড়ার পর তা ক্রমেই নিম্নমুখী হতে থাকে। সে হিসেবে সপ্তাহখানেক পর দেশে সংক্রমণ কমতে পারে। তারপরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই বলেও  মনে করেন তারা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত ভার্চুয়াল বুলেটিনে জানান, ওমিক্রনের নতুন যে ভ্যারিয়েন্ট দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এসেছে, তারও একটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট বিশ্বের ৫৭টি দেশে শনাক্ত হয়েছে। বিভিন্ন গবেষণাকে উদ্ধৃত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে জানিয়েছে, এই সাব-ভ্যারিয়েন্টটি কিন্তু আগে চেয়ে বেশি সংক্রমক হতে পারে। আর বেশি সংক্রমক হলে ক্ষতি করার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফর্নিয়ার করা এক নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে, ওমিক্রনের ‘সেকেন্ড জেনারেশন ভ্যারিয়েন্ট’ হিসেবে পরিচিত ‘বিএ.২’-এর সংক্রমণ ক্ষমতা ওমিক্রনের প্রাথমিক রূপের চেয়েও বেশি। আগামী দিনে এটি আরো বাড়বে। বিজ্ঞানীদের দাবি, যদি কেউ আগেই মৃদু উপসর্গসহ ওমিক্রন আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তা হলেও যে তিনি রেহাই পাবেন তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ, শরীরে ভবিষ্যতে সংক্রমণ এড়ানোর মতো যথেষ্ট অ্যান্টিবডি না থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

হু-এর বিশেষজ্ঞ মারিয়া ভান কেরখোভে গত মঙ্গলবার জানিয়েছেন, বিএ.২’-এর সম্পর্কে এখনো বিশেষ কিছুই জানা যায়নি। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, এই রূপটি ওমিক্রনের প্রাথমিক রূপের চেয়ে বেশি সংক্রমণ ক্ষমতা সম্পন্ন। যদিও এখন পর্যন্ত বিশেষ কিছু জানা যায়নি। এ জন্য আরো কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে। পাশাপাশি তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, করোনা একটি ভয়ংকর রোগ, মানুষের উচিত এর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।

ডা. নাজমুলের মতে, এখনো আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই। রোগীর সংখ্যা কোনোভাবেই যাতে না বাড়ে সে জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ দায়িত্বপূর্ণ আচরণ করতে হবে। তিনি বলেন, বয়স অনুপাতে মৃত্যুর দিকে যদি আমরা দেখি, সবচেয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ৬১ বছর থেকে ৭০ বছর পর্যন্ত। বিভাগভিত্তিক মৃত্যু যদি দেখি, সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। বিভাগটিতে ১২ হাজার ৪৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। শতকরা হিসেবে সেটি প্রায় ৪৩ দশমিক ৮০ শতাংশের বেশি।

হাসপাতালে রোগী বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। আর রোগীর সংখ্যা যখনই বাড়ে, আইসিইউ, এইচডিইউ এবং অক্সিজেন সরবরাহের ওপরও চাপ সৃষ্টি হয়। আমরা প্রস্তুত আছি। ইতোমধ্যেই ১১৯টি হাসপাতলে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপিত হয়েছে। ২৯ হাজারেরও বেশি অক্সিজেন সিলিন্ডার, দুই হাজারের বেশি হাইফ্লো-ন্যাজাল ক্যানোলা এবং দুই হাজার ৩০০টিরও বেশি অক্সিজেন কনসাল্ট্রেটর রোগীদের সেবায় নিয়োজিত আছে।

তিনি বলেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন, তাদের ভেতরে কারা ভ্যাকসিন পেয়েছেন এবং কারা পাননি সেই সম্পর্ক খুঁজে বের করার চেষ্টা অনেক দিন ধরেই চলছে। পহেলা জানুয়ারি থেকে ৩১ তারিখ পর্যন্ত মোট যে মৃত্যু আমরা দেখেছি, তাতে মৃতদের প্রায় ৭৩ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেননি। বাকিরা ভ্যাকসিন পেয়েছেন। প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন পেয়েছিলেন ১৮ জন এবং দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন পেয়েছেন ৬১ জন।

উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারি মাসজুড়ে দেশে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশ ঊর্ধ্বমুখী। সারা দেশে চলছে করোনার তৃতীয় ঢেউ। বর্তমান সংক্রমণ পরিস্থিতি আর কতদিন থাকবে, সংক্রমণ কি আরো বাড়বে নাকি ধীরে ধীরে কমে যাবে কিংবা মৃত্যু কমবে কি না তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। এ অবস্থায় আশার কথা শুনিয়েছেন স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা।

তরা বলছেন, যেসব সংক্রামক ব্যাধি দ্রুতগতিতে ছড়ায়, নির্দিষ্ট সময় পর সে ব্যাধির সংক্রমণ দ্রুত কমতে থাকে। করোনার ক্ষেত্রে বিশেষ করে বর্তমান ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে, শুরু থেকে পাঁচ-সাত সপ্তাহ বাড়ার পর সংক্রমণ ক্রমেই কমতে থাকে। সে হিসেবে আগামী এক সপ্তাহ থেকে দিন দশেক পর দেশে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু কমতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে- টানা পাঁচ থেকে সাত সপ্তাহ পর্যন্ত সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়। সে হিসেবে দেশে ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারি মাসজুড়ে সংক্রমণ বেড়েছে। এখনো তা অব্যাহত আছে।

আগামী এক সপ্তাহ পর থেকে করোনার সংক্রমণ কমতে পারে এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, সংক্রমণ বাড়ায় মানুষের মধ্যে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে সচেতনতা আগের তুলনায় বেড়েছে। স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার পাশাপাশি দেশের ৭০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে দ্রুত টিকার আওতায় আনা গেলে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধ সম্ভব হবে।

আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. মুশতাক হোসেনও একই অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, যেসব সংক্রামক ব্যাধি খুব দ্রুত ছড়ায় সেগুলো যেমন দ্রুত উঠে আবার দ্রুত নেমে যায়। আমাদের দেশে তুলনামূলকভাবে পরীক্ষা কম হচ্ছে। তাই করোনার সর্বোচ্চ সংক্রমণ চলছে কি না বোঝা যাচ্ছে না। আগামী সপ্তাহের শেষ নাগাদ করোনার সংক্রমণ কমতে শুরু করবে বলেও তিনি অনুমান করছেন।

গতবছরের ডিসেম্বর মাসে দেশের সরকারি ও বেসরকারি ৮৬৭টি (আরটি-পিসিআর, জিন এক্সপার্ট এবং র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট) ল্যাবরেটরিতে করোনা শনাক্তে ৬ লাখ ২ হাজার ৭৩৭টি নমুনা পরীক্ষা করে ৯ হাজার ২৫৫ জন রোগী শনাক্ত হয়। এছাড়া একই সময়ে ৯১ জন রোগীর মৃত্যু হয়।

এর পরের মাস অর্থাৎ ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯ লাখ ৮৭ হাজার ১৯৪টি নমুনা পরীক্ষায় ২ লাখ ১৩ হাজার ২৯৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। একই সময়ে মৃত্যু হয় ৩২২ জনের।

এভাবে করোনার সংক্রমণ অব্যাহতভাবে বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির পরামর্শে স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর পাশাপাশি সভা-সমাবেশ ও সামাজিক অনুষ্ঠানে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!