• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

বইয়ের ঊর্ধ্বমূল্য, বিক্রি কম হওয়ায় হতাশ প্রকাশকরা


বিশেষ প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৩, ০১:২১ পিএম
বইয়ের ঊর্ধ্বমূল্য, বিক্রি কম হওয়ায় হতাশ প্রকাশকরা

ঢাকা : আজিমপুরের বাসিন্দা শিক্ষার্থী এবং পাঠক সোহেল আলম বইমেলায় প্রথমা প্রকাশনী স্টলে বইয়ের মূল্য দেখে হতাশ। তিনি বলেন, ৪৫১ পৃষ্ঠার একটা বইয়ের মূল্য ১২০০ টাকা হয় কী করে? পাশে থাকা নারী বিক্রয়কর্মী বলেন, বইয়ের মূল্য কি পৃষ্ঠা গুনে হয়? যারা বই কেনে, তারা টাকার দিকে তাকায় না।

বইমেলার স্টল প্রথমার বিক্রয় প্রতিনিধি বখতিয়ার মাহমুদ শুভ বলেন, এবার বইয়ের মূল্য একটু বেশিই। কিন্তু আমাদের তো কিছু করার নেই। বইয়ের মূল্য বৃদ্ধির পেছনে নিশ্চয়ই যৌক্তিক কোনো কারণ আছে। সেটি হচ্ছে কাগজের মূল্য দ্বিগুণ বেড়েছে। পাশাপাশি ছাপার সবকিছুরই দাম বেড়েছে। বইয়ের মূল্য বেশি হওয়ায় এ বছর তেমন বই বিক্রির দেখা নেই।

কথাগুলো শুনে অতঃপর প্রচণ্ড ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বই না কিনেই ফিরে গেলেন সোহেল। পাশাপাশি প্রথমা স্টল থেকে প্রকাশিত প্রায় একই কলেবরে মুদ্রিত ১৫০০ টাকা মূল্যের একটি সিরাত গ্রন্থ নেড়েচেড়ে মূল্য দেখে খালি হাতেই ফিরে গেলেন এক ভদ্রমহিলা।

এবারের অমর একুশে বইমেলার খণ্ড খণ্ড এসব দৃশ্য যেন বইয়ের ঊর্ধ্বমূল্যের প্রতীকী চিহ্ন। পরম আগ্রহ নিয়ে মেলায় এসেও ঊর্ধমূল্যের কারণে চাহিদা অনুযায়ী বই কিনতে পারছেন না অনেকেই। যিনি পাঁচটি বই কেনার নিয়তে মেলায় এসেছেন, তিনি দুইটা বই কিনে বাসায় ফিরছেন।

কথা হয় শ্যামপুর থেকে মায়ের সঙ্গে মেলায় আসা মো. আল আমিন খানের সঙ্গে। সহজে শিখি সি প্রোগ্রামিং এবং ম্যাটাল্যাব পরিচিতি নামক দু’টি বই কিনে বাসায় ফিরছেন তিনি। এ প্রতিবেদককে আল আমিন খান বলেন, বইয়ের অনেক দাম। সে কারণে আম্মু বেশি বই কিনতে দেয়নি।

আল আমিন খানের মা মিসেস সুমি বেগম বলেন, তিন ছেলের লেখা-পড়া, সংসারের খরচ চালাতে গিয়ে হিমশিম খাইতে হয়। তার ওপর আবার এবার বইয়ের দাম অত্যধিক বেশি। সে কারণে ওরা অনেক করে বই কিনতে চাইলেও কিনে দিতে পারিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াদ মাহফুজ ‘ইহয়াউ উলুমিদ্দিীন’ বইটি কিনে হলে ফিরছিলেন। ইমাম আবু হামিদ মুহাম্মদ ইবনে মুহাম্মদ আল-গাজ্জালি (র.)-এর লেখা বিখ্যাত এই বইটির বাংলা অনুবাদ কেনার কারণ সম্পর্কে এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, সাধুসংঘ বইটি কিনে নিয়ে গেছি। আরো একটা কিনলাম। বাংলা সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে সুফিজমের ওপর আগ্রহ আছে। কিন্তু অত্যধিক দামের কারণে অপেক্ষাকৃত ছোট্ট কলেবরে মুদ্রিত বইগুলো কিনছি।

রিয়াদের সঙ্গে থাকা তার বন্ধু সাবরিনা ইসলাম শেফা বলেন, টাকার জন্য তো আমি বই কিনেত পারলাম না। বইয়ের দাম এবার আকাশ ছোঁয়া।

বইয়ের বেমি দাম। এ বিষয়টি অস্বীকার করছেন না প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। তারা বলছেন, কম দামে বই দিতে পারলে বিক্রি বাড়ত। বিক্রি বাড়লে প্রফিট বাড়ত। বাজারে কাগজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বইয়ের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে ঐতিহ্য প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী আরিফুর রহমান নাঈম বলেন, জানুয়ারির ৩১ তারিখ পর্যন্ত আমরা কাগজ কিনেছি ৬০ শতাংশ হারে বর্ধিত মূল্যে। ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ থেকে কাগজ কিনতে হচ্ছে ১০০ শতাংশ হারে বর্ধিত মূল্য দিয়ে। অর্থাৎ গত বছর বইমেলার সময় আমরা যে কাগজ ১০০ টাকায় কিনতে পেরেছি, সে কাগজ এবার ২০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। কিন্তু আমরা বইয়ের মূল্য বাড়িয়েছি মাত্র ২৫ শতাংশ। এতে করে বেশি পুঁজি বিনিয়োগ করে কম লাভ হবে, কিন্ত লস হবে না। লস হবে পাঠকের। তারা ১০০০ টাকার বই এবার ১২৫০ টাকায় কিনবে। ক্ষতিটা আমাদেরও হবে। কারণ, আমরা পাঠক হারাচ্ছি।

ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটিডের (ইউপিএল) প্রধান বিক্রয় কর্মকর্তা ইউসুফ আলি বলেন, বইয়ের দাম কিছুটা বাড়াতে হয়েছে কাগজের মূল্য বাড়ার কারণে। তবে কত শতাংশ বাড়িয়েছে, সেটা প্রোডাকশনের সঙ্গে যারা যুক্ত তারা বলতে পারবে। কাগজের দাম বাড়ার কারণে এবার নতুন বই প্রকাশের অনুপাতটাও আপাতত কম মনে হচ্ছে। মেলার ৬ষ্ঠ দিন সোমবার নতুন বই এসেছে মাত্র ৭৩টি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!