• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচন

ভাবনা ও দুর্ভাবনায় আ.লীগ


বিশেষ প্রতিনিধি মার্চ ২৮, ২০১৯, ০১:০৯ পিএম
ভাবনা ও দুর্ভাবনায় আ.লীগ

ঢাকা : ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের (মসিক) আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের মধ্যে নতুন ভাবনার পাশাপাশি কিছু দুর্ভাবনারও জন্ম হয়েছে। এ নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী আগেভাগেই এক ধরনের চূড়ান্ত হলেও ক্ষমতাসীন দলের দুর্ভাবনার কারণ ভিন্ন। মসিক নির্বাচন ঘিরে দলটির ভাবনায় ভোটারের উপস্থিতি বাড়ানো।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উপনির্বাচন ও চলমান উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের মতো মসিক নির্বাচনেও ভোটারের উপস্থিতি যেন কম না হয়, সেদিকে নজর রাখছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। দলটির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র এসব তথ্য জানায়।

দলীয় সূত্র মতে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগ নতুন চারটি নির্বাচন নিয়ে নানা ভাবনার মুখোমুখি হয়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনগুলো তুলনামূলক বিতর্কমুক্ত, দলীয় কোন্দল নিয়ন্ত্রণ রাখা, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করা ও ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় ক্ষমতাসীন দলটি। এসব লক্ষ্যে দলের নীতিনির্ধারকরা নানা কৌশল নির্ধারণ করে এগিয়ে যান। একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর নতুন সরকারের আমলে ডিএনসিসির উপনির্বাচন, বিভিন্ন উপজেলা পরিষদের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও মসিকের নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করে।

তুলনামূলক শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলেও শুধু ডাকসু ছাড়া বাকি নির্বাচনগুলো তেমন উত্তাপ ছড়াতে পারেনি। অনেকটা নিরুত্তাপ পরিবেশে পানসে রকমে ভোট অনুষ্ঠিত হয় বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। চারটি নির্বাচনের মধ্যে শেষেরটি হচ্ছে নবগঠিত মসিকের প্রথমবারের মতো নির্বাচন, যা আগামী ৫ মে অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় এ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি কম হচ্ছে। এমন প্রভাব মসিকের নির্বাচনে পড়ে কি না, এ দুর্ভাবনার বিষয়টি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের কেউ কেউ উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তবে এ সরকারের আমলে অনুষ্ঠেয় মসিকের প্রথম নির্বাচনকে আওয়ামী লীগ বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘চারটি নির্বাচনের কারণে গত ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ভোটের চ্যালেঞ্জে আছে। এক নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি কম হওয়ায় অন্য নির্বাচনেও একই চিত্র দেখা যেতে পারে, এটা বলা যায় না। বাসিন্দাদের দাবি অনুযায়ী ময়মনসিংহ বিভাগ হওয়ার পাশাপাশি সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয় আওয়ামী লীগের সরকারের আমলেই। নানা কারণে মসিকের বাসিন্দাদের কাছে এ নির্বাচন নিয়ে আলাদা উত্তেজনা ও উত্তাপ আছে।’

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করে, ১৩ এপ্রিলের মধ্যে মসিকের নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা আছে। স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী, কোনো এলাকাকে সিটি করপোরেশন ঘোষণার ১৮০ দিনের মধ্যে ওয়ার্ডগুলোর সীমানা নির্ধারণ করে সেখানে নির্বাচন আয়োজন করতে হয়। বিদ্যমান আইনি সময়সীমার মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে ইসি ও প্রশাসনকে সহায়তা করে আসছে আওয়ামী লীগ ও এর রাজনৈতিক মিত্ররা। দেশ ও বিদেশে নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে যেন বিতর্কের সৃষ্টি না হয়, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দল হিসেবে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করে, এমন পরিস্থিতিতেও প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় ভোটারের উপস্থিতি কমছে।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের সরকার ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথা একাদশ সংসদ নির্বাচনের পরই জানিয়ে দেয় বিএনপির নেতৃত্বের ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্ট। বাম দলের জোটসহ সরকারবিরোধী ইসলামপন্থি দলগুলোও একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর আর কোনো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনভীতিতে ভুগছে। দলটি নির্বাচন থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। নির্বাচনভীতির জন্য বিএনপি অদূর ভবিষ্যতে জনবিচ্ছিন্ন দলে পরিণত হবে এবং ইতোমধ্যে দলটি অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে।’

আগে থেকেই প্রার্থী চূড়ান্ত : মসিক নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী প্রায় আগেই চূড়ান্ত বলে জানান দলটির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েক নেতা। দলের প্রার্থী হিসেবে ময়মনসিংহ পৌরসভার বর্তমান মেয়র ইকরামুল হক টিটুকেই পছন্দ দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। দলের সভাপতিমণ্ডলীর এক সভায় প্রধানমন্ত্রী এমন ইঙ্গিত দেন বলেও জানান তারা। তবে শেষ মুহূর্তে প্রার্থীতে কোনো চমক থাকতেও পারে।

এলাকায় জনপ্রিয় টিটু ছাড়াও মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম। সাধারণ সম্পাদক মোহিত-উর-রহমান শান্তও মনোনয়নপ্রত্যাশী। শান্ত সাবেক ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের ছেলে।

আওয়ামী লীগের আরেকটি সূত্র জানায়, মসিক নির্বাচনে মহানগর, থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্যদের নিয়ে বর্ধিত সভা হবে। সভায় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কমপক্ষে তিনজনের একটি প্যানেল সুপারিশ করবে। প্যানেলটি মহানগর, থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের যৌথ স্বাক্ষরে প্রার্থীদের যোগ্যতা, নেতৃত্বের গুণাবলি ও জনপ্রিয়তা ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করে কমপক্ষে তিনজনের সুপারিশ আওয়ামী লীগ সভাপতির ঢাকার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে পাঠাবে। আগামী ৩ এপ্রিল বিকাল ৫টার মধ্যে নাম পাঠাতে হবে। তৃণমূলের প্রস্তাবিত নাম থেকে কাউন্সিলর পদে দলীয়  প্রার্থী বেছে নেওয়া হবে।

মনোনয়নপত্র ১ এপ্রিল থেকে : মসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু হবে আগামী ১ এপ্রিল থেকে। ওই দিন বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়পত্র  সংগ্রহ করা যাবে।

বুধবার দলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। দলটির দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপের স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২ ও ৩ এপ্রিলও একই সময়ের মধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা যাবে। তবে ৩ এপ্রিল বিকাল ৫টার মধ্যে মনোনয়নের আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!