• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বড়দিনের তাৎপর্য : যিশুখ্রিস্টের মাহাত্ম্য


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ২৩, ২০১৮, ০২:১০ পিএম
বড়দিনের তাৎপর্য : যিশুখ্রিস্টের মাহাত্ম্য

ঢাকা : মঙ্গলবার (২৫ ডিসেম্বর) খ্রিস্টীয় ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব- শুভ বড়দিন বা হ্যাপি ক্রিস্টমাস ডে। দেড় হাজার বছরেরও অধিককাল ধরে এ দিনটি খ্রিস্টীয় ধর্মাবলম্বীদের মাঝে পালিত হয়ে আসছে স্বমহিমায়। দেশে দেশে অনুষ্ঠানটি পালিত হয় নানা আড়ম্বরতায়। বেশিরভাগ দেশেই বড়দিন উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকে।

ক্রিস্টমাস ট্রি সাজানো থেকে সান্তা ক্লজের আবির্ভাব, উপহার কেনাকাটা, ঘোরাঘুরি, মজার মজার খাওয়া আর প্রিয়জনের সান্নিধ্যে দিনটি কেটে যায় পরম আনন্দে। দিনটি খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বড়দিনের নানা বিষয় নিয়ে আয়োজনটি সাজিয়েছেন সোনালীনিউজ-এর পাঠকদের জন্য-

ঐতিহাসিক সাক্ষ্য অনুযায়ী রোমান সাম্রাজ্যের সময় ৩৬৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বড়দিনের উৎসব পালন করা হয়। পোপ জুলিয়াস প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে বড়দিনের উৎসব করার কথা ঘোষণা করেন। সেই থেকে দেশে দেশে বড়দিনের উৎসব হয়ে আসছে নানাভাবে। তবে আশ্চর্য ব্যাপার, এই ক্রুসেডের আগে বড়দিনের উৎসব তেমন গুরুত্বপূর্ণ ও জাঁকজমকপূর্ণ ছিল না এবং তা ইউরোপের বাইরে ছড়ানোর প্রশ্নই আসে না। খ্রিস্টানদের এই একটিই বড় ধর্মীয় উৎসব।

মূলত মধ্যযুগের পর একেবারে আধুনিক সময়ে এসে বড়দিনের উৎসব সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে অনেকটা ঔপনিবেশিকতার হাত ধরেই। আজ তা প্রায় এক সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। অনেক দেশে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা ছাড়াও অন্যান্য ধর্মের মানুষও বড়দিনের উৎসব পালন করে। অবশ্য তাদের উৎসবের আমেজ খাওয়া-দাওয়া আর ঘোরাফেরার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

২৫ ডিসেম্বর তারিখে যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে এই উৎসব পালিত হয়। এ দিনটিই যিশুর প্রকৃত জন্মদিন কিনা তা নিয়ে নানা ভিন্ন মত প্রচলিত রয়েছে। খ্রিস্টানদের বিশ্বাস অনুসারে এই তারিখের ঠিক নয় মাস আগে মা মেরির গর্ভে এক আলোকজ্যোতির মতো প্রবেশ করেন যিশু। এই হিসাব অনুসারেই ২৫ ডিসেম্বর তারিখটিকে যিশুর জন্মতারিখ ধরা হয়। ভিন্ন তথ্যমতে এটি একটি ঐতিহাসিক রোমান উৎসব।

দিন-তারিখ ইতিহাস নিয়ে যতোই বিতর্ক থাক তাকে যিশু খ্রিস্টের মাহাত্ম্য কোনোভাবেই ম্লান হয় না। বরং নিজের জীবনের বিনিময়ে তিনি যে প্রেমের বাণী, মানবতার বাণী উচ্চারণ করেছিলেন তা-ই যুগে যুগের মানুষের মঙ্গলপথের দিশারি হয়ে কাজ করেছে। মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তেও যিশু বলেছিলেন, পিতা, ওরা জানে না ওরা কী করছে, ওরা অবুঝ ও অজ্ঞান, তুমি ওদের ক্ষমা করে দিয়ো। ক্ষমাই ছিল যিশুর মূল প্রেমের বাণী। তিনি বলেছিলেন, তোমার প্রতিবেশীর জন্য তাই কামনা করো, যা তুমি নিজের জন্য চাও। আর সবাইকে ক্ষমা করো। মনে রেখো, যতক্ষণ তুমি সবাইকে ক্ষমা করবে না ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি স্বর্গে প্রবেশ করবে না। ঈশ্বর তাকেই ক্ষমা করেন যে সবাইকে ক্ষমা করে।

