• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সেমিফাইনালের প্রথম দিনে উজ্জীবিত বিএনপি


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ১৭, ২০২৩, ০৮:৩৭ পিএম
সেমিফাইনালের প্রথম দিনে উজ্জীবিত বিএনপি

ফাইল ছবি

ঢাকা: ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে অধীনস্থ আদালত এবং সরকারের অবজ্ঞা, গায়েবি মামলায় নির্বিচারে গ্রেফতার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে’ ছয় দিনের কর্মসূচি দিয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি।

বুধবার (১৭ মে) প্রথম দিনের কর্মসূচিতে ছিল ‘পদযাত্রা’। ছাড়াও কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-১৯ মে উত্তরের উদ্যোগে শ্যামলী ক্লাব মাঠে জনসমাবেশ। দক্ষিণের উদ্যোগে ২০ মে মতিঝিলের পীরজঙ্গি মাজারের সামনে সমাবেশ।দক্ষিণের উদ্যোগে ২৩ মে ধানমন্ডি থেকে পদযাত্রা। ওইদিন একই সময়ে উত্তরের উদ্যোগে গাবতলী থেকে শ্যামলী পর্যন্ত হবে পদযাত্রা। দক্ষিণের উদ্যোগে ২৬ মে যাত্রবাড়ীতে জনসমাবেশ এবং উত্তরের উদ্যোগে ২৭ মে উত্তরায় জনসমাবেশ।

আরও পড়ুন<<>>তৃণমূলে শক্তি বাড়াতে যা করছে আওয়ামী লীগ

ঢাকা মহানগর বিএনপির এই কর্মসূচিকে ‘ফাইনালের’ আগে ‘সেমিফাইনাল’ বলে আখ্যা দিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। এতে উত্তর-দক্ষিণের কেন্দ্রসহ থানা-ওয়ার্ডের নেতারা কেউ অংশ না নিলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশনা রয়েছে।

অতীতের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পেছনে ঢাকা মহানগর বিএনপিকে দায়ী করে আসছে তৃণমূল নেতাকর্মীরা। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে এবার রাজধানীতে জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলতে হাইকমান্ডের  নানা পদক্ষেপের অংশ এই কর্মসূচি। চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে সাংগঠনিক শক্তির মহড়া দিতে মাঠে নামলেন মহানগরের নেতাকর্মীরা। ছয় দিনের কর্মসূচির প্রথম দিন আজ মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের উদ্যোগে পৃথক পদযাত্রা সফল হয়েছে বলে মন্তব্য নেতাকর্মীদের।

জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে মহানগরের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সঙ্গেও দফায় দফায় বৈঠক করেছেন বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা। সেখানে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি সফলে নানা দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন<<>>নির্বাচন পর্যন্ত পালটা কর্মসূচি চলবে

গত শনিবার চার পর্বে ৮২ সাংগঠনিক জেলায় জনসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। যা শেষ হবে ২৬ মে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ পৃথকভাবে ছয় দিনের কর্মসূচি পালন করবে। আজ মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে বেলা ৩টায় বাসাবো বালুর মাঠ থেকে মালিবাগ কমিউনিটি সেন্টার পর্যন্ত পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। 

এতে প্রধান অতিথি হিসাবে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। পদযাত্রা কর্মসূচির আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের পতন ঘটিয়ে এ দেশের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করবো। এখন দেশের মানচিত্র লুটপাট করার চেষ্টা চলছে। জীবন থাকতে আমরা তা হতে দেবো না। এ সরকারের পতন ঘটিয়ে এদেশের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করবো।

তিনি আরও বলেন, এ সরকার ব্যাংক লুট, হলমার্ক কেলেঙ্কারি করে দেশের জনগণকে সম্পদহীন করেছে। অথচ বিএনপির সামনের সারির নেতাদের নামে কম করে ৫০টি করে মামলা দিয়েছে সরকার। শোনা যাচ্ছে আবার নাকি গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে! কয়েকদিন আগেই তো গ্যাসের দাম বাড়িয়েছিল। এ সরকার পাগল হয়ে গেছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপির ১০ দফা দাবিতে আজকের এই বিপুল উপস্থিতি প্রমাণ করে সরকারের রাজ সিংহাসন কেঁপে উঠেছে।

আরও পড়ুন<<>>সংবিধানের বাইরে যাবে না আ.লীগ

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় এ সময় অন্য নেতারা বক্তব্য রাখেন।

