• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কে হবেন রষ্ট্রপতি, জানেন কেবল প্রধানমন্ত্রী  


লাইজুল ইসলাম জানুয়ারি ২৬, ২০২৩, ০৮:৪৪ পিএম
কে হবেন রষ্ট্রপতি, জানেন কেবল প্রধানমন্ত্রী  

ঢাকা: বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে হবেন সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে যতটুকু জানা গেছে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। তিনি যাকে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য মনোনীত করবেন তাকেই ভোট দিবেন আওয়ামী লীগের এমপিরা। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অবশ্যই সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। এই আলোচনা হলেই পাওয়া যাবে শর্ট লিষ্ট। এক সপ্তাহের মধ্যেই জানা যাবে পরবর্তী রাষ্ট্রপতির নাম। 

ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি সূত্র থেকে বেশ কয়েকজনের নাম শোনা গেছে। যদিও এসব নামের বিষয়ে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যরা কোনো কথা বলতে নারাজ। এদিকে, দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরির নাম সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে গণমাধ্যমকে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘তিনি এ পদের জন্য যোগ্য নন’।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই মেয়াদ শেষ হচ্ছে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের। ২৩ এপ্রিল শেষ হচ্ছে তার মেয়াদ। অর্থাৎ আগামী নির্বাচনের সময় দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন নতুন রাষ্ট্রপতি। তবে কে হচ্ছেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি তা নিয়ে রয়েছে নানান আলোচনা। সামনে এসেছে কয়েকজনের নাম।

বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন মো. আবদুল হামিদ। তিনি ব্যক্তি হিসেবে দেশের ১৭তম রাষ্ট্রপতি। প্রথম মেয়াদ শেষে ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল পুনরায় শপথ নিয়ে দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হন তিনি। আগামী বছর ২৪ এপ্রিল শেষ হচ্ছে তার মেয়াদ। এর আগেই নির্বাচিত হবেন নতুন রাষ্ট্রপতি।

দুই মেয়াদেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন আবদুল হামিদ। ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন হয়েছিল। এরপর বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র অনুযায়ী সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। আবার আবদুল হামিদই একমাত্র যিনি টানা দুই মেয়াদে দেশের রাষ্ট্রপতি হয়েছেন।

সংবিধানের ৫০ (২) অনুচ্ছেদে বলা আছে, 'একাধিক্রমে হউক না হউক দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতি পদে কোনো ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকিবেন না।'

টানা দুই মেয়াদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মো. আবদুল হামিদ আগামীবার আর রাষ্ট্রপতি হওয়ার সুযোগ থাকছে না। অর্থাৎ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে আসছেন নতুন কেউ।

১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল জাতীয় সংসদের স্পিকার নির্বাচিত হয়েছিলেন শাহ আব্দুল হামিদ। তিনি সে বছরের ১ মে পর্যন্ত আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করেন। পরদিনই তার স্থলাভিষিক্ত হন মুহাম্মদুল্লাহ। যিনি বাংলাদেশের চতুর্থ রাষ্ট্রপতি।

বর্তমান স্পিকারসহ স্বাধীন বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১২ জন স্পিকার দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের মধ্যে মুহাম্মদুল্লাহ, আব্দুর রহমান বিশ্বাস, ব্যারিস্টার মুহম্মদ জমির উদ্দিন সরকার ও বর্তমান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার।

সংসদে এখন পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকারী স্পিকারদের মধ্যে শিরীন শারমিন চৌধুরী ১২তম। আর নারীদের মধ্যে স্পিকার হিসেবে তিনিই প্রথম।

অনেকেই মনে করছেন, যেহেতু সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে চারজন রাষ্ট্রপতি সাবেক স্পিকার। তাই দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হতে পারেন বর্তমান স্পিকারও। শিরীন শারমিন রাষ্ট্রপতি হলে তিনিই হবেন দেশের প্রথম নারী রাষ্ট্রপতি। রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা শিরীন শারমিনই হতে যাচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি৷যদিও এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি নন।  

