• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

নেত্রকোনায় আদিবাসীদের গ্রাম ‘পাতলাবন’


বিজয় চন্দ্র দাস, নেত্রকোনা  জুন ১২, ২০২৩, ০৫:৪১ পিএম
নেত্রকোনায় আদিবাসীদের  গ্রাম ‘পাতলাবন’

নেত্রকোনা: নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের পাহাড়ঘেষা আদিবাসীদের গ্রাম পাতলাবন। নামেই বৈচিত্র্য নামেই ভিন্নতা। ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের কোলঘেষে প্রাকৃতিক নিসর্গে গড়ে উঠা পাতলাবন নামের এই গ্রামটি। দেখে মনে হয় যেন দেশের সেরা ও সবচেয়ে সুন্দর গ্ৰাম এটি।

পাহাড়, নদী, বালুচর মিলে এক প্রকৃতির নৈসর্গিক রূপের মিশ্র রূপের রহস্য পাতলাবন। যাতায়াত দূরাবস্থা আর সম্প্রচার মাধ্যমে দৃষ্টিগোচর হয়নি বলে এখনো অনাবিস্কৃত এ পাতলাবনের এই জায়গাটি।

প্রতিটি বিকেল এখানে সবুজ মাঠ আর বালুচরে ভ্রমণ পিপাসুরা ভিড় করে প্রতিদিন।

মেঘালয় পাহাড় থেকে বয়ে আসা নদী মহাদেও এর কূলবর্তী যে অবারিত সবুজ মাঠ, বালুচর, সবুজ ধানক্ষেত মিলে পাতলাবন এই গ্রামটি। সীমান্তে বাংলাদেশ অংশের কিছু কিছু টিলা এতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। এখানে আসলে চোখ জুড়িয়ে যায়। জুড়়িয়ে যায় মন। ইচ্ছে করে না ছেড়ে চলে যেতে।

এখানে চোচেই আদিবাসী গারোদের বাস। সন্ধ্যা হলেই আদিবাসীদের সংস্কৃতি, রীতি নীতি, ডোলের মাদল আপনাকে ভিন্ন একটি জাতিসত্তার সাথে পরিচয় ঘটাবে। টিলার উপরে বিলুপ্ত প্রায় মাচাঙ ঘরে তাদের বাস। পাহাড় থেকে নদীতে বয়ে আসা বড় বড় পাথর অার মাচাঙ ঘর এই তাদের ঐতিহ্য।

আদিবাসী গারোদের অকৃত্রিম সরলতা, পাহাড়ের নিরবতা, নদীর বহতা, বালুচরের জোছনা আর দুই পাশের গ্রামীণ জনপদ আপনাকে নিটোল চিত্রের সাথে আলাপ করিয়ে দিবে।

প্রতিটি ঋতুর সাথে পাতলাবনের রুপ বদলায়। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল মহাদেও দুকূল ছাপিয়ে দেয় জলে। আর বৈশাখ মাসে সেখানে হাটু জলে নদী ছড়ায় পরিণত হয়। পাহাড়ি ঝর্নাধারা থেকে বয়ে আসা সেই স্বচ্ছ জলে অবগাহনে আনন্দ মিলে। যেখানের স্বচ্ছ জলে ছোট ছোট মাছেরা খেলা করে। ছুটে চলা সে মাছ ধরার মজাই আলাদা। পড়ন্ত বিকেলে ছোট ডিঙায় করে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগও রয়েছে।

আজ ও আধুনিক নাগরিক সুবিধা তথা বিজলির আলো পর্যন্ত পৌঁছায়নি এলাকাটিতে। অজপাড়া গাঁ বলতে যা বুঝায়। কিন্তু অভাব নেই প্রাকৃতিক মুক্ত আলো বাতাস আর নৈসর্গিকতর। তবে আধুনিক শিক্ষার আলোয় আলোকিত পাতলাবন।