একই সময়ে ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে শাহজাদপুর সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে থেকে শুরু করে মালিবাগ আবুল হোটেল পর্যন্ত পদযাত্রা বের করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

তিনি বলেন, গত একান্ন বছরে দেশে বিদেশি কূটনীতিকদের প্রটোকল প্রত্যাহারের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।সরকার বিদেশিদের কাছে ধর্না দিয়ে কোনো লাভ পায়নি। তাই সরকার পাগল হয়ে গেছে। আপনারা সজাগ থাকুন। কোনো ষড়যন্ত্র বা ফাঁদে পা দেবেন না। সরকারকে হটিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে এখন উচ্চ পর্যায় থেকে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত দুর্নীতি। দেশের অর্থ পাচার করে সব শূন্য করে দিয়েছে। দেশের মানুষ আজ দুবেলা পেট পুরে খেতে পারে না। মধ্যবিত্ত আজ গরিব হয়ে যাচ্ছে। সরকার নিজেদের ইচ্ছামতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি করেছে।

মোশাররফ বলেন, এ সরকারের আমলে দেশের মানুষ ভোট দিতে যায় না। গত কয়েকদিন আগে একটি উপনির্বাচনে শুধু ১৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। এতে বোঝা যায় কেউ এ সরকারের অধীনে ভোট দিতে চায় না। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে আর কোনো ভোট হতে দেবো না। জনগণ তা হতে দেবে না।  

আরও পড়ুন<<>>তৃণমূলকে ভোটে চাঙ্গা রাখাই আ.লীগে মূল চ্যালেঞ্জ

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় পদযাত্রা কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বকুল, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়ালসহ আরও অনেকে। 

কর্মসূচির বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে কোনো কর্মসূচি সফল করতে নেতাকর্মীরা প্রস্তুত রয়েছে। আমরা সফলও হবই। ইতোমধ্যে ঢাকায় পদযাত্রা, মানববন্ধন ও সমাবেশে সে প্রমাণও দিয়েছে নেতাকর্মীরা। পদযাত্রা ও জনসমাবেশের নতুন কর্মসূচিতেও অংশ নেওয়ার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও উন্মুখ হয়ে আছে।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু বলেন, ‘বিএনপির কর্মসূচির সঙ্গে সাধারণ মানুষেরই সম্পৃক্ততা অনেক বেশি। এর মধ্য দিয়ে জনগণকে এটাই বোঝাতে চাই যে, আগামী দিনে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ ব্যাক্তির অধীনে ছাড়া কোনো নির্বাচনে আমরা যাব না। বিএনপির দাবির সঙ্গে সবাই একমত। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিসহ সরকারের সব কর্মকাণ্ডে মানুষ এখন অতিষ্ঠ। তারা ভোট দিতে পারে না। আশা করি, সব কর্মসূচি এখন দিন দিন বড় হবে।’

বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য রাজধানীকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তাই এবার চূড়ান্ত আন্দোলন হবে ঢাকা ঘিরেই। সে লক্ষ্যে রাজধানীতে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চলমান আন্দোলনে মহানগরীর নেতাদের কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। কেননা আন্দোলনের কাঙ্ক্ষিত ফসল ঘরে তোলার বিষয়টি নির্ভর করছে ঢাকা মহানগরে আন্দোলনের ওপর।

তারা আরও বলেন, অনেকদিন ধরেই তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিনের পোড়খাওয়া বেশ কজন প্রভাবশালী নেতা দায়িত্বে থাকলেও বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনে তেমন কার্যকর ভূমিকা দেখাতে পারেনি ঢাকা মহানগর বিএনপি। ঢাকার নেতাদের ব্যর্থতার কারণেই দেশব্যাপী জোরালো আন্দোলন হলে তার সুফল ঘরে আনা যায়নি। এ নিয়ে তৃণমূল নেতারা অসন্তুষ্ট। ফলে ঢাকা মহানগর বিএনপি নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের হাতে নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে। যে কোনো সময়ের চেয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এখন যথেষ্ট শক্তিশালী। তবে মহানগর বিএনপির সক্ষমতা নিয়ে আরও নিশ্চিত হতে চাইছে হাইকমান্ড। তাই চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে আরেকটি মহড়া দিয়ে পরীক্ষা নিতে চান। এজন্যই পৃথকভাবে ছয় দিনের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে।

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!