বড়দিনের মহিমা এখানেই যে এটি ঘণ্টায় বা সময়ে বড় নয়, বরং এ দিনটি এ দিনটি মানবতার পরিত্রাণের জন্য যিশুর জন্ম হয়েছিল বলে। প্রত্যেকেরই আলাদা জন্মদিন আছে, জন্মদিন মানেই যেন আগের ভুলগুলো শুধরে জীবনকে নতুন করে সাজানো। সেদিক থেকে যিশুর জন্মদিন যে প্রত্যেক খ্রিস্টীয় ধর্মাবলম্বীদেরই জন্মদিন। এ দিন তারা মহান প্রভুর কাছে নিজের ও সমস্ত মানুষের মুক্তি কামনা করে।

ক্রিস্টমাস ট্রি : বড়দিন মানেই যেন ক্রিস্টমাস ট্রি। একটি সবুজ গাছে অনেক আলোকসজ্জা আর বাহারি সব ফুল-ফল দিয়ে সাজানো হয়। ক্রিস্টমাস ট্রি হিসেবে যে গাছটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় সেটি হলো ফার গাছ। এটি মূলত দেবদারু জাতীয় গাছ। এই গাছেই বিভিন্ন রঙের আলোকসজ্জা আর বিভিন্ন দ্রব্যে সাজিয়ে রাখা হয়। ক্রিস্টমাস ট্রি সত্যিকারের হতে পারে আবার সেটি কৃত্রিমও হতে পারে।

প্রকৃত গাছ ব্যবহার না করে অনেকে এখন প্লাস্টিকের গাছও ব্যবহার করেন। প্রথমদিকে এটি কেবল রাজদরবার ও চার্চের বিষয় ছিল। পরে সবার মধ্যেই এই ট্রি সাজানোর প্রথাটি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এখন সাধারণ খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা পরম যত্নভরে ক্রিস্টমাস ট্রি সাজান। কেউ বা ক্রিস্টমাস ট্রি সাজিয়ে রেখে দেন বাড়ির বাইরে, কেউ বা ঘরের ভিতরে, বারান্দায় বা বসার ঘরে।

যেখানেই সাজানো হোক, সারা ঘরে বা সারা বাড়ি আলো করে গাছটি ফুটে থাকে। যেন আলোরই এক গাছ! ক্রিস্টমাস ট্রিতে আলোর ব্যবহার ছাড়াও বিভিন্ন অর্নামেন্ট দিয়ে সাজানো হয়। এই গাছের ওপরে একটি তারা বা স্বর্গদূত বসানো হয়। এই স্বর্গদূতটি বেথেলহেমে জন্ম নেওয়া যিশুখ্রিস্টের প্রতীক। জানা যায়, ষোলো শতকে জার্মানিতে ক্রিস্টমাসের এই ট্রি সাজানোর প্রচলন হয়েছিল। তবে ক্রিস্টমাস ট্রিকে সাজানোর এ বিষয়টি কোথায় থেকে কেমন করে এলো সেটি কেউই স্পষ্ট বলতে পারেন না।

ঐতিহ্য অনুসারে, ২৪ ডিসেম্বর ক্রিস্টমাস সন্ধ্যার আগে ট্রি সাজানো যায় না। আর এটি সরিয়ে ফেলা হয় ১২তম রাতে অর্থাৎ ৬ জানুয়ারি। আর অনেকেই মনে করেন এই নিয়ম না মানা হলে অমঙ্গল হতে পারে। তবে প্রথাগতভাবে না হলেও এখন ক্রিস্টমাস ট্রি আরো আগে সাজানো হয়। দেবদারু জাতীয় গাছ ছাড়াও ক্রিস্টমাস ট্রি সাজাতে নানারকম সবুজ ঝোপ-জাতীয় ছোট গাছ সাজানো হয়।

খনো কত শিশু সান্তা ক্লজকে বিশ্বাস করে : বড়দিনের আগের রাতে সান্তা ক্লজ আসবেন হরিণটানা গাড়িতে করে, বাচ্চাদের নানারকম উপহার দেবেন, দরজার সামনে চকোলেট রেখে যাবেন— এরকম বিশ্বাস একসময় প্রায় রূপকথার গল্পের মতোই ছিল খ্রিস্টান শিশুদের মনে। কিন্তু এখনো আসলে কত ভাগ শিশু এ গল্পে বিশ্বাস করে? আধুনিক রঙিন পোশাক পরা সান্ত ক্লজকে তো তারা ভালো করেই চেনে, টিভিতে দেখে, বাচ্চাদের সাথে নেচে-গেয়ে উৎসব করে।