প্রায় ২০-৫০ জন মেধাবী সন্তান পাতলাবনের কোল থেকে উঠে এসে ঢাকা ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা করে দেশের উচ্চ পদে থেকে দেশের সেবায় নিয়োজিত। সরকারি ও বেসরকারি চাকুরি করে। এছাড়াও প্রতি বছর এখান থেকে ২-৫ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়। বলা হয়ে থাকে প্রাকৃতিক অপার এ সৌন্দর্যই এখানকার সবচেয়ে বড় বিদ্যাপীঠ আলোর আধার।

আশেপাশে আরো কিছু দেখার মত জায়গা রয়েছে। যেগুলোর মধ্যে ভুবনের টিলা, জাইগিরপাড়া, চাঁদ সওদাগরের চন্দ্রডিঙা, পাহাড়ের পাশদিয়ে সীমান্ত সড়কে মোটর বাইক রাইড সব মিলিয়ে ভালো লাগার মন মাতানো পাতলাবন আপনার ভালো না লেগে পারেই না। তাই পাতলাবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আর দেরি কেন, চলে আসুন যেকোন সময়।

যেভাবে আসবেন:

নেত্রকোনা জেলা শহর থেকে ৪০ কিমি উত্তরে ভারত সীমান্তবর্তী কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের পাহাড়ঘেষা এই গ্রামটিই পাতলাবন।

ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে করে নেত্রকোনা এরপর সিএনজি বা বাসে করে কলমাকান্দা। এমনকি সরাসরি বরুয়াকোনা বাজার কিংবা সরাসরি পাতলাবন যাওয়া যায়।

যদিও স্থানীয়ভাবে পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি বলে থাকতে হবে উপজেলা শহর কলমাকান্দায়। গড়ে উঠলে হয়ত মহাদেও নদীর চরে তাবু টানিয়ে জোছনা রাতে জোছনাবিলাস আর বার-বি-কিউ এর সঙ্গে আদিবাসী নৃত্য ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে নিঃসন্দেহে। তবে আমার গৃহে সবসময় আপনাকে সাদর নিমন্ত্রণ।

স্থানীয় সতর্কতা:

সীমান্তবর্তী হওয়ায় বিজিবি এবং বিএসএফ এর কড়া পাহাড়া চলে সার্বক্ষণিক। তাই ভুলেও সীমানা অতিক্রম করবেন না। প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করুন আইন মেনে। আদিবাসী ছেলেমেয়েরা সাধারণত অপরিচিতদের প্রথমে সহজে আপন ভাবেনা তবে দূরের পর্যটক শুনলে আতিথেয়তায় মুগ্ধ হবেন। তাই একটু সামলে চলুন। আনন্দভ্রমণ আনন্দময় হোক।

শেরপুর থেকে আসা মামুনুর রশিদ বলেছেন, আমি অনেক স্থান দেখেছি। পাতলা বন একটু আলাদা। এমন নীরব ও সুন্দর গ্ৰাম আর দেখিনি জীবনে। মন শান্ত করতে এর তুলনা হয় না। অনেক ভিডিও ও ছবি তুলেছি।

জেলা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক অসিত কুমার ঘোষ বলেন, পাতলা বন নান্দনিক সৌন্দর্যে ভরপুর নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত ঈশ্বরের অপূর্ব সৃষ্টি।নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। তবে এর রাস্তাঘাট ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলে পর্যটকরা নিয়মিত যাতায়াত করবে।

কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মোঃ আবুল হোসেন বলেন, আমি উপজেলার দর্শনীয় স্থান পাতলা বনের আদিবাসীদের পানির অভাব দূরীকরণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। রাস্তা ঘাটের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ  বলেন, নেত্রকোনা জেলায় অনেক সুন্দর স্থান রয়েছে। তার মধ্যে সীমান্তে পাতলা বন একটি। এর উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

সোনালীনিউজ/এম
 

Wordbridge School
Link copied!