এদিকে রাষ্ট্রপতি পদে কিছুদিন আগেও আলোচনায় ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবে ১২ জানুয়ারি এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, 'ওই পদে যাওয়ার যোগ্যতা আমার নেই।'

তিনি বলেছেন, 'প্রধানমন্ত্রী আলাপ আলোচনা করছেন, খোঁজখবর নিচ্ছেন। সময় হলে জানতে পারবেন।'

এদিকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরীকেও রাষ্ট্রপতি পদে আলোচনায় রাখা হয়েছিল। তবে গত ১২ জানুয়ারি জাতীয় সংসদের সংসদ উপনেতা হন তিনি। এতে তার রাষ্ট্রপতি হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের নামও আলোচনায় এসেছে। দলের বাইরে আরেফিন সিদ্দিকের গ্রহণযোগ্যতা ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি রয়েছে। তবে রাষ্ট্রপতি পদে যোগ্যতা ছাড়াও কিছু বিষয় বিবেচনা করা হয় এবং সেই পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হবেন কি না, সেটি দেখার বিষয়।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর নামও আছে আলোচনায়। প্রবীণ এই নেতা আস্থার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবেন কি না, সেটি দেখার অপেক্ষা।

মন্ত্রিপরিষদের জ্যেষ্ঠ সদস্য আ ক ম মোজাম্মেল হক গাজীপুর জেলার সভাপতি পদে পুনর্বহাল হওয়ায় রাষ্ট্রপতি পদে তাকে নিয়ে এখন আর আলোচনা হচ্ছে না। যদিও তার নাম আলোচনায় আসায় পেছনে কাজ করেছে পূর্ববর্তী রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান এবং আবদুল হামিদ। এই দুই নেতার মতোই তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিক আ ক ম মোজাম্মেল হক।

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের নাম বেশ জোরেশোরে আলোচনায় আসছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, মসিউর রহমান কয়েক মাস থেকে আড়ালে থাকছেন। দলীয় কর্মসূচিতেও তাকে দেখা যাচ্ছে কম। তারা মনে করছেন শেষ মুহূর্তে মসিউর রহমান যেন বিতর্কিত না হন, এ কারণে তাকে সরিয়ে রাখা হয়েছে। এ থেকেই আলোচনায় উঠে এসেছে তার নাম।

এর বাইরে মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের নামও আলোচিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের ভাষ্যমতে, শেখ হাসিনা তার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই চমকে দেন সবাইকে। সেই চমক হিসেবেই উঠে এসেছে একজন টেকনোক্রেট মন্ত্রীর নাম।

সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হবে ২৩ এপ্রিল। নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি। 

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নির্বাচনী কর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগ্রহী প্রার্থীরা আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন।১৩ ফেব্রুয়ারি যাচাই-বাছাইয়ের পর ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। এ নির্বাচনে ভোটার হচ্ছেন সংসদ সদস্যরা। ভোটার ৩৪৩ জন সংসদ সদস্য। ভোটের জন্য জাতীয় সংসদের একটি বৈঠক ডাকা হয়। আর একক প্রার্থী হলে আইন অনুযায়ী তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। সে ক্ষেত্রে সংসদের বৈঠকের প্রয়োজন হয় না। 

আওয়ামী লীগের একটি সূত্র সোনালীনিউজকে নিশ্চিত করেছে, বিভিন্ন কারণে অনেকের নাম শোনা যাচ্ছে। কিন্তু এড়াই যে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কারণ দলীয় প্রধান এ বিষয়ে এখনো সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেনি। রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগ থেকে কাকে মনোনয়ন দেয়া হবে, তা অবশ্যই নির্ধারণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যা আলোচনার পরই নির্ধারণ হবে। এই আলোচনা হলেই একটি তালিকা হয়তো পাওয়া যাবে। সেই তালিকার একজন হতে পারেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি।

সোনালনিউজ/এলআই/আইএ

Wordbridge School
Link copied!