১৯৭৮ সালে চালানো যুক্তরাষ্ট্রের এক জরিপে দেখা গেছে ৪ বছর বয়সের ৮৫ ভাগ শিশু, ৬ বছর বয়সের ৬৫ ভাগ শিশু এবং ৮ বছর বয়সের ২৫ ভাগ শিশু বিশ্বাস করে যে সান্তা ক্লজ সত্যিই আছেন। তিনি এ পৃথিবীর কোনো মানুষ নন। তিনি যেন সত্যিই রূপকথার কোনো দেশ থেকে এসে আবির্ভূত হন।

আশ্চর্য ব্যাপার, এত বছর পরও, ২০১১ সালে আরেক জরিপ চালিয়ে দেওয়া গেছে সান্তার প্রতি রহস্যময় বিশ্বাসটা এখনো অনেক শিশুর মনে একইরকম রয়ে গেছে। ২০১১ সালের এক জরিপে দেখা যায় ৫ বছর বয়সের নিচে ৮৩ শতাংশ শিশুরা এখনো বিশ্বাস করে সান্তা ক্লজরা সত্যিই আছেন। কোনো মানুষ সান্তা সাজে না। তারা সত্যিই অন্য কোনো দেশ থেকে আসেন। হয়তো স্বর্গ থেকে।

সাম্প্রতিক জরিপেও একই ফলাফল দেখা গেছে। ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী জর্জ ম্যাসন বলেছেন, আমরা সত্যিই বিস্মিত হয়েছি সান্তার প্রতি বাচ্চাদের এখনো একইরকম বিশ্বাস দেখে। চার থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের মধ্যে ৮৫ ভাগই এখনো বিশ্বাস করে সান্তার সত্যিই অস্ত্তিত্ব আছে। তবে আট বছরের পর থেকে তারা স্মার্ট হয়ে যায়, তাদের ভুল ভাঙতে শুরু করে। তারা বুঝতে পারে কোনো মানুষকেই আসলে সান্তা সাজানো হয়। তবে বিশ্বাসটা যা-ই হোক, তাদের মনে আনন্দটা একই থাকে।

একটু বড় বাচ্চারা বলেছে, তারা যখন বুঝতে পেরেছে সান্তা আসলে একজন মানুষ, তিনি শুধুমাত্র ওরকম সাজেন, তখন আরো মজা পেয়েছে। সান্তা তাদের সবসময়ই বন্ধু। বড়দিনের আগের রাতে সব শিশুই সান্তার উপহারের উপেক্ষায় থাকে, আর বড়রাও তাদের শিশুবেলার স্মৃতি মনে করে রোমন্থন হয়, ছোটদের তারা উৎসাহ দেয়। আর বড় দিন আসার আগে থেকেই বড়রা ছোট ছোট শিশুদের গল্প শুনাতে থাকে, ওই তো সান্তা আসছে হরিণটানা গাড়িতে করে, তোমার জন্য নিয়ে আসছে অনেক অনেক চকোলেট।

সান্তা ক্লজ হওয়ার গল্প : বড়দিনের পরিচিত মুখ সান্তা ক্লজ। তিনি আসেন আনন্দের বার্তা নিয়ে। দরজার সামনে চকোলেট আর উপহার রেখে যান বাচ্চাদের জন্য রাতে। বাচ্চারা তাকে নিয়ে নাচে, গায়। তার হাঁটু জড়িয়ে ধরে বসে থাকে। আর সান্তা শোনায় যিশুখ্রিস্টের গল্প।

কিন্তু, কে এই সান্তা ক্লজ। রঙিন মুখোশের আড়ালের আসল মানুষটি কে? তিনি কীভাবে সান্তা ক্লাজ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন? শোনা যাক সেই গল্প একজন সান্তা ক্লজের মুখ থেকে। ৬৬ বছর বয়সের স্নেইডার আগে ছিলেন একজন ক্রেন অপারেটর। অবসর নেয়ার পর তিনি ভাবছিলেন কী করা যায়। একদিন জেসিপেনি স্টোরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার সময় তিনি কী মনে করে সান্তার দাড়ি আর জুতো কিনে ফেলেন।

তারপর মিসিগানের মিডল্যান্ডের চার্লস ডাব্লিউ হাউয়ার্ড সান্তা ক্লজ স্কুলে গিয়ে ভর্তি হন। সেখানে তিনদিনের একটি কোর্স করেন। সেখানে তার মতো এরকম আরো ২০০ জন সান্তা কোর্স করে। স্লেইডার বলেন, এটা হচ্ছে সান্তা হওয়ার হার্ভার্ড। অর্থিক অলাভজনক এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হয় ১৯৩৭ সালে। তারপর ১৯৯৯ সাল থেকেই স্নেইডার পেশাদার সান্তা ক্লজ হিসেবে কাজ করছেন।

ট্রেনিংয়ে তাদের শেখানো হয় কীভাবে গোঁফটাকে সামলাতে রাখতে হবে, দাড়িগুলো প্রদর্শন করতে হবে, আর কীভাবেই বা বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। স্লেইডার হেসে বলেন, মেক-আপ নিতেই আমার অনেক সময় লেগে যায়। আর সাদা দাড়িটাকে সামলে রাখাই সবচেয়ে কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু,এটা আমি খুব উপভোগ করি। এরচেয়ে আনন্দের কী আছে বড়দিনে আপনি বাচ্চাদের কাছে আনন্দের বার্তা নিয়ে যাচ্ছেন।

সান্তা ক্লজের কিংবদন্তি শুরু হয় সেন্ট নিকোলাস নামক এক সন্ন্যাসীকে ঘিরে। ২৮০ সালের দিকে এশিয়া মাইন বা বর্তমান তুরস্কের পাতারা নামক অঞ্চলে তার জন্ম হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। সততা এবং দয়ার জন্য সবাই তাকে পছন্দ করত। সম্পদশালী এই মানুষটি সবসময় গরিব-দুঃখী এবং অসহায় মানুষজনকে সাহায্য করতেন। সেন্ট নিকোলাসের এসব দান-দক্ষিণা এবং মহানুভবতার খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং তিনি মানুষের রক্ষক হিসেবে পরিচিতি পান।

ক্রিসমাসে সবাইকে বিশেষ করে বাচ্চাদের উপহার দেওয়ার রীতি শুরু হয় উনিশ শতকের শুরুর দিকে। ১৮২০ সালের দিক থেকে ক্রিস্টমাস উপলক্ষে দোকানগুলো বিজ্ঞাপন দিত, পত্রিকায় বিশেষ সংখ্যা বের হতো  যেগুলোতে প্রায়ই সান্তা ক্লজের ছবিও ছাপা হতো। ১৮৪১ সালে ফিলাডেলফিয়ার একটি দোকানে একটি মানুষ আকৃতির সান্তা ক্লজ তৈরি করা হয় যা দেখতে হাজার হাজার বাচ্চা ভিড় জমিয়েছিল। এরপর  থেকে বাচ্চা এবং তাদের বাবা-মাদের আকৃষ্ট করতে দোকানগুলোতে জীবন্ত সান্তা ক্লজ সাজানো হয়। এভাবে বিশ্বজুড়ে ক্রিস্টমাসের আগের রাতে বাচ্চাদের ঝোলানো মোজা উপহারে পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ার রীতিটি জনপ্রিয় হয়ে উঠে।

দেশে দেশে বড়দিন : খ্রিস্টানরা বড়দিন উদযাপন করেন নানাভাবে। বর্তমানে গির্জার উপাসনায় যোগ দেওয়া সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও অন্যতম জনপ্রিয় প্রথা। বড়দিনের আগে ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চ নেটিভিটি উপবাস পালন করে থাকেন। বড়দিনের সর্বশেষ প্রস্তুতিটি নেওয়া হয় ক্রিসমাসের পূর্বসন্ধ্যায়। বড়দিন উৎসব পর্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো গৃহসজ্জা ও উপহার আদান-প্রদান।

এই উৎসবে ছোট ছেলেমেয়েদের দিয়ে খ্রিস্টের জন্মসংক্রান্ত নাটক অভিনয় এবং ক্যারোল গাওয়ার প্রথা আছে। আবার কেউ কেউ তাদের ঘরের সামনে খ্রিস্টীয় ধর্মের নানা মিথ-পুরাণ-গল্প  চরিত্রের পুতুল সাজিয়ে প্রদর্শনী করেন। একে ক্রিব বলা হয়। চিত্রশিল্পে যিশুর জন্মদৃশ্য ফুটিয়ে তোলার ঐতিহ্যটি সুদীর্ঘ।

এই দৃশ্যে মেরি, যোসেফ, শিশু যিশু, স্বর্গদূত, মেষপালক থাকে। যেসব দেশে খ্রিস্টান সংস্কার প্রবল, সেখানে দেশজ আঞ্চলিক ও লোকসংস্কৃতির সঙ্গে মিলনের ফলে বড়দিন উদযাপনে নানা বৈচিত্র্য চোখে পড়ে। অনেক ক্যাথলিক দেশে ক্রিসমাসের আগের দিন ধর্মীয় শোভাযাত্রা বা কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। অন্যান্য দেশে সান্তা ক্লজ ও মৌসুমি চরিত্রদের নিয়ে শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়।

এই মৌসুমের অন্যতম বহুল প্রচলিত বৈশিষ্ট্য হলো পারিবারিক সম্মেলন ও উপহার আদান-প্রদান। আবার কোনো কোনো দেশে এই প্রথাটির জন্য বেছে নেওয়া হয় ৬ ডিসেম্বরের সেন্ট নিকোলাস ডে বা ৬ জানুয়ারির এপিফেনির দিনগুলো।

ইংল্যান্ডের পারিবারিক ভোজসভায় থাকে ক্রিসমাস পুডিং। ভোজসভার খাদ্যতালিকা অবশ্য একেক দেশে একেক রকম হয়। সিসিলি প্রভৃতি কয়েকটি অঞ্চলে ক্রিসমাসের পূর্বসন্ধ্যায় যে ভোজসভা আয়োজিত হয় তাতে থাকে বারো রকমের মাছ। ইংল্যান্ড ও ইংরেজি সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত দেশে বড়দিনের ভোজসভায় দেখা যায় টারকি, আলু, শাকসবজি, সসেজ ও গ্রেভি ছাড়াও থাকে ক্রিসমাস পুডিং, মিন্স পাই ও ফ্রুট কেক। পোল্যান্ড, পূর্ব ইউরোপের অন্যান্য দেশ ও স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চলের ভোজে মাছের উপস্থিতি লক্ষণীয়। তবে এসব অঞ্চলে ভেড়ার মাংসের ব্যবহারও হয়।

জার্মানি, ফ্রান্স ও অস্ট্রিয়ায় হাঁস ও শূকরের মাংস বেশ জনপ্রিয়। এ ছাড়া প্রায় সারা বিশ্বেই গোমাংস, হ্যাম ও মুরগির যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। ফিলিপাইনে ভোজসভার প্রধান খাদ্য হলো হ্যাম। বিশেষ ধরনের টার্ট ও কেকের সঙ্গে বিশেষ ডেজার্টও তৈরি হয়। ক্রিসমাস উপলক্ষে মিষ্টি আর চকোলেট সারা বিশ্বেই জনপ্রিয়। ক্রিসমাসের বিশেষ মিষ্টিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জার্মান স্টোলেন, মারজিপান কেক বা ক্যান্ডি এবং জ্যামাইকান রাম ফ্রুট কেক। উত্তরের দেশগুলোতে শীতকালে যে অল্প কটি ফল পাওয়া যায়, তার মধ্যে কমলালেবু ক্রিসমাসের বিশেষ খাদ্য হিসেবে দীর্ঘকাল ধরে পরিচিত। বড়দিন উপলক্ষে বিশেষ ধরনের সাজসজ্জার ইতিহাসটি অতি প্রাচীন।

ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় বাড়ির বাইরে আলোকসজ্জা এবং আলোকিত পুতুল সাজানোর প্রথা রয়েছে। রাস্তার বাতিগুলোতে ক্রিসমাস ব্যানার লাগানো হয় এবং টাউন স্কয়ারে স্থাপন হয় ক্রিসমাস বৃক্ষ। পাশ্চাত্য বিশ্বে ক্রিসমাস মোটিফসহ উজ্জ্বল-রঙের রোল করা কাগজ উৎপাদিত হয় উপহারের মোড়ক তৈরির জন্য।

অন্যান্য প্রথাগত সাজসজ্জার অঙ্গ হলো ঘণ্টা, মোমবাতি, ক্যান্ডি ক্যান, মোজা, রিদ ও স্বর্গদূতরা। অনেক দেশে নেটিভিটি দৃশ্যের উপস্থাপনা বেশ জনপ্রিয়। এসব দেশে জনসাধারণকে সম্পূর্ণ এবং বাস্তবসম্মত নেটিভিটি দৃশ্য সৃজনে উৎসাহিত করা হয়। সূত্র : উইকিপিডিয়া, সিএনএন